দুই হাজার টাকার টিউব কেনা হয়েছে ১ লাখ টাকায়। সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঘটেছে এ কেনাকাটার ঘটনা। ভয়াবহ এই দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করতে বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট চঞ্চল বিশ্বাস জনস্বার্থে এ নোটিশ দেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী ও সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের নোটিশের ‘প্রাপক’ করা হয়েছে।
গত ১১ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘২ হাজার টাকার টিউব ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনের উদ্ধৃত করে নোটিশে বলা হয়, রক্ত পরীক্ষায় ব্যবহৃত ছোট একটি টিউবের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২ হাজার টাকা। এ হিসাবে ৫০টি টিউব কিনতে লাগার কথা ১ লাখ টাকা। কিন্তু সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল তা কিনেছে ৬৭ লাখ ৪০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতিটি টিউবের পেছনে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় দেখিয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অথচ বাজারে এ ধরনের টিউব ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। মেডিক্যাল সরঞ্জাম কেনাকাটায় দুর্নীতির এমন ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তিতে। শুধু তা-ই নয়, বাজারে যে ডিসেক্টিং টেবিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা দরে পাওয়া যায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একই ধরনের দু’টি টেবিল কিনেছে প্রায় ৬৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ একটি টেবিলের দাম পড়েছে ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অথচ বাজারে এ ধরনের টেবিল ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায় অহরহ পাওয়া যায়।
নোটিশে উল্লেখিত প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোলে ২০১৪ সালে জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এম মনসুর আলীর নামে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালে এটির যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনাকাটায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এরপর তদন্তে নেমে দুর্নীতির সত্যতা পেয়ে হাসপাতালের প্রকল্প পরিচালক ডা. কৃষ্ণ কুমার পালসহ দু’জনের বিরুদ্ধে গত বছর ৯ আগস্ট মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়।
মামলায় তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ৩০ কোটি ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ডলার ও ইউরো করে এসব অর্থ হংকং পাঠানোর দায়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে দুদকের এ মামলায় এখনো অভিযোগপত্র দেয়া হয়নি। ওই দুর্নীতির রেশ কাটতে না কাটতেই ফের অস্বাভাবিক দামে সরঞ্জাম কেনার অভিযাগ ওঠে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অডিট আপত্তিতেও। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি পিস আরবিসি কাউন্টার কিনেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮০০ টাকায়। কিন্তু স্বয়ং স্বাস্থ্যের অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, বাজারে আরবিসি কাউন্টারের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দুই হাজার টাকা। অডিট বলছে, দুটি ডিসেক্টিং ও একটি অটোপসি টেবিল কিনতে হাসপাতাল ৯৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করেছে। সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ব্যবহৃত এ ধরনের অটোপসি টেবিলের সর্বোচ্চ দাম ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। বাজারে যাচাই করে দেখা যায়, ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের অটোপসি টেবিল পাওয়া যায়।
নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে এসব কেনাকাটার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করা এবং এ বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবেÑ মর্মে হুঁশিয়ারি দেয়া হয় নোটিশে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন