সন্তান প্রসবের পরে মায়ের বুকে প্রথম যে দুধ আসে তাকে শালদুধ বলে। শালদুধ ঘন, আঁঠালো এবং একটু হলুদ রংয়ের হয়ে থাকে। শিশুকে শাল দুধ খাওয়ানোর বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। যা আল্লাহর এক অপার দান। যা নবজাতক শিশুকে পান করালে শিশু বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে শুরু করে সুস্থ ও সবল থাকবে। নিম্নে শিশুর সুস্থ্যতায় শাল দুধ ও নিয়মিত মায়ের দুধের উপকারিতার কথা তুলে ধরা হলো।
(১) শালদুধ শিশুর জন্য এতটা উপকারি যে যা শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসাবে গন্য করা হয়।
(২) শালদুধ আমিষ সমৃদ্ধ এবং এতে প্রচুর ভিটামিন-এ আছে।
(৩) শালদুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়।
(৪) শালদুধ শিশুর পেট পরিষ্কার করে এবং নিয়মিত পায়খানা হতে সাহায্য করে।
(৫) শিশুর জন্ডিস হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
প্রসবের পরে প্রথম ২-৩ দিন যতটুকু শালদুধ আসে তাই নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। এসময় শিশুকে পানি, মধু বা চিনির পানি দেওয়া শিশুর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব দিলে হজমের সমস্যা ও পাতলা পায়খানা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে শিশুর বুকের দুধ খাবার আগ্রহ কমে যায়। তাই শিশু জন্মের পর শাল দুধই অপরিহার্য। এরপর ধীরে ধীরে শিশুটির মায়ের দুধ পরিপূর্ণভাবে আসতে থাকে। যা মায়েদের একটু কষ্ট করে হলেও শিশুদের জন্য নিয়মিত পান করানোর অভ্যাস করা উচিৎ ।
মায়ের দুধ পানে যেসব উপকারিতা পাবেন ঃ
(১) মায়ের দুধে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান সঠিক মাত্রায় থাকে। ছয়মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধই শিশুর জন্য যথেষ্ট। মায়ের দুধে পুষ্টি উপাদান ছাড়াও আছে শতকরা ৯০ ভাগ পানি। সেইজন্য শিশুকে ৫ মাস বয়স পর্যন্ত আলাদা পানি দেবার প্রয়োজন নেই।
(২) মায়ের বুকের দুধ পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত। বায়ু বা পানি বাহিত জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হবার সুযোগ নেই। উপরন্ত মায়ের দুধে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মায়-যার ফলে শিশুর অসুখ বিসুখ বিশেষ করে ডায়রিয়া, কানপাকা, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালীর রোগ, হাঁপানী, এলার্জি, চুলকানি ইত্যাদি কম হয়।
(৩) মায়ের দুধে শিশুর বুদ্ধি বাড়ে। তাছাড়া স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে।
(৪) অসুখ হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশী থাকার কারণে শিশু তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়।
(৫) মায়ের দুধ শিশু মৃত্যুর হার কমায়।
(৬) মায়ের দুধ সহজে হজম হয় ।
(৭) মায়ের দুধে পূর্ণমাত্রায় ভিটামিন ‘এ’ থাকে বলে শিশুর রাতকানা হবার সম্ভাবনা থাকে না।
(৮) এছাড়া পরবর্তীতে শিশুর অ্যাকজিমা, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি ভয়াবহ রোগ হাবর সম্ভবনা কমে যায়।
এছাড়াও মায়েরও বিশেষ কিছু উপকারিতা রয়েছে :
(১) জম্মের সাথে সাথে শিশুকে বুকের দুধ দিলে মায়ের প্রসবজনিত রক্তপাত বন্ধ হয। পরবর্তীতে রক্তস্বল্পতা হয় না। মায়ের গর্ভফুল পড়তে সাহায্য করে, জরায়ু তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
(২) মায়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
(৩) যে সব মা শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের স্তন, জরায়ু এবং ডিম্বকোষের ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
(৪) ছয় মাস বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ালে স্বাভাবিকভাবে জন্মনিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে এবং ২ বৎসর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ালে ঘন ঘন গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা কমে যায়।
(৫) মায়ের দুধ খাওয়ালে মায়ের আত্নবিশ্বাস বাড়ে।
(৬) মায়ের দুধ খাওয়ালে মা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক নিবিড় হয়।
(৭) মায়ের দুধ নিরাপদ, ঝামেলামুক্ত এবং মায়ের বাড়তি খাটুনি ও সময় বাঁচায় এবং অর্থের সাশ্রয় হয়।
(৮) রাতে শিশু মায়ের কাছে শোয়া থাকে বলে মা শিশুকে যখন খুশী তখন শুয়ে শুয়ে খাওয়াতে পারেন।
গ. পরিবারের জন্য উপকার
(১) মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর জন্য বাড়তি দুধ, দুধ খাওয়ার জন্য সরঞ্জাম যেমন বোতল, নিপল ইত্যাদি কেনার খরচ, বাড়তি পরিষ্কারের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং জ্বালানী ইত্যাদির খরচ বাঁচে।
(২) শিশুর রোগ কম হয় বলে চিকিৎসা খরচ যেমন ঔষধ, ডাক্তার এবং হাসপাতালে ভর্তির খরচ বাঁচে ।
সুতরাং, বুকের দুধই শিশুর চিকিৎসার ও রোগ মুক্তির প্রথম চিকিৎসক যা চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি ।
প্রফেসর (ডাঃ) মনজুর হোসেন
শিশুরোগ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ
সাবেক পরিচালক শিশু হাসপাতাল,ঢাকা ।
ডাঃ মনজুর’স চাইলড’স কেয়ার সেন্টার
৮৪/১(৩য়তলা), রোড ৭/এ, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা- ১২০৯ ।
মোবাইল-০১৭১১৪২৯৩৭৩।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন