প্রথম ৩ ওভারে পাঁচ বাউন্ডারি। এরপর যেন বাউন্ডারির কথা ভুলে গেল বাংলাদেশ। পরে আর কক্ষপথে ফিরতে পারেনি স্বাগতিকরা। একের পর এক ব্যাটসম্যান ক্রিজে গেলেন আর এলেন। এক প্রান্ত আগলেন মুশফিকুর রহিম। তিনি খুব বেশি কিছু করতে পারলেন না।
নিজেদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জা কোনোমতে এড়াতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানেই হেরেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫২ রানে জিতে ব্যবধান কমিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
একটি সময়ও ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। শুরু থেকেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া মাহমুদউল্লাহ দল হেরে গেল নিউজিল্যান্ডের স্পিনের কাছে। শেষ ওভারে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২ বল বাকি থাকতে ৭৬ রানে গুটিয়ে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে তাদের কম রান আছে আর কেবল একটি।
হার দেখছে ঘূর্ণিতে কাবু বাংলাদেশ
মিরপুরের উইকেট বিবেচনায় ১২৯ লক্ষ্যটা বিশালই। তবে আগের ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ১৪১ তাড়া করে নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি হেরেছিল ৪ রানে। সেই একই উইকেটে স্বাগতিকরাই এবার যেন পথহারা এক পথিক। রানের চাপে পিষ্ট হয়েই যেন ফিরে যাচ্ছেন একের পর এক ব্যাটসম্যান।
এই যেমন নুরুল হাসান সোহান। পরিস্থিতির দাবি ছিল বড় শট। সেই চেষ্টাতেই ফিরলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশ হারাল সপ্তম উইকেট।
তৃতীয় ওভারের পর থেকে নেই কোনো বাউন্ডারি। ওভার প্রতি প্রয়োজন ১০ রানের বেশি। এখন আর দেখেশুনে খেলার সময় নেই। আক্রমণে ফেরা কোল ম্যাকনকিকে ছক্কায় ওড়াতে চাইলেন সোহান। কিন্তু টাইমিং হলো না তেমন একটা। লংঅন থেকে এগিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে চমৎকার ক্যাচ মুঠোয় নিলেন টম ব্লান্ডেল।
সেই শোক কাটতে না কাটতেই একটি চার মারার পর বেশিক্ষণ টিকলেন না মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। এলবিডব্লিউ হয়ে গেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
অফ স্পিনার কোল ম্যাকনকির স্লাইডার ব্যাটে খেলতে পারেননি তিনি। আম্পায়ার জোরালো আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন সাইফ। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল লাগতো লেগ স্টাম্পে। অষ্টম উইকেটের সঙ্গে রিভিউও হারায় বাংলাদেশ।
১৬ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৮ উইকেটে ৬৬। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী নাসুম আহমেদ।
নাঈমকে হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ
কিছুক্ষণ ধরেই গায়ের জোরে শট খেলার চেষ্টা করছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। সেই চেষ্টাই কাল হলো এই ওপেনারের জন্য। বাঁহাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রর বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হলেন তিনি।
অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে আরও বেরিয়ে যাওয়া বল লেগে টেনে খেলতে চেয়েছিলেন নাঈম। ঠিক মতো পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে এলোমেলো করে দেয় স্টাম্প। ১৯ বলে দুই চারে থামে তার ১৩ রানের লড়াই।
৭ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৪ উইকেটে ৩২। ক্রিজে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ।
মুহূর্তেই নেই তিন উইকেট!
দুই ওপেনার লিটন দাস আর মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাটে শুরুটা হয়েছিল ভালোই। প্রথম ওভারের শেষ দুই বলে জ্যাকব ডাফিকে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন নাঈম। পরের ওভারের প্রথম বলে এজাজ প্যাটেলকে বাউন্ডারি মেরে রানের খাতা খোলেন লিটন।
তবে আত্মবিশ্বাসী শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারলেন না লিটন। তৃতীয় ওভারে কোল ম্যাকনকিকে মারেন টানা দুই চার। পঞ্চম বলে আগেভাগেই সুইপ খেলে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি লিটন। এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ না নিয়ে ফিরে যান ডানহাতি এই ওপেনার।
তিন চারে ১১ বলে থামে তার ১৫ রানের সংগ্রাম।
এলেন আর গেলেন মেহেদী
দ্রুত কিছু রানের আশায় মেহেদী হাসানকে তিনে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। কাজে লাগেনি ফাটকা। এজাজ প্যাটেলের বাড়তি লাফানো বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৪ বলে তিনি করেন ১ রান।
শূন্যতেই শেষ সাকিব
ভালো শুরুর পর হুট করে যেন দিক হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২ রানের মধ্যে হারিয়েছে তিন উইকেট। লিটন দাস, মেহেদি হাসানের পর ফিরে গেছেন সাকিব আল হাসানও।
এজাজ প্যাটেলের বলে ঝুঁকি নিয়ে ছক্কার চেষ্টা করেছিলেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। তেমন একটা টাইমিং হয়নি। লং অন থেকে বেশ কিছুটা এগিয়ে ক্যাচ মুঠোয় জমান কোল ম্যাকনকি।
৪ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ২৬। ক্রিজে মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।
সিরিজ জিততে বাংলাদেশের চাই ১২৯
প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজে এগিয়ে গিয়েছিল আগেই। আজ জিতলেই আরেকটি সিরিজ জয়ের উল্লাসে মাতবে বাংলাদেশ। সেটি করতে হলে বাংলাদেশের চাই ১২৯ রান।
মিরপুরে ৫ মাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয়টিতে টস হিতে আগে ব্যাট করে ১২৮ রান করেছে ৫ উেইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড। মাঝে রান তুলতে হিমশিম খেলেও শেষ ৫ ওভারে ৪৬ রান তুলে লড়াকু সংগ্রই গড়েছে সফরকারীরা।
ষষ্ঠ উইকেটে দারুণ এক জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন মূলত টম ব্লান্ডেল ও হেনরি নিকলস। ৬২ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড এই দুই জনের দৃঢ়তায় ৫৫ বলে গড়েন ৬৬ রানের জুটি। ৩০ বলে তিন চারে ৩০ রান করেছেন ব্লান্ডেল। ২৯ বলে তিন চারে ৩৬ রান এসেছে নিকলসের ব্যাট থেকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ইনিংস : ২০ ওভারে ১২৮/৫ (অ্যালেন ১৫, রাচিন ২০, ল্যাথাম ৬৫*, ইয়াং ২০, ডি গ্র্যান্ডহোম ০, ল্যাথাম ৫, নিকলস ৩৬*, ব্লান্ডেল ৩০*; মেহেদি ৪-০-২৭-১, নাসুম ২-০-১০-০, মুস্তাফিজ ৪-১-২৯-১, সাকিব ৪-০-২৪-০, সাইফ ৪-০-২৮-২, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-১০-১)
-----------------------------------
ভয়ঙ্কর লাথামকে থামালেন মেহেদী
আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচে রাখা টম ল্যাথাম এবার বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ককে দ্রুত ফেরালেন মেহেদি হাসান।
বেরিয়ে এসে খেলতে চেয়েছিলেন ল্যাথাম। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের মুভমেন্ট দেখেই বল টেনে দেন মেহেদি। কাজ হয়ে যায় তাতেই। সহজ ক্যাচ দেন ল্যাথাম। ৯ বলে তিনি করেন ৫।
১১ ওভারে নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৫ উইকেটে ৬২। ক্রিজে হেনরি নিকলসের সঙ্গী টম ব্লান্ডেল।
শততম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর উইকেট
বাংলাদেশের হয়ে আজ টি-টোয়েন্টিতে নিচের শততম ম্যাচের মাইলফলক ছুঁয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। উইকেট দিয়েই ম্যাচটি রাঙিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। উইকেটে টিকে যাওয়া রাচিন রবীন্দ্রকে সরাসরি বোল্ড করেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
এক প্রান্ত আগলে রাখা এই ওপেনারকে বোল্ড করে দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এগিয়ে এসে মিডউইকেট দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন রাচিন। কিন্তু বলে ব্যাটে করতে পারেননি এই তরুণ। আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে। ২০ বলে দুই চারে ২০ রান করেন রাচিন।
১০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৬০ রান।
সাইফউদ্দিনের জোড়া আঘাত
নিজের প্রথম ওভারে এসেই জোড়া শিকার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। চতুর্থ বলে উইল ইয়ংকে ফেরানোর পর ওভারের শেষ বলে কলিং ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার।
৭ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৪৬। এর আগে উইকেট পতনের শুরুটা মুস্তাফিজুর রহমান করেছিলেন কিউই ওপেনার ফিল অ্যালানকে ফিরিয়ে।
কিপিংয়ে সোহান, আউটফিল্ডে মুশফিক
কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বলেছিলেন, প্রথম দুই ম্যাচে কিপিং করবেন নুরুল হাসান সোহান। পরের দুই ম্যাচে মুশফিকুর রহিম। তাদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ঠিক হবে পঞ্চম ম্যাচে উইকেটের পেছনে কে দাঁড়াবেন।
সে হিসেবে আজ তৃতীয় ম্যাচে কিপিং করার কথা ছিল মুশফিকের। কিন্তু তিনি ফিল্ডিং করছেন কাভারে। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়েছেন সোহানই।
মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি, অপেক্ষায় সাকিব
অপরিবর্তিত বাংলাদেশের হয়ে আজ শততম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২০০৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় মাহমুদউল্লাহর। ১৪ বছর পরের আরেক সেপ্টেম্বরে তিনি খেলেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের শততম ম্যাচ।
এই সংস্করণে মাহমুদউল্লাহ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্যদের একজন। তার অভিষেক থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে ১০৯টি। এর ১০০টিতেই খেলেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। এই সময়ে দেশের হয়ে ৮৭ ম্যাচের বেশি খেলেননি আর কেউ। ৮৯ ম্যাচ খেলে দুই নম্বরে আছেন কিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসান খেলেছেন ৮৭ ম্যাচে।
ম্যাচে মাইলফলকের সুযোগ আঝে আরেকজনের- সাকিব আল হাসান আছেন একটি উইকেটের অপেক্ষায়। যেটি পেলে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটধারী লাসিথ মালিঙ্গার সমান ১০৭টি উইকেট হবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দুই উইকেট পেলে ছাড়িয়ে যাবেন মালিঙ্গাকে।
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টম লাথাম। ফলে সিরিজ জয়ের ম্যাচে পরে ব্যাট করতে হবে বাংলাদেশকে।
এই ম্যাচটি হচ্ছে শেরে বাংলার সেন্ট্রাল উইকেটে। যেখানে সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। পরের ম্যাচে জিতে ৫ ম্যাচ সিরিজে ২-০ তে এগিয়ে স্বাগতিকরা।
অপরিবর্তিত বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডে দুই বদল
প্রথম দুই ম্যাচে জেতা বাংলাদেশ একাদশে আনেনি কোনো পরিবর্তন। বাইরেই থেকে গেছেন পেসার শরিফুল ইসলাম ও ওপেনার সৌম্য সরকার।
নিউজিল্যান্ড দলে পরিবর্তন আছে তিনটি। বেন সিয়ার্স, ডুগ ব্রেসওয়েল ও হ্যামিশ বেনেটের জায়গায় খেলছেন স্কুট কুগেলেইন, জ্যাকব ডাফি ও ফিন অ্যালেন।
দু’দলের একাদশ
বাংলাদেশ : মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন, মাহেদী হাসান, সাইফউদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান ও নাসুম আহমেদ।
নিউজিল্যান্ড : হেনরি নিকোলস, উইল ইয়ং, ফিন অ্যালেন, রাচিন রাভিন্দ্রা, টম লেইথাম (অধিনায়ক), টম ব্লান্ডেল, কোল ম্যাকেঞ্চি, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, জ্যাকব ডাফি, স্কট কুগেলেইন ও আজাজ প্যাটেল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন