দেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিলেটে গড়ে উঠবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্স’। এরমধ্যে দিয়ে এমন উদ্যোগের ইতিহাসও গড়েছে সিলেট। প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে নির্মাণ করা হবে এই কমপ্লেক্স। এই কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হবে দেড় হাজার কোটি টাকা। এ সংক্রান্ত প্রকল্পে প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাজেট অনুমোদন নিশ্চিত হলেই শুরু হবে প্রকল্পটি। ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এ কমপ্লেক্সে নগরবাসীর জন্য থাকবে বিনোদন, কেনাকাটাসহ বিভিন্ন সুবিধা। থাকবে উন্মুক্ত উদ্যানও। পাকিস্তান আমলে তৎকালিন পাকিস্তানি জেলা প্রশাসকের নামে নগরীর বন্দরবাজারে গড়ে ওঠেছিল হাসান মার্কেট। এছাড়া লালদির্ঘীর পাড়ে হকার্সদের জন্য গড়ে তোলা হয় হকার্স মার্কেট। দুটোই সিসিকের মালিকানাধীন। পাকিস্তানের নাগরিকের নামে করা ‘হাসান মার্কেট’-এর নাম পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন সময় দাবি জানানো হলেও তা থেকে গেছে উপেক্ষিত। এবার এই মার্কেট ভেঙ্গে গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এই বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স। ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণের তথ্য প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হয় চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি। সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) উদ্যোগে ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। সেই অনুষ্টানে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’-এর পরিকল্পনাটি হয় বেশ প্রশংসিত। ২৫ তলাবিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণে নকশা প্রণয়নের কাজ করেছে ট্রায়াঙ্গল কনসালট্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর সাথে জড়িত প্রখ্যাত স্থপতি শাকুর মজিদ। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত সিসিকের ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটেও বিষয়টি উল্লেখ করেছেন মেয়র আরিফ।
সিসিকের পরিকল্পনা মতে, সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকাটি ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ। সেখানে গঠে তোলা স্থাপনায় থাকবে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’। সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ছাড়াও ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ সহ বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতীকী উপস্থাপনা করা হবে সযতেœ। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, তার সেই তর্জনীর আদলে ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্সে’ নির্মাণ করা হবে একটি ভাস্কর্য। এখানে ‘বঙ্গবন্ধু প্লাজা’য় থাকবে মুক্তিযুদ্ধের দালিলিক স্মারক সংগ্রহশালা, সিনেপ্লেক্স, অডিটোরিয়াম, এক হাজার আসনের কনভেনশন হল। থাকবে শেখ রাসেলের নাম্ওে একটি পার্ক। নির্মিতব্য এই কমপ্লেক্সে মানুষের চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থার লক্ষ্যে বিশেষ দৃষ্টি রাখছেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য কমপ্লেক্সে থাকবে নাগরিক চত্বর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রাখা হবে উন্মুক্ত মঞ্চ। কমপ্লেক্সে থাকবে খোলা পার্ক, বইমেলা বা কুঠির শিল্প মেলা করার জন্য ৩৪২টি স্টল বসানোর সুবিধা। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা সহযোগে কমপ্লেক্সটি হয়ে ওঠবে দৃষ্টিনন্দন। এই কমপ্লেক্সের ল্যাম্পপোস্টগুলো হবে সিলেটের ঐতিহ্য দুটি পাতা-একটি কুঁড়ির আদলে। এদিকে, হাসান মার্কেট ও লালদিঘী সিটি সুপার মার্কেটে বর্তমানে যারা ব্যবসা করছেন, তাদের পুনর্বাসনের জন্য কমপ্লেক্সের মধ্যে নির্মাণ করা হবে ছয় তলাবিশিষ্ট একটি আধুনিক মার্কেট। এদিকে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কমপ্লেক্সের’ নকশা প্রস্তুত ও প্রকল্প প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য সিলেট-১ আসনের সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন চলতি বছরের জুনে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ বরাবরে আবেদন করেন। এরপর সেখান থেকে মেলে অনুমতি। এই ট্রাস্টের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমপ্লেক্সের বিষয়ে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার মহান স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে সিলেটে বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স নির্মাণের পথে একধাপ এগিয়ে গেছি আমরা। ২৫তলা বিশিষ্ট এই কমার্শিয়াল হাবের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সিলেট নগরীর ব্যবসা বাণিজ্যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আশাবাদী মেয়র আরিফ। এছাড়া মেয়র আরিফ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়েল ট্রাস্টের সভাপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের প্রাথমিক অনুমোদন প্রদান করায় এই পুণ্যভূমির নাগরিকদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি তাঁকে।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে এখন অপেক্ষা বাজেট অনুমোদনের। অর্থ বিভাগ থেকে বাজেটের অনুমোদন পেলেই শুরু হবে স্বাপ্নিক এ প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন