পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ থেকে ঘনীভূত হয়ে গতকাল শনিবার গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। বন্দরসমূহকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। এদিকে মৌসুমী বায়ু প্রায় দুর্বল থাকায় এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে প্রায় দেশজুড়ে অসহ্য ভ্যাপসা গরমে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আশ্বিন মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে চৈত্র-বৈশাখের মতো দিনে-রাতে খরতাপ। বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশিহারে থাকায় গরমে-ঘামে হাঁপাচ্ছেন বিশেষত কর্মজীবী খেটে খাওয়া মানুষ। গত সপ্তাহ থেকে দেশে বৃষ্টিপাত বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে হচ্ছে এবং তাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম। আবার বৃষ্টি হলেও এরপরই গরম আরও উসকে উঠছে। শরৎ ঋতুর অর্ধেকেরও বেশি পার হয়েছে। মৌসুমের এ সময়ে শিশিরঝরা ভোর-সকালবেলা এখানে-সেখানে হালকা-মিহি কুয়াশা পড়ে। মৃদু শীতের অনুভূতি নিয়ে আবহাওয়া-প্রকৃতিতে শরতের স্নিগ্ধ রূপই হচ্ছে চিরাচরিত স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। অথচ আবহাওয়া-জলবায়ুর খেয়ালী বৈরী আচরণে এ কোন খরতপ্ত খটখটে অচেনা আশি^ন!
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ময়মনসিংহে ৩৬.৮ডিগ্রি সে.। যা অকালে তাপপ্রবাহের পর্যায়ে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় ঢাকায় ৫৩ মিলিমিটার। সাময়িক স্বস্তির বৃষ্টি সত্ত্বেও ঢাকার তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৫ এবং এমনকি রাতের সর্বনিম্ন পারদও ২৮.৮ ডিগ্রি সে.। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি, কোথাও কোথাও মাঝারি বর্ষণ হয়েছে। দেশের অধিকাংশ স্থানে মৌসুমের এ সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে পারদ স্থানভেদে ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত ঊর্ধ্বে রয়েছে। গতকাল দেশের অধিকাংশ স্থানে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রিরও ঊর্ধ্বে।
বাতাসে জলীয়বাষ্পের মাত্রা অস্বাভাবিক বেশি থাকায় অসময়ের তাপদাহের সঙ্গে অত্যধিক ঘামে মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৮ শতাংশ! অসময়ের তাপদাহে সর্দি-কাশি, জ¦র, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে।
আজ রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুছ জানান, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায়; ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
আবহাওয়া সতর্কতা
পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি শক্তি সঞ্চয় ও ঘনীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় গতকাল প্রথমে নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর আরো ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়ার বিশেষ সতর্কতায় আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪১৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৫০ কি.মি. দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০৫ কি.মি. দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন