ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ বাংলাদেশে আঘাত না করলেও চলমান ‘অকাল’ তাপদাহ আরো উসকে দিয়েছে। ‘গুলাব’র প্রভাবে এবং মৌসুমী বায়ু দুর্বল থাকার ফলে গতকাল রোববার দেশের বেশিরভাগ জেলায় তাপদাহের সাথে অসহনীয় ভ্যাপসা গরমের যন্ত্রণা আরও বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রার পারদ আরেক দফা লাফিয়ে উঠেছে। সর্বোচ্চ পারদ ছিল বগুড়া ও রংপুরে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঢাকার পারদ সর্বোচ্চ ৩৫.৫ এবং সর্বনিম্ন ২৫ ডিগ্রি সে.। অধিকাংশ স্থানে তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে গেছে। যা অসময়েই তাপ প্রবাহের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।
ভরা শরৎ ঋতুর আশি^নে তীব্র গরমে-ঘামে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ঘরে-বাইরে কোথাও নেই স্বস্তি। ঘরে ঘরে নানা রোগব্যাধিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে ১৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত ছাড়া দেশের কোথাও তেমন ছিটেফোঁটা বৃষ্টিও ঝরেনি। বাংলাদেশের উপর মৌসুমী বায়ু কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ গতকাল মধ্যরাত নাগাদ ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ‘গুলাব’ অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপট্টনম এবং উড়িষ্যার গোপালপুরের মধাঝামাঝি স্থান কলিঙ্গপট্টনমে প্রথম আছড়ে পড়ে। এরপর ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিমবঙ্গের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এবারের ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ নামটি পাকিস্তানের দেওয়া। উর্দু ভাষায় ‘গুলাব’ মানে গোলাপফুল’। ‘গুলাব’ তেমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় নয়।
‘গুলাব’র বর্ধিত প্রভাবে দক্ষিণ উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ‘গুলাব’ ভারতের উপকূল অতিক্রমকালে এবং এর পরবর্তী সময়ে আজ সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণও হতে পারে। তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’র কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। উপকূলে দমকা হাওয়ার আশঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য বিভাগের বিভাগের দুয়েক স্থানে অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে ২ ডিগ্রি সে. হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়া সতর্কতা
উত্তর-পশ্চিম ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘গুলাব’ আরও পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি আরো উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও দক্ষিণ উড়িষ্যা উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। ঘূণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।
ইতোপূর্বে গত ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ভারতের উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আঘাত হানে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা, চর ও দ্বীপাঞ্চলে অস্বাভাবিক জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
নদীবন্দরে সতর্কতা
দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য আবহাওয়া সতর্কতায় জানা গেছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলসমূহের উপর দিয়ে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ী দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন