ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাাং’-এর প্রভাবে দেশের সমুদ্র উপকূল, চর ও দ্বীপাঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ব্যাপক হতে পারে। জলোচ্ছ্বাসের ছোবলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও হতে পারে ব্যাপক। আবহাওয়া বিভাগ দেশের চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলে স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে স্থানভেদে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা ঘোষণা করে।
তবে বাস্তবে অন্তত ১০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে উপকূলীয় জরাজীর্ণ বেড়িবাঁধ আরও ভেঙেচুরে যেতে পারে। এর ফলে উপকূলে জনবসতি, ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক মাত্রায় হতে পারে।
আজ রাত থেকে উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের ছোবল শুরু হতে পারে। যা চলবে আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্রে জানা গেছে, মূলত তিনটি কারণে জলোচ্ছ্বাসের বড় আঘাত আসতে পারে। প্রথমত, আগামীকাল অমাবস্যার তিথির প্রভাব। অমাবস্যার কারণে চদ্র-সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রে পানি অস্বাভাবিক ফুলে-ফুঁসে ও উত্তাল হয়ে উঠতে পারে।
দ্বিতীয়ত. ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাাং’ বড় আকারের হওয়ায় আজ রাত থেকে এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব তথা ঝড়ো-ঝাপটার সঙ্গে জলোচ্ছ্বাস শুরু হতে পারে। তৃতীয়ত, উত্তর বঙ্গোপসাগর-উপকূলে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্যের কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। এতে করে জলোচ্ছ্বাসের তীব্রতা হতে পারে বেশি।
আজ আবহাওয়া বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, পূর্ব-মধ্য ও এর কাছাকাছি পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ আরো উত্তর, উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়েছে। এটি পূর্ব-মধ্য ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এটি গতকাল চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৫২৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৯৫ কি.মি. দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
এটি আরও ঘনীভূত ও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মঙ্গলবার ভোররাত থেকে সকাল নাগাদ খেপুপাড়ার কাছে দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’র কেন্দ্রের গভীর নি¤œচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিমি’র মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর উত্তাল-বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের আওতায় থাকবে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার নদী বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর নৌ-বিপদ সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সাথে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মি.মি. থেকে ঊর্ধ্বে) বর্ষণ হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশ, অমাবস্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক সামুদ্রিক জোয়ারের চেয়ে স্থানভেদে ৫ থেকে ৮ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাস বুলেটিনে জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক বা মোড় নিয়ে আজ মঙ্গলবার সকাল নাগাদ বাংলাদেশের বরিশাল-সন্দ্বীপ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন