গভীর নিন্মচাপ ‘সিত্রাং’ গতিপথ পরির্বতন করে দেশের দক্ষিণ উপকুলের খেপুপাড়া হয়ে বরিশালের দিকে এগুচ্ছে। মঙ্গলবার রাতের প্রথম প্রহরে ঝড়টি উপকুলে আঘাত হানার কথা খাকলেও রোববার মধ্য রাত থেকেই সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলে আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। সোমবার দুপুর ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক জনপদ প্লাবিত হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। তবে শুধুমাত্র বরগুনার পাথারঘাটা ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘূর্ণিঘড়টির অগ্রবর্তি অংশ, অমাবশ্যার ভরা কোটাল ও বায়ুচাপ পার্থকের আধিক্যের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চল সহ উপক’লীয় জেলাসমুহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭Ñ১০ ফুট উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছাশে প্লাবিত হবার আশংকার কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বায়ু তাড়িত মেঘমালার কারণে উপক’লীয় এলাকায় ভারি থেকে আরো অতি ভারি বর্ষণের কথাও বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের পরিবর্তে রোববার সন্ধায় ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের পরে মধ্য রাতে ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সব নদী বন্দরগুলোকেও ৪ নম্বর নৌ হুশিয়ারী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সারা দেশের সাথে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথগুলোতে সব ধরনের নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। উপক’ল সহ ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তি এলাকায় সাগর যথেষ্ঠ উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে ঝড়টির তীব্রতা ১শ থেকে ১২৫ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় বলা হয়েছে। ফলে খুব বড় বিপর্যয়ের আশংকা না থাকলেও দক্ষিণাঞ্চলের মাঠে থাকা প্রায় ৭ লাখ হেক্টর আমন ধান নিয়ে শংকিত কৃষি যোদ্ধাগন। পাশাপাশি শংকাও বাড়ছে উপক’ল সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের জনমানুষের। সম্ভাব্য সব ক্ষতি মোকাবেলায় প্রশাসনের তরফ থেকে প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা প্রশাসন ও বিভবাগীয় কমিশনারের দপ্তরেও নিয়ন্ত্রন কক্ষ চালু করে সার্বক্ষনিক মনিটরিং করা হচ্ছে।
রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটর ঘূর্ণীঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর প্রায় ৭৫ হাজার সেচ্ছা সেবকগন উপক’লীয় বেড়ী বাঁধের বাইরের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতেও শুরুর করেছেন। ইতোমধ্যে রাংগাবালী, দশমিনা, তালতলীর বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন দ্বীপসমুহের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটতে শুরু করেছে।
রোববার সকাল থেকে উপক’ল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে মেঘলা আকাশে সূর্য আড়ালে রয়েছে। বরিশালে রোববার সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ১মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও সন্ধা ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৬ মিলিমিটার । কিন্তু সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বরিশালে আরো প্রায় ৭০ মিলিমিটার এবং সাগর পাড়ের খেপুপাড়াতে সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১৩২মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমুহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। তবে ২২ দিনের ইলিশ আহরনে নিষেধাজ্ঞায় সাগর উপক’ল সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায়ই মাছ ধরা বন্ধ থাকায় জেলে পল্লী গুলোতে নিরবতার সাথে নৌকা ও ট্রলার নিরাপদে মৎস্য বন্দরে রয়েছে। দুবলার চরেও কোন জেলে নেই বলে রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, পূর্বÑমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি আরো সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভ’ত হয়ে রোববার ঘূর্ণীঝড় ‘সিত্রাং’এ পরিনত হয়েছে। ঘূর্ণীঝড়টি রোববার দুপুর ১২টা থেকে সন্ধা ৬টার মধ্যে আরো ২০ কিলোমিটার অগ্রসর হয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে প্রায় ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থান করলেও এটি ক্রমশ ঘনিভ’ত হয়ে বরিশাল ও খেপুপাড়া উপকুলের দিকে এগুচ্ছে। ফলে তা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত থেকে বরিশাল ও ভোলা উপক’লীয় এলাকায় আঘাত হানার সম্ভবনা রয়েছে বলেও মনে করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগন।
চলতি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে আবাদকৃত প্রায় ৭লাখ জমিত সাড়ে ১৫ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করে রেখেছে কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু মৌসুমের শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের অভাবের সাথে কয়েক দফায় ফুসে ওঠা সাগরের প্লাবন সহ অতি বর্ষণে আমনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪% ঘাটতি ছিল। এখন আবার ঘূর্ণীঝড়ের প্রভাবে ফসলের ক্ষতি কোন পর্যায়ে যায়, তা নিয়ে চরম দুঃশ্চিন্তায় দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক লাখ কৃষক। গত মে মাসের ঘূর্নিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবেও এ অঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন