বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর প্রভাবে কৃষি মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষতি

প্রতিহত করতে গিয়ে আবারো ক্ষতবিক্ষত উপকূলীয় বন

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ অক্টোবর, ২০২২, ৩:০৬ পিএম

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দুর্বল হয়ে দক্ষিণ উপকূল অতিক্রম করলেও তার ক্ত চিঞ্হ ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সোম ও মঙ্গলবারের এ ঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আরো একটি ঝড় প্রতিহত করতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে উপক’লীয় বনভ’মি। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার মাঠে থাকা প্রায় ৭ লাখ ১০ হাজার হেক্টর ফসলের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার ঝড়ের কবলে ক্ষতির কবলে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এরমধ্যে প্লাবনের শিকার শুধু আমন ধানের পরিমানই ১২ হাজার হেক্টর বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা গেছে। তবে বাস্তবে প্লাবিত জমির পরিমান লক্ষাধিক হেক্টরেরও বেশী বলে মাঠ পর্যায়ে খোজ নিয়ে জানা গেছে। আমন ছাড়াও মাঠে থাকা বিভিন্ন ধরনের সবজি, পান, কলা ও পেপে বাগানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ডিএই ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগহের পাশাপাশি পানি সরে যাবার পড়ে ক্ষতির সঠিক পরিমান নিরূপন করবে বলে জানা গেছে। ফলে এ মূহূর্তে ঠিক কত টাকার ফসলহানী বা ক্ষতি হয়েছে তা জানায়নি ডিএই।

অপরদিকে সিত্রাং-এ ভর করে প্রবল বর্ষন সহ স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৩ ফুট উচ্চতার জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য সেক্টরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক প্রতিবেদনে টাকার অংকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৭ কোটি টাকা বলে জানান হয়েছে। সিত্রাং-এর প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় দেড় হাজার হেক্টরের ১২ হাজারেরও বেশী পুকুর, দিঘি ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়ে প্রায় ১৮ টন মাছ, ৭১ লাখ পোনা ভেসে যাওয়া ছাড়াও ৫৫টি মাছধরা নৌকা ও ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মৎস্য সেক্টরে প্রায় ২.২৭ কোটি টাকা মূল্যের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। তবে এঅঞ্চলে কোন জেলের মৃত্যু বা নিখোজের খবর নেই।

বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে মাছ আর পোনা ভেসে যাওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক মৎস্যজীবী সর্বশান্ত হয়ে গেছে। মৎস্য সেক্টরে বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীতেই সর্বাধিক পরিমান ক্ষতি হয়েছে বলে মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে প্রাণি সম্পদ সেক্টর থেকেও যথেষ্ঠ দুঃসংবাদ পাওয়া গেছে। সিত্রাং-এর তান্ডবে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলার ২০৯টি ইউনিয়নে গবাদিপশু এবং হাঁস-মুরগির খামারের যথেষ্ঠ ক্ষতি হয়েছে। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরের দপ্তরের মতে প্রায় ৩৪ হাজার গরু, ১০ হাজার মহিষ, ২৮ হাজার ছাগল, ২ হাজার ছাগল ছাড়াও প্রায় আড়াই লাখ মুরগী এবং ৯০ হাজার হাঁস দূর্যেগের শিকার হয়েছে।
তবে বিপন্ন এসব প্রাণিক’লের মধ্যে ঝালকাঠী জেলার কোন তথ্য নেই। ঝড়ের বিপর্যয়ের কবলে পরা এসব প্রাণির মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার মুরগী ও আড়াই হাজার হাঁস ছাড়াও আড়াইশরও বেশী মহিষ, ৪২টি গরু, ১৩০টি ছাগল, ৮০টি ভেড়ার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১০ হাজার হেক্টর চারনভ’মি প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতির পরিমান ভোলাতেই সর্বাধিক।

সিত্রাং-এর ভর করে আসা ঝড় জলোচ্ছাসে দক্ষিণাঞ্চলে প্রাণিসম্পদ সেক্টরে ক্ষতির পরিমান প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা বলা হলেও বাস্তবে তা অনেক বেশী বলে জানিয়েছেন হাঁস-মুরগী ও গবাদিপশুর খামারীগন। প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীগন ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চল যড়ে অসুস্থ প্রানিকুলের চিকিৎসা কার্যক্রম ছাড়াও ব্যাপকভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর কথা জানিয়েছেন বিভাগীয় পরিচালক ডাঃ মোঃ আবদুস সবুর।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং দূর্বল হয়ে ভোলা-হাতিয়া ও সন্দীপ উপক’লে আঘাত হানলেও তাকে প্রথমেই প্রতিহত করতে গিয়ে উপক’লীয় বনাঞ্চলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে বন বিভাগের উপক’লীয় বন অঞ্চল থেকে এখনো ক্ষয় ক্ষতির কোন তথ্য দিতে না পাড়লেও মাঠ পর্যায়ে ক্ষতি পর্যবেক্ষনে তাদের টিম কাজ করছে বলে বন সংরক্ষক মোঃ হারুন জানিয়েছেন।

দেশের ৭১০ কিলোমিটার উপক’লীয় এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর বনভ’মি সৃজন করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা একের পর এক ঘূর্ণিঝড় প্রতিহত করতে গিয়ে সুন্দরবন সহ উপক’লীয় লবনাম্বুজ বনভ’মি বার বারই ক্ষত বিক্ষত হয়েছে। তবে এসব বনভ’মি সব প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিহত করতে ‘প্রকৃতির ঢাল’ বা ‘রক্ষা কবজ’ হিসেবই কাজ করছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন