সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

লোভে খুন লোভেই ধরা

চট্টগ্রামে ভবন মালিক হত্যার ঘটনায় কেয়ারটেকার গ্রেফতার

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

টাকার লোভেই খুন করেন ভবন মালিককে। এরপর মালিকের মোবাইল থেকে তার মেয়ের কাছে ফোন করে জরুরি বিকাশে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর খুনের জন্য যাদের পুলিশ সন্দেহ করতে পারে তাদের সবাইকে একে একে ফোন করে টাকা দাবি করেন। আর এ ফাঁকে পুলিশ বিকাশে ২০ হাজার টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে তাকে পাকড়াও করে। গতকাল বুধবার পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভবন মালিক মো. নেজাম পাশাকে (৬৫) পরিকল্পিতভাবে খুনের দায় স্বীকার করেন কেয়ারটেকার মো. হাসান ওরফে হাছান (৪২)। তাকে নির্মমভাবে খুনের বর্ণনাও দিয়েছেন আত্মস্বীকৃত এ খুনি।

গত সোমবার ভোরে নগরীর খুলশী থানার জালালাবাদ জমির হাউজিং এলাকার একটি সাত তলা ভবনের পাশ থেকে নেজাম পাশার হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন ভবনের দারোয়ান হাসান। তার কক্ষে খুনের পর লাশ টেনে হেঁচড়ে ভবনের পাশে আবর্জনার ভাগাড়ে ফেলে দেয়ার আলামত পায় পুলিশ। এরপর তাকে খুঁজতে থাকে পুলিশ। খুলশী থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, হাসান খুনের দায় স্বীকার করেছেন।

সাত তলা ওই ভবনের মালিক নেজাম পাশা রোববার ফটিকছড়ি গ্রামের বাড়ি থেকে ভবনের নির্মাণ কাজ তদারকি এবং শ্রমিকদের টাকা দিতে আসেন। হাসান জানিয়েছে, তার সাথে ভবন মালিকের বিরোধ চলছিল। যে কোন সময় তাকে চাকরি থেকে বাদ দিতে পারে এমন আশঙ্কাও করছিল সে। তাছাড়া তাকে খুন করলে অনেক টাকা পাওয়া যাবে, চাকরিও রক্ষা হবে এ চিন্তা থেকে খুনের পরিকল্পনা করে হাসান। দিনভর শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার পর রাতে দারোয়ানের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন নেজাম পাশা। একপর্যায়ে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মুখে স্কচ টেপ মেরে মুখ বেঁধে ফেলে হাসান।

এরপর গামছা ও বৈদ্যুতিক তার দিয়ে হাত-পা বাঁধা হয়। এভাবে শ^াসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর লাশ টেনে হেঁচড়ে ভবনের পাশে ভাগাড়ে লুকিয়ে রাখা হয়। খুনের পর নেজাম পাশার পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় সে। লাশ ভাগাড়ে রেখে নেজাম পাশার মেয়ের কাছে ফোন করে বাড়ির কাজের জন্য জরুরি ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলে হাসান। মেয়ে জানত, তার বাবা সকালেই টাকা নিয়ে ওই ভবনে গেছেন। তাছাড়া যে নাম্বার থেকে তাকে ফোন করা হয়েছে সেটিও তার বাবার। এতে মেয়ের সন্দেহ হলে তিনি পুলিশে খবর দেন। নিজে ছুটে যান ওই বাড়িতে।

কিন্তু তার বাবাকে দেখতে না পেয়ে তিনি রাতেই খুলশী থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এ ফাঁকে গা ঢাকা দেয় হাসান। থানার ওসি জানান, খুনের পর হাসান নগরীতে অবস্থান করে। টাকা-পয়সা জোগাড় হলে নগরীর ছেড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। এজন্য নেজাম পাশার বেশ কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের কাছে ফোনে টাকা দাবি করে সে। যাদের সাথে নেজাম পাশার বিরোধ ছিল একে একে তাদের সবাইকে ফোন করে এ খুনের ঘটনায় ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করে। তাদের একজন বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানায়।

এ সূত্র ধরে পুলিশ হাসানের মোবাইলে ফোন করে ওই ব্যক্তির মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দেয়ার লোভ দেখায়। নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার তামাকুমন্ডি লেইনে একটি বিকাশের দোকান থেকে টাকা নিতে এলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ তাকে পাকড়াও করে। পুলিশ জানায়, হাসান একসময় ফটিকছড়ি কেন্দ্রিক একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য ছিল। তার বিরুদ্ধে অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। নেজাম পাশার বাড়ির কেয়ারটেকারের দায়িত্ব পালনকালে সে নির্মাণ সামগ্রী বিক্রি করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মালিকের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাসান তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেয়। হাসান ফটিকছড়ি উপজেলার আজিমপুর আদর্শ পাড়ার মৃত আমির হোসেনের পুত্র। তাকে রিমান্ডে এনে খুনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি শাহিনুজ্জামান।

এ ঘটনায় নেজাম পাশার স্ত্রী সেলিনা ইয়াসমিন বাদী হয়ে হাছানকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় সেলিনা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে এসে ২০১৯ সালে জমির হাউজিং সোসাইটির ভিআইপি কাঁচা সড়কে নিজের মালিকাধীন জায়গায় সাত তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন নেজাম।

মামলায় তিনি বলেন, ভবনের নির্মাণ কাজ শুরুর সময় সেখানে হাছানকে দারোয়ানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্মাণ কাজে তার পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নেজাম পাশাকে বিভিন্ন সময়ে চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ায় সম্প্রতি তিনি হাসানকে কাজে রাখবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয় হাসান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
জাহানারা মাহবুব ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
ভয়াবহ দুঃখের পাহাড় বুকে চেপে রইল তদন্ত করে ফাঁসী কার্যকর হউক।
Total Reply(0)
Jahirul Islam ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
দারোয়ানের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
Total Reply(0)
Masrafee Mortaza ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
যেসব সরাসরি হত্যার প্রমাণ পাওয়া যায় সেসব খুনীদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। তাহলে এরকম হত্যাকাণ্ড অনেকাংশে কমে যাবে
Total Reply(0)
Ornob Abir ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি প্রদান করা হউক।
Total Reply(0)
Md Shofikul ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৪ এএম says : 0
এই আসামি যদি রানা দাশগুপ্ত এর মতো আইনজীবী ধরে তাহলেই নির্দোষ হয়ে যেতে পারে
Total Reply(0)
Romjanur Milu ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৫৪ এএম says : 0
খুবই দুঃখ জনক ঘটনা ঘটেছে,,, ওর যথার্থ বিচার হওয়া উচিত
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন