সু-স্বাস্থ্য রক্ষায় কেউ বলেন কাঁচা ফল সব্জি খাও তাতে ভিটামিনের গুণ সঠিক মাত্রায় শরীরের প্রয়োজনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া সম্ভব। আবার অনেকে বলেন খোসা না ছাড়িয়ে সিদ্ধ করে খাও বেশী তৈলে রান্না করা চলবে না। তেল গরম করে সিদ্ধ ডাল, তরকারী রান্না করলেই সব খাদ্য গুণ নষ্ট হয়ে যাবে। কেউ বলছেন খোসা সহ ডাল জাতীয় খাবার খাও। তাতে পুষ্টি বেশী। আর তা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে অব্যর্থ। আর এতে অম্বল, অর্শ, আলসার, পেটফাঁপা, গ্যাস প্রভৃতি রোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয় খোসাসহ ডাল জাতীয় খাবার রক্তে কোলেষ্টরেলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। রক্তচাপে ভুগছেন এবং রক্তে কোলেষ্টরেলের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশী এমন রোগীর পক্ষে খোসাসহ সিদ্ধ জাতীয় খাদ্য খুবই হিতকর।
কিন্তু বাস্তবে এসব জেনেও কি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে? না হচ্ছে না। কেন? এ কেন এর উৎস অনুসন্ধানে দেখা যাবে জানা আর মেনে চলার মাঝে আসমান জমিন ফারাক। নিয়ম কানুন ঠিকমত মেনে চললে হাসপাতাল, নার্সিংহোমে এসবের চিকিৎসায় এমন রমরমা কারবার চলতনা।
কিন্তু সু স্বাস্থ্যের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। তাই কিছু সাধারণ উপায় ও নিয়মকানুন সকলেরই জানা দরকার যা প্রয়োজনে অবশ্য পালনীয়। বিষয়গুলোর ব্যবহারিক দিক যথাসম্ভব সহজ ও সরল হওয়াতে বাড়তি কষ্ট লাঘব হবে। অনাবশ্যক কৌতুহল কমবে অথচ পুষ্টির সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে।
জেনে রাখা দরকার বিজ্ঞাপনদাতারা যাই বলুন না কেন, কোন ভোজ্য তেলেই কোলেষ্টরেল নেই। সব তেলই একই রকমভাবে কোলেষ্টরেল বর্জিত বলে ঠিক এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তেল নির্বাচন অর্থহীন। খোসাসুদ্ধ ছোলা, মটর, মুগ ইত্যাদি রক্তে কোলেষ্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা তাই খোসাযুক্ত ডাল শস্য খাওয়ার বিশেষ উপকারিতার কথা বলে থাকেন।
ডিমের সাদা অংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ। আর তা স্বাস্থ্য সন্ধানীদের কাছে খুবই উপযোগী। ওই অংশে ফ্যাট বা কোলেষ্টরেল থাকে না। তাই হৃদরোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি ও নির্ভয়ে ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।
আমরা অনেকেই জানিনা শতকরা ৯০ ভাগ ভিটামিন সি রান্নাতে নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই যেসব খাবারে বেশী মাত্রায় ভিটামিন সি থাকে সে সব খাবার যেমন রসালো ফল, কমলালেবু, জাম, সবুজ সব্জি, কাচালংকা, ক্যাপসিকাম, গাজর, স্যালাদ পাতা ইত্যাদি ভাল করে ধুয়ে কাঁচা খেলে যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায়।
কর্কটরোগ প্রতিরোধ জারণরোধক বা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ‘লাইকোপেজ’ টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও স্যালাদের সঙ্গে কাঁচা টমেটোর কুচি খেয়ে শরীরের প্রয়োজনে তা শোষিত হওয়া সম্ভব হবে না। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে সিদ্ধ করে টমেটো খেতে হবে। তবেই শরীরের পক্ষে লাইকোসিন যথার্থ গ্রহণযোগ্য হবে। সেজন্য টমেটো সস্, টমেটো কেচাপ, টমেটো পেষ্ট ইত্যাদি উপকারী।
আমাদের দেশীয় নিরামিশ রান্নাতে বেশী পরিমাণে তেল-ঘি আবশ্যক স্বাস্থ্যের পক্ষে হিতকর নয়। এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পদটি রান্নার পর রেফ্রিজারেটরে হিমায়িত বা ঠান্ডা করতে পারলে তেল ঘি ভেসে উঠবে ও জমে যাবে। তখন উপর থেকে তেল আলাদা করা সম্ভভ হয়। তারপর সে পদটি সুস্থ অসুস্থ নির্বিশেষে যেকোন কেউ খেতে পারেন।
কেক তৈরীতে চিনির বদলে আনারসের বা আমের টুকরো, খেজুর, আঙ্গুর প্রভৃতি মিষ্টি ফলের মিষ্টতা কেকের সঙ্গে মিশে স্বাভাবিক মিষ্টতা তৈরী করে বা বহুমূত্র রোগী থেকে শুরু করে শর্করা জাতীয় খাবারে যারা নিয়ন্ত্রণ পালন করেন সকলের পক্ষেই উপাদেয় অথচ হিতকর। ফলের মিষ্টিতে ফ্রুকটোস থাকে যার জন্য ইনসুলিন আবশ্যক হয় না। বিরিয়ানী তৈরীতে মাখনসুদ্ধ দুধ ব্যবহার না করে মাখন তোলা দুধ ব্যবহার করলে একই রকম সুস্বাদু হবে।
স্যালাদ তৈরীতে অয়েলের পরিবর্তে ভিনিগার অথবা লেবুর রস ব্যবহার করলে একই রকম হবে। ফ্যাট নিয়ন্ত্রণও সম্ভব হয়। মনে রাখতে হবে মানুষ অভ্যাসের দাস। রান্নার অনুপাতে রকমফের খাদ্যাভাস তৈরী করতে হবে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে রান্না করা খাবার যতই মুখরোচক হোক না কেন তার স্বাস্থ্যহানিকর দিকগুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আবশ্যক।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন