বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

স্নায়ুযুদ্ধের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ৯ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আমেরিকার নেতৃত্বে ন্যাটো ও সোভিয়েতের নেতৃত্বে ওয়ারশ জোট গঠিত হয়। এর বাইরে অবশ্য ন্যামও গঠিত হয়। ফলে বিশ্ব তিন ভাগে বিভক্ত হয়। ন্যাটো ও ওয়ারশ জোট পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। তাতে ব্যাপক সংঘাত ও হানাহানি ঘটে বিশ্বব্যাপী। বহু দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়। বেশিরভাগ দেশ সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। এ অবস্থায় ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে খন্ড-বিখন্ড হয়ে পড়ে। ফলে আমেরিকা একক পরাশক্তিতে পরিণত হয় এবং ইচ্ছামাফিক পুঁজিবাদ, মুক্ত বাণিজ্য ও কর্তৃত্ব চাপিয়ে দেয় বিশ্বে। ইদানিং চীনের আর্থিক ও সামরিকভাবে অকল্পনীয় উন্নতি হওয়ায় সে অনিবার্যভাবে আমেরিকার উপরে জেঁকে বসেছে। ফলে চীনকে প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী মনে করছে আমেরিকা। ইতোমধ্যে চীনকে প্রধান শত্রু বলে ঘোষণা করে দমন করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা। চীনও আমেরিকাকে প্রতিটি পদক্ষেপেরই উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। তবুও আমেরিকা ক্ষান্ত হয়নি। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন চীন বিরোধী সামরিক জোট গঠন করেছেন- কোয়াড ও অকাস। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানকে নিয়ে গত ১২ মার্চ গঠন করা হয় কোয়াড। এর পর গত ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষ নেতারা অকাস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ফলে অস্ট্রেলিয়া প্রথম বারের মতো পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরিতে সক্ষম হবে, যা প্রচলিত সাবমেরিনের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুতগতির, চিহ্নিত করা কঠিন, কয়েক মাস পানিতে ডুবে থাকতে পারে ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপে সক্ষম। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রযুক্তি শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যকে দিয়েছে ১৯৫৮ সালে। বর্তমানে পরমাণবিক সাবমেরিন রয়েছে মাত্র ছয়টি দেশের। যথা: যুক্তরাষ্ট্রের ৭০টি, রাশিয়ার ৪০টি, চীনের ১৯টি, যুক্তরাজ্যের ১০টি ফ্রান্সের ৯টি ও ভারতের ৩টি। এর সঙ্গে যুক্ত হতে চলেছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া, পরমাণু বোমা রয়েছে আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ভারত, পাকিস্তান ও ইসরাইলের।

যা’হোক, অকাসের প্রচন্ড বিরোধিতা করেছে রাশিয়া, চীনসহ অনেক দেশ। রাশিয়া বলেছে, অকাস মূলত চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি শত্রুতামূলক পদক্ষেপ। এই জোটের অবকাঠামো পুরো এশিয়াকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। চীন বলেছে, এই চুক্তি পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তারের মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। এতে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে। এটা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির চেতনার পরিপন্থী। এর আগে দেশ দু’টি কোয়াডেরও প্রচন্ড বিরোধিতা করেছে। মালয়েশিয়া বলেছে, অকাস নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। পাকিস্তান বলেছে, অকাস প্রতিষ্ঠায় স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতার প্রতিফলন ঘটেছে। এই জোট এশিয়ায় স্নায়ুযুদ্ধ নিয়ে আসতে পারে। অবশ্য, ইন্দোনেশিয়া অকাসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অকাস প্রতিষ্ঠার পরপরই চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ফ্রান্সও চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে। কারণ, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ১২টি সাবমেরিন নির্মাণের জন্য ৯০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালে, যা অস্ট্রেলিয়া বাতিল করেছে অকাস প্রতিষ্ঠার পর। তাই ফ্রান্স চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি। এ ব্যাপারে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ফ্রান্সকে সমর্থন ও সংহতি জানিয়েছেন। ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রের উপরও প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রিয়ান বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একতরফা নীতি, অদূরদর্শিতা, নৃশংসতা ও অংশীদারদের সম্মান না করার নীতিতেই চলছে প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ফ্রান্সের এই ক্ষোভ নিরসন করার চেষ্টা করছে আমেরিকা। অকাস প্রতিষ্ঠার পর মনে হয়েছিল কোয়াড শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না তা হয়নি। কোয়াডের শীর্ষ নেতারা গত ২৪ সেপ্টেম্বর বৈঠক করেছেন হোয়াইট হাউসে। এই দুই জোট ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে একটি সামরিক বলয় সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক মার্কিন পঞ্চম নৌবহর কর্তৃপক্ষ গত ৮ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছে, ইসরাইল ও পারস্য উপসাগরীয় কয়েকটি আরব দেশকে নিয়ে পারস্য উপসাগরে একটি যৌথ সমুদ্র ড্রোন টাস্কফোর্স গঠন করছে আমেরিকা। এতে এয়ারবোর্ন, নৌ জাহাজ ও আন্ডারওয়াটার ড্রোন যুক্ত থাকবে। এর বাইরে আরও কিছু দেশের সাথে আমেরিকার সুসম্পর্ক আছে। এদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান উল্লেখযোগ্য।

অবশ্য নদীর যেমন একূল ভাঙ্গে তেমনি ওকূল গড়ে। এমনি অবস্থা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ন্যাটোর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইউরোপের দেশগুলো এর সদস্য ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নীতির কারণে ইইউ এখন ন্যাটো থেকে বের হয়ে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট গত ২৮ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ইইউ’র নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। উপরন্তু চীনের সাথে ইইউ’র দেশগুলোর সম্পর্ক ভালো। গত ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত চীন-ইউরোপ একাদশ কৌশলগত সংলাপে ইইউ’র নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান বোরেল বলেন, চীনের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ইইউ’র একটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। ইউরোপ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও মসৃণ যোগাযোগ বজায় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অবস্থায় ইইউ মার্কিন প্ররোচনায় চীন বিরোধী তৎপরতায় সহজে সম্পৃক্ত হবে না। ন্যাটোর সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মিত্র তুরস্কও তাই। সম্প্রতি দু’দেশের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। তুরস্ক রাশিয়া থেকে এই অস্ত্র আমদানি করছে আমেরিকার আপত্তি সত্ত্বেও। এ ব্যাপারে তুর্কী প্রেসিডেন্টের অভিমত, আমেরিকা যদি আংকারার কাছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা বিক্রি করতো তাহলে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কিনতো না। এ অবস্থায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাশিয়া ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেন রাশিয়ায়। বৈঠকে পুতিন বলেন, রাশিয়া-তুরস্ক সহযোগিতা সুষ্ঠুভাবে চলছে। আমেরিকার সাথে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে ছেদ ঘটিয়ে পাকিস্তান চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। তালেবানের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা সরিয়ে নিয়েছে আমেরিকা। উপরন্তু ইরাক থেকে চলতি মাসের মধ্যে সব সেনা সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিরিয়া থেকে সব বিদেশি সেনা সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে আমেরিকার অনেক সেনা রয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ী বলেছেন, আঞ্চলিক দেশগুলোতে বিদেশি সেনা হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। অপরদিকে, ইরানের পরমাণু চুক্তিতে পুনরায় ফিরে আসার কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা হলেও ইরান-আমেরিকা সুসম্পর্ক হবে না। কারণ, ইরানের সর্বাধিক ক্ষতি করেছে আমেরিকা। এদিকে, দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক ভালো নয়। ইসরাইলের আগ্রাসী কর্মকান্ডের প্রতি অন্ধ সমর্থনের কারণে অনেক মুসলিম দেশসহ বহু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি নাখোশ। ৯/১১’র নারকীয় ঘটনার পর থেকে আমেরিকার সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে বহু দেশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুসলিম দেশগুলো। এই দেশগুলো তা সহজে ভুলবে না। করোনার টিকা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মজুদ করেছে আমেরিকা। ফলে গরিব দেশগুলো বঞ্চিত হয়েছে। তাই তারা চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে আমেরিকার প্রতি। বলা যায়, বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমেরিকার পক্ষের চেয়ে বিপক্ষের পাল্লাই ভারী। দ্বিতীয়ত: সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ পরিচালনা করতে গিয়ে গত ২০ বছরে আমেরিকার বহু সেনা নিহত-আহত হওয়া ছাড়াও প্রায় ৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়েছে। কিন্তু এ যুদ্ধের ফল শূন্য। ফলে মার্কিনীরা চরম ক্ষিপ্ত হয়েছে। তাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন জাতিসংঘে গত ২১ সেপ্টেম্বর বলেছেন, ‘মার্কিন সামরিক বাহিনীকে বিশ্বের প্রতিটি সমস্যার সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়।’ তাই যদি হবে, তাহলে নতুন করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন তিনটি জোট গঠন করার হেতু কী? সর্বোপরি ন্যাটো তো রয়েছেই। আসলে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মন্তব্য ধোকাবাজী বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে আমেরিকা যুদ্ধবাজ নীতিতেই বহাল আছে।

ইরান, রাশিয়া, চীন,সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া সেইন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিন্স দ্বীপপুঞ্জ-এ ১৬টি দেশ নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগে। এই জোটের মোটিভ সাম্য, শান্তি ও উন্নতি। এ জোট মূলত মার্কিন বিরোধী। অন্যদিকে, তালেবানের কাছে আমেরিকা পরাজিত হওয়ার পর তালেবানকেন্দ্রিক অঘোষিত একটি জোট হয়েছে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তানের মধ্যে। চীন ও রাশিয়া ছাড়াও বাকী দেশগুলোও মার্কিন বিরোধী। মার্কিন বিরোধী এই দুই জোট ভবিষ্যতে এক হয়ে যেতে পারে। এতে আরও যুক্ত হতে পারে মার্কিন বিরোধী অন্যান্য দেশ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও ব্যবসার ক্ষেত্রে চীনের তৎপরতা বিশ্বে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিসির এক খবরে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্য প্রধান শক্তিধর দেশগুলো অন্য দেশকে উন্নয়নের জন্য যে অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, তার দ্বিগুণের বেশি অর্থ দিচ্ছে চীন।

চরম শত্রুতামূলক দুই মেরুর সামরিক জোট তাদের বলয় শক্তিশালী করার জন্য লবিং জোরদার করেছে। সেই সাথে সামরিক শক্তিও বৃদ্ধি করছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিচ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন মতে, ‘২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় ২.৬% বেড়ে ১,৯৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে করোনা সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দায়ও। সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি চলতি বছরও অব্যাহত আছে। সর্বোপরি সামরিক শক্তিশালী দেশগুলো নিত্য নতুন আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। যেমন, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যার গতি শব্দের চেয়েও পাঁচগুণ। তথা ঘণ্টায় ৬,২০০ কি.মি.। এর আগে গত জুলাইয়ে রাশিয়া বলেছিল, তারা জিরকন হাইপারসনিক ক্রুস ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে, যার প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বে নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। চীন গত মাসে প্রদর্শন করেছে তার সর্বাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সিএইচ-৬ ড্রোন, যা গোয়েন্দাবৃত্তি ও সামরিক অভিযানে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া, সীমান্ত নজরদারি ও সমুদ্র পাহারায় ব্যবহৃত ডাব্লিউ জেড-৭ ড্রোন ও জে-১৬ ডি জঙ্গি বিমান উড়ানো হয়েছে। জে-১৬ বিমান শত্রুর ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে জ্যাম সৃষ্টিতে সক্ষম। ইতোপূর্বে চীন তার সেনাদের প্রস্তুত করেছে বৈশ্বিক সাইবার যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। উত্তর কোরিয়া, ইরান ও তুরস্ক মাঝে মধ্যেই অত্যাধুনিক ক্ষেপনাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি এক সপ্তাহের মধ্যে চারবার ক্ষেপণাস্তের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। যার একটি হাইপারসোনিক। ফ্রান্সের সঙ্গে ৫.৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে গ্রিস গত ২ অক্টোবর। তুরস্ক বলেছে, এই চুক্তি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে। ইরানের সামরিক বাহিনী গত ১ অক্টোবর সানান্দাজ প্রদেশে সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এটাকে প্রতিবেশী আজারবাইজানের মাটিতে ইহুদিবাদী ইসরাইলের উপস্থিতির বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি বলে জানিয়েছেন দেশটির সংসদ সদস্যরা। সম্প্রতি চীন লাদাখে নতুন করে নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সেনা প্রধান নারাভানে।

যা’হোক, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ৪টি সামরিক জোট এবং চীন-রাশিয়া ও ইরানের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট দৃশ্যমান হয়েছে। এছাড়া, ইইউ’র উদ্যোগে একটি জোট হতে পারে শান্তি জোট হিসাবে। যেসব দেশ সামরিক জোটভূক্ত হতে অনিচ্ছুক, তারা এই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সর্বোপরি ন্যাম এখনো আছে। এসব জোটের ঠেলাঠেলিতে চলতি বাণিজ্যিক ও আঞ্চলিক জোটগুলো ভেঙ্গে যেতে পারে। চলতি স্নায়ুযুদ্ধ ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হতে পারে। সেটা হলে কে জয়ী হবে তা বলা কঠিন। তবে ভবিষ্যৎ বিশ্ব যুদ্ধের ফলাফল দেখার মতো কোনো মানুষ জীবিত থাকবে না বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। তাই জাতিসংঘের মহাসচিব ‘শীতল যুদ্ধ’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে সতর্ক করে দুই দেশকে তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের আহবান জানিয়েছেন। স্নায়ুযুদ্ধই হোক, আর বিশ্বযুদ্ধই হোক, সে পথ ত্যাগ করে চলতি বৈশ্বিক সংকট তথা বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা বৃদ্ধি, করোনা মহামারি, বৈশ্বিক মহামন্দা ও দারিদ্র বৃদ্ধি ইত্যাদি নিরসন এবং শান্তি ও উন্নতির দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া দরকার। গত বছর জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৩টি দেশের এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে যুক্ত করে বিশ্বব্যাপী এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে আলোচকদের ৯০ শতাংশই বিশ্বের চলতি কমন সংকটগুলো বহুপাক্ষিকতাবাদের মাধ্যমে নিরসন করার আহ্বান জানান। বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্বনেতাদের এ দিকেই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Liton Tex ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১০ এএম says : 0
বিশ্বরাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক দিক নিয়ে এত সুন্দর বিশ্লেষণ সত্যিই অসাধারন
Total Reply(0)
Abdullah Al Kabir ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
nahhh . it will balance each super power just like in the 50s 60s 70s and 80s .
Total Reply(0)
Mohsin Khan ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১১ এএম says : 0
এবারের স্নায়ু যুদ্ধে ত্রিমুখী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে।
Total Reply(0)
Naib Al Emran ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১২ এএম says : 0
May Allah save this earth from super powers aggression
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ৯ অক্টোবর, ২০২১, ৬:১৩ এএম says : 0
thanks to writer, highly rich article
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন