রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

রসুই সঙ্গী মাইক্রোওয়েভ ওভেন-সময়ের সাথে রূপান্তর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২১, ৯:২৮ পিএম

পাথরের ঘষায় জ্বালানো আগুনে মাংস ঝলসিয়ে খাওয়ার যুগ থেকে বর্তমানে অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ বিকিরণের মাধ্যমে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে কয়েক মিনিটে রান্না – প্রযুক্তির হাত ধরে মানব সভ্যতা এগিয়ে গেছে অনেক দূর। আধুনিক রসুই ঘরে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের অনুষঙ্গ এখন আর আহামরি কোনো সৌখিনতা নয়। বরং বর্তমানে এটি দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি সামগ্রী হয়ে উঠেছে। দ্রুত ও সুষমভাবে খাবার গরম করা এবং বিভিন্ন রকম রান্না ও বেকিংয়ের কাজে মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই, এখন শহরের প্রায় প্রতিটি ঘরেই মিলবে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দেখা।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সূচনা সম্পর্কে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। ১৯৪৫ সালে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই আমেরিকান বিজ্ঞানী পার্সি স্পেন্সারের মাথায় আসে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ধারণা। তিনি মার্কিন রেথিওন কোম্পানিতে মাইক্রোওয়েভ নিয়ে কাজ করার সময় লক্ষ্য করেন, তার পকেটে রাখা চকলেট বারগুলো গলে যাচ্ছে। পরবর্তীতে এই অকস্মাৎ পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন ব্যবহার করে ডিম রান্না ও পপকর্ন তৈরির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ১৯৪৭ সালে রেথিওন কোম্পানি এই চমকপ্রদ আবিষ্কারটি বাজারে নিয়ে আসে। তবে, আমাদের রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছাতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনকে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল।

বাজারে আসা প্রথম মাইক্রোওয়েভ ওভেনটি ছিল সাড়ে ৫ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট, ৭৫৯ পাউন্ড ওজনের একটি যন্ত্র, বর্তমানের হিসাবে যার বাজারমূল্য ছিল প্রায় ৫০,০০০ মার্কিন ডলার! এছাড়া, এর ম্যাগনেট্রন ঠান্ডা রাখতে প্রয়োজন হতো ওয়াটার কুলিংয়ের ব্যবস্থা। কেবল খাবার গরম করার জন্য ব্যবহার করা যেত বলে সেসময়ে এটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। ওভেনকে সহজে ব্যবহার উপযোগী ও সাশ্রয়ী করার নিরলস প্রয়াসের এক পর্যায়ে ১৯৬৪ সালে এতে যুক্ত হল জাপানি প্রযুক্তির ইলেকট্রন টিউব। এরপর বাজারে আসে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের কাউন্টারটপ সংস্করণ, যা দামে কম, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এবং কম সময়ে কাজ করতে সক্ষম। এভাবে মাইক্রোওয়েভ ওভেন সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। মাইক্রোওয়েভ ওভেনের বর্ধমান জনপ্রিয়তা ও বাজারের দ্রুত সম্প্রসারণে অন্যতম ভূমিকা পালন করে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। নিজেদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে কয়েক বছরের মধ্যেই ওভেনের বাজারে সাফল্যের মুখ দেখে স্যামসাং মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

তবে মানুষের জীবনকে প্রতিনিয়ত আরো স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক করার প্রয়াসে উদ্ভাবনী যাত্রা থেমে থাকেনি। মাইক্রোওয়েভ ওভেনে মাইক্রোওয়েভ টিউবের জায়গায় রান্নার জন্য এখন ব্যবহৃত হচ্ছে সলিড-স্টেট রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, যা খাবারের গুনমান ও পুষ্টি বজায় রাখতে সাহায্য করছে। এছাড়া, ওভেনের চেম্বারে বায়োসিরামিক ও স্টেইনলেস ষ্টীল ব্যবহার করা হচ্ছে। সময়ের পরিবর্তনে মানুষের প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অভিনব উদ্ভাবনের সাথে সোলো, গ্রিল, কনভেকশন ইত্যাদি নানা ধরণের ওভেন বাজারে নিয়ে এসেছে। সোলো মাইক্রোওয়েভ ওভেন মূলত রান্না, খাবার গরম করা ও হিমায়িত খাবার ডিফ্রস্টিংয়ের কাজে ব্যবহৃত হয় এবং গ্রিল মাইক্রোওয়েভ ওভেনে এসবের সাথে খাবার গ্রিল করার কাজ করা যায়। কনভেকশন ওভেনে গ্রিল মাইক্রোওয়েভ ওভেনের সকল কাজের পাশাপাশি বেকিং ও টোস্টিংয়ের কাজ করা যায়, সেই সাথে এতে ধাতব পাত্রও ব্যবহার করা যায়।

বর্তমানে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের বাজার এতোটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, সারা বিশ্বে বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়ন মাইক্রোওয়েভ ওভেন তৈরি করা হয়। বিশ্বের ৫০ শতাংশের বেশি বাড়িতে এখন মাইক্রোওয়েভ ওভেন রয়েছে। সাধারণত পণ্যের ফিচার এবং ডিজাইনের ভিত্তিতে গ্রাহকরা সময়ের সাথে সাথে তাদের ওভেন পরিবর্তন করার আগ্রহ দেখান। সোলো মডেলের মাইক্রোওয়েভ ওভেন অধিকাংশ ঘরে দেখা গেলেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জন্য অনেকেই এখন কনভেকশন ওভেনের দিকে ঝুঁকছেন। শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং গ্রাহক চাহিদার কথা বিবেচনা করে সোলো, গ্রিল, কনভেকশন – এই তিন ধরণের মাইক্রোওয়েভ ওভেন বাজারে নিয়ে এসেছে, যাতে হটব্লাস্ট, ইকো মোড, ট্রিপল ডিসট্রিবিউশন সিস্টেমসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। এসব মাইক্রোওয়েভ ওভেন ৮,৯০০ টাকা থেকে ৪২,৯০০ টাকা মূল্য পরিসরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন