শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আজ

ফেসবুকে পরীক্ষার প্রশ্ন-সাজেশন বিক্রির পোস্ট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০১ এএম

গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। প্রথমদিন বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ‘ক’ ইউনিটে প্রতি আসনে ভর্তির জন্য লড়ছেন ১০ জনের বেশি শিক্ষার্থী। এদিকে এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে গতকাল শনিবার থেকেই পরীক্ষার প্রশ্ন ও সাজেশন বিক্রির পোস্টে সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। পোস্টের ফাঁদে পড়ে কোনো কোনো শিক্ষার্থী টাকা খুইয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, ‘প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই’। ভর্তি পরীক্ষা শুরুর ঠিক একদিন আগে গুচ্ছ পরীক্ষাভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রæপের পোস্টে দেখা যায় প্রশ্নপত্র দেওয়ার বিজ্ঞাপন। শিক্ষার্থীদেরকে শতভাগ নিশ্চয়তার প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। এছাড়াও প্রশ্নপত্র ও সাজেশন পেতে শিক্ষার্থীদেরকে ইনবক্সেও যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

প্রশ্নপত্র পাওয়ার প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ানোদের একজন তাইজুল হাসান। তিনি বলেন, আমি ও আমার আরেক বন্ধু মিলে সাজেশন পাওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। ওরা আমাদের একজনকে বøক করে দিয়েছে শুনে আমি কথা বলতে গেছিলাম, তারপর আমাকেও বøক করে দিয়েছে। সাজেশনও পেলাম না, টাকাও গেল।

প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই জানিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার টেকনিক্যাল কমিটির আহŸায়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মুনাজ আহমদ নূর বলেন, উচ্চমাধ্যমিকের সিলেবাস অনুসারে পরীক্ষা হবে। সিলেবাসের বাইরে থেকে কোনো প্রশ্ন আসার সুযোগ নেই। আমাদের কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে আমরা অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নিব।

প্রশ্নপত্র ও সাজেশন দেওয়ার নাম করে যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা একটা যুদ্ধের মত। তারা সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার পরেও সুযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু অনেকে প্রশ্নপত্র ও সাজেশন দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত তা দেয়না। এতে অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎই নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য তাদেরকে দ্রæত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

প্রথমবারের মতো গুচ্ছভুক্তভাবে ২০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান- তিনটি গুচ্ছে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। সেই ফলাফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব শর্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। সূচি অনুযায়ী আজ হবে বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে ফেইসবুকের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রæপে শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিশ্চয়তার প্রলোভন দেখিয়ে সাজেশন এবং প্রশ্নপত্র দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।

ওয়েব অফিসার এডুকেশন বোর্ড নামের একটি ফেসবুক পেজেও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছে, গুচ্ছ এডমিশন ২০২১! যারা প্রশ্নপত্র নিতে চান তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। গুচ্ছ প্রশ্নপত্র দেওয়ার জন্য লিস্টে নাম নেওয়া হচ্ছে। এ পেজ থেকে জানানো হয়, প্রশ্নপত্র ও সাজেশন নিতে এডমিট কার্ডের ছবি, বাবা বা মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি, ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা এবং ৩৫ হাজার টাকার ৫০ ভাগ দিতে হবে। তারা ০১৯০৭৩৮১৭৮১ নগদ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেন। এরকম আরও অসংখ্য পেজ থেকে প্রশ্ন বিক্রির অফার দেয়া হচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের করা হচ্ছে ম্যাসেজ।

এদিকে বড় পরিসরের সমন্বিত এই ভর্তি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা যেন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অংশ নিতে পারে সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া, আসন বিন্যাস প্রকাশ করা এবং পরীক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ক ইউনিটের পর ২৪ অক্টোবর মানবিকের খ ইউনিটে এবং ১ নভেম্বর বাণিজ্যের গ ইউনিটে দুপুর ১২টা-১টা পর্যন্ত গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগেই সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগসহ তিনটি ইউনিটে রয়েছে মোট ২২ হাজার ১৩টি আসন। এর বিপরীতে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৩২ হাজার ৪৫৫ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ‘এ’ ইউনিটে এক লাখ ৩১ হাজার ৯০১ জন, ‘বি’ ইউনিটে ৬৭ হাজার ১১৭ জন এবং ‘সি’ ইউনিটে ৩৩ হাজার ৪৩৭ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন হবে উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে। এতে মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষায় প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য কাটা যাবে শূন্য দশমিক ২৫ নম্বর। তবে বিভাগ পরিবর্তনের জন্য আলাদা কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।

গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন বলেন, পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে নিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো। আশা করি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ কমে আসবে। আমাদের প্রত্যাশা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। পরীক্ষার সময় কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন টেকনিক্যাল টিম পর্যবেক্ষণে থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন