ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তিস্তা নদীর পানি আবারও অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে বিভিন্ন বাঁধ। ইতিমধ্যে তিস্তা ব্যারেজ সড়কের 'ফ্লাড বাইপাস' ভেঙে গেছে। ফলে তিস্তার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ও বাঁধ রক্ষায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। আবারও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, ভারতে প্রবল বর্ষণ এবং পাহাড়ী ঢলের কারনে ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভারত তিস্তার উজানে গজলডোবা ব্যারেজের সবক’টি গেট খুলে দিয়েছে। এর কারনে বুধবার সকাল থেকেই তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বাড়তে শুরু করে এবং সকাল ৭টা নাগাদ ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং সকাল ১০টা নাগাদ ৬০ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি এবং পানির প্রবল স্রোতে তিস্তা ব্যারেজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ড রেড এ্যালার্ট জারি করে এবং তিস্তার চরাঞ্চলসহ আশপাশের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহŸান জানায়। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির কারনে ইতিমধ্যে তিস্তা বিধৌত নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে তলিয়ে যেতে শুরু করে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে অন্যান্য বাঁধগুলোও। বেলা ১১টার দিকে পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে যায় তিস্তা ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের একটি ফ্লাড বাইপাস। নি¤œাঞ্চলগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এবং পানির প্রবল স্রোতের কারনে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ব্যারেজের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত ফ্লাড ফিউজ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এতে বুড়িমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধার সঙ্গে নীলফামারী জেলার সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পানি পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫১ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই পানি ১০৭ সেন্টিমিটার বেড়ে সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং সকাল সাড়ে ১১ টায় বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এখনও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীলফামারী জেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ নামক স্থানে প্রায় ৪’শ মিটার গ্রোয়েন বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে করে ওই উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশাচাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারীসহ ১০টি ইউনিয়ন এলাকার ২২টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন প্রায় ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ। চরাঞ্চলের এসব এলাকার বাড়িঘরে ৪ থেকে ৫ ফুট পানি উঠেছে। পানির নিচে তলিয়ে গেছে সব এলাকার রাস্তা-ঘাট।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানিয়েছেন, ‘পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এরই মধ্যে তিস্তাবাজার, তেলিরবাজার, দোলাপাড়া, চরখড়িবাড়ি এলাকা তলিয়ে গেছে। চরের ফসলের জমি সব পানির নিচে। ঘরবাড়ি ছেড়ে মানুষ গবাদিপশু নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশফুউদ্দৌলা প্রিন্স জানিয়েছেন, উজান থেকে আসা ঢলের কারনে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েও পানি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেকোনো সময় তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড ফিউজ বিধ্বস্ত হতে পারে। আমরা তিস্তা অববাহিকায় লাল সংকেত দিয়ে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলেছি।
এদিকে, আকস্মিকভাবে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা সৃষ্টি হওয়ায় চরাঞ্চলের সবজিসহ ফসলের জমি পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দু’দফা বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারো বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন