বাংলাদেশের উপর এখন কম সক্রিয় রয়েছে মৌসুমী বায়ু। তা সত্তে¡ও এর প্রভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অনেক স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ, কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে গত টানা পাঁচ দিনে দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, মধ্য প্রদেশ ছাড়াও চীন, নেপালে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
অকাল ভারী বর্ষণে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজেদের বন্যামুক্ত রাখতে উজানে ভারত গজলডোবা বাঁধের পানি ছেড়ে দেয়ায় তিস্তায় পানি বেড়ে গিয়ে কুড়িগ্রাম, নীলফামারী জেলাসহ দেশের উত্তর জনপদের বিরাট এলাকা আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়েছে। গতকালসহ পর পর দু’দিন তিস্তা বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় কিশোরগঞ্জে ৮৫ মিলিমিটার। অধিকাংশ জেলায় কমবেশি বৃষ্টিপাত হয়। তবে খুলনা বিভাগে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ড ৩৩.৫ এবং সর্বনিম্ন তেঁতুলিয়ায় ২২.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় ২৩ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩২.৩ এবং সর্বনিম্ন ২৪.৬ ডিগ্রি সে.।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, মৌসুমী বায়ু দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বিদায় নিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় মৌসুমী বায়ু দেশের অবশিষ্ট অঞ্চল থেকে বিদায় নিতে পারে। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
নদ-নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি
দেশের অভ্যন্তরে ও উজানে ভারত-চীন-নেপালে অসময়ের ভারী বৃষ্টিতে হঠাৎ করেই দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পাউবো’র বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, গতকাল নদ-নদীসমূহের ১০৯টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৭০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৪টিতে হ্রাস পায় এবং ৫টি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। গতকাল বিকাল পর্যন্ত তিস্তা নদী কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তাছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বেতনা নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সে.মি. ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
গত বুধবার নদ-নদীর ৫২টি স্থানে পানি বৃদ্ধি, ৫৬টিতে হ্রাস ও একটি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হয়। পাউবো গতকাল আরো জানায়, দেশের প্রধান সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার নীচে নেমে আসতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা অববাহিকায় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
গতকাল ২৪ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্ব ভারতের পাসিঘাটে ৯২, চেরাপুঞ্জিতে ৭৫, শীলচরে ৭২, ধুবড়িতে ৫৪ মিলিমিটারসহ উজানে বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী ও অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন