করোনা মহামারির কারণে ৮২.৭৮ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যার মূল কারণ করোনাকালের অর্থনৈতিক সঙ্কট। মরণঘাতী ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশে ৭৬ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে। তাছাড়া ৪৮.৪৯ শতাংশ পরিবারের অন্তত একজন বেকার হয়েছেন। ২০২০ সালের নভেম্বর হতে এবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী পরিচালিত ‘দ্রুত গৃহস্থালি পরিসেবা বিশ্লেষণ-২০২০’ জরিপে এসব তথ্য উঠে আসে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ‘ফরমাল রিকগনিশন অফ দ্যা উম্যানস আনকাউন্টেড ওয়ার্ক’ জরিপটি তত্ত্বাবধান করে।
নারী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ফোরামটির সদস্য সংস্থাগুলো হচ্ছে এ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংস্থা, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ, অক্সফাম ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
এই জরিপের নেতৃত্বে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী। জরিপটির বিষয়ে শারমিন্দ নিলোর্মী বলেন, জরিপে বাংলাদেশের এনজিও সংস্থাগুলোর মতো সুবিধাজনক ডাটা নেয়া হয়নি। প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎকার ও ফোনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও শহরের নাগরিকবৃন্দ এ জরিপে অংশগ্রহণ করেন। জরিপে মানসিক স্বাস্থ্য, বেকরত্বের হার, দারিদ্র্যের হার, নারী আয়, নারী সহিংসতা, শিশু শিক্ষা, অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তাসহ বিবিধ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়।
জরিপে উল্লেখ করা হয়, গ্রামীণ নারীদের ৫০শতাংশই মানসিকভাবে দুর্বল, ২০ শতাংশ বিপর্যস্ত ও শহরের ২৩ শতাংশ নারী মানসিকভাবে খুবই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। এছাড়া গ্রামের ৯৭ শতাংশ ও শহরের ৮৮ শতাংশ নারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সংসারে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ নারীর ঘুম, ওজন, শরীর ও মাথা সংক্রান্ত বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। জরিপে তুলে ধরা হয়, মহামারির সময়ে পুরুষের তুলনায় নারীদের সম্পত্তি বেশি বিক্রি করা হয়েছে এবং নারীদের ঘরের কাজ কয়েকগুণ বেড়েছে। ৮৫ শতাংশ শহুরে নারীর গৃহস্থালিতে অংশগ্রহণ ১২৮ শতাংশ বেড়েছে। তাদের করোনা পূর্ব সাংসারিক কাজ ৩ থেকে ৫ ঘণ্টা হলেও মহামারিতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে। এদিকে কাজ হারানোতে ৭৭.৭৮ শতাংশ নারী প্রধান পরিবার অর্থনৈতিক অনটনে পড়েছে।
জরিপে আরও বলা হয়, মহামারিতে শহরের ৭৩.৩ শতাংশ ও গ্রামের ৯২.৫ শতাংশ মানুষ বেকার হয়েছেন। শহরের অস্থায়ী বেকার বাসিন্দারা গ্রামে ফিরলেও কাজ পায়নি। মাসে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করে এমন ৬৮শতাংশের এবং ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করে এমন ৭৩ শতাংশ ব্যক্তির আয় হ্রাস পেয়েছে। করোনায় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেয়েছে মাত্র ২২.৯৭ শতাংশ শহরের মানুষ। শ্রমজীবী মানুষ বেশি আর্থিক সঙ্কটে পড়েছে। অনলাইন শিক্ষার বিষয়ে জরিপে উল্লেখ করা হয়, ৩৪.৪ শতাংশ মা সন্তানকে অনলাইনে ক্লাস করতে সহযোগিতা করে। অন্যদিকে গ্রামে ৭.৩ শতাংশ বাবা টিভির মাধ্যমে সন্তানকে পড়ালেখা করতে সাহায্য করেন। জাবি শিক্ষক নিলোর্মী বলেন, জরিপে ৩৮টি ক্ষেত্রবিশেষে সমস্যা সমাধানের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এবছরের মহামারির ক্ষতি মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষ বিচক্ষণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন