নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটাসহ প্রায় সব জিনিসের এখন দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় সীমার বাইরে। তাই স্বল্প আয়ের মানুষ অর্থাৎ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে টিসিবির পণ্য এখন ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। টিসিবির পণ্য কিনতে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে ট্রাকের সামনে থাকে দীর্ঘ লাইন। যারা কোনও দিন টিসিবি’র এই লাইনে দাঁড়াননি, তারাও এখন লজ্জা-শরমকে দূরে ঠেলে কম দামে টিসিবি’র পণ্য কিনতে সেখানে দঁড়ান। তবে টিসিবির ট্রাক সেলে ক্রেতাদের ভোগান্তির শেষ নেই। ক্রেতার চেয়ে ট্রাকে পণ্যের বরাদ্দ কম থাকায় অনেকে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে অপেক্ষা করেও পণ্য কিনতে পারে না। খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। তারপরও দ্রব্যমূল্যের এমন উধ্বগতির বাজারে টিসিবির পণ্য কিনতে সবাই ট্রাকের লাইনে ছুটে যান।
সাধারণ মানুষের এই ভরসাস্থল টিসিবি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম গতকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। গত ৬ অক্টোবর থেকে চলা টিসিবির ট্রাকসেল ৩তিন বাড়িয়ে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়। সে হিসাবে রাজধানীসহ সারাদেশে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রম গতকাল শেষ হয়েছে। টিসিবির পণ্য বিক্রি বন্ধ করায় সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাজারে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে টিসিবির ট্রাকে কিছুটা সাশ্রয়ী মূল্যে প্রয়োজনীয় কয়েকটা পণ্য পাওয়া যায়। তাই টিসিবির এই ট্রাকসেল কার্যক্রম আবার দ্রুত চালু করার দাবি তাদের।
খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা সালাউদ্দিন বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকটা ভরসা এই টিসিবির পণ্য। বাজার থেকে অনেকটা কমে এখানে পণ্য কিনতে পাওয়া যায়। তেল বাজারে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা লিটার, আর টিসিবির ট্রাকে এ তেল ১১০টায় পাওয়া যায়। চিনি বাজারে ৮০ টাকা কেজি, টিসিবির ট্রাকে তা ৫৫ টাকা, ডাল বাজারে ১৩৫ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত, টিসিবির ট্রাকে তা ৫৫ টাকা কেজি। স্বল্প আয়ের মানুষ অনেকটা কম মূল্যে টিসির পণ্য কিনতে পারত। সেটাও এখন বন্ধ হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে টিসিরি পণ্য বিক্রি কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা প্রয়োজন।
লাইনে পণ্যের জন্য দাঁড়ানো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সাইফুল বলেন, ১১টার দিকে লাইনে দাঁড়িয়েছি। লাইন অনেক লম্বা। তারপরও কিছু করার নেই, বাজার থেকে অনেক কম দামে কয়েকটা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিনই তেল, চিনি, ডালের প্রয়োজন পড়ে, কম কম করে ব্যবহার করলেও এসব লাগবেই। বাজার থেকে অনেক কমে এখানে পাওয়া যায়। তবে এই ট্রাক সেল বন্ধ হয়ে গেলে সংসার চালানো আরও কষ্টকর হয়ে যাবে। সরকারের এ বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির বলেন, বাজারে চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ কার্যক্রম শিগগির আবারো চালু হতে পারে। বাজার পরিস্থিতির ঊধ্র্বগতি বিবেচনায় আগামী মাসে টিসিবির নিত্যপণ্য বিক্রি চালিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে আবারো এ কার্যক্রম চালু হতে পারে।
ট্রাকসেলে সাশ্রয়ী মূল্যে ৪টি পণ্য পাওয়া যায়। পণ্যগুলো হলো- চিনি, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল ও পেঁয়াজ। দেশব্যাপী ৪০০ থেকে ৪৫০ জন ডিলারের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এ বিক্রি কার্যক্রম চলে। সংস্থাটির ট্রাক থেকে প্রতিকেজি চিনি পাওয়া যাবে ৫৫ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি কিনতে পারবেন। প্রতিকেজি মসুর ডাল পাওয়া যাবে ৫৫ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন। পেঁয়াজ পাওয়া যাবে ৩০ টাকা দরে, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি কিনতে পারবেন। এছাড়া সয়াবিন তেল ১০০ টাকা লিটারে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার নিতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন