ভারতের আভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনীতি বাংলাদেশসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সামাজিক-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপর গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে। বিশেষত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও মুসলিম বিদ্বেষ ভারতের অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশি দেশগুলোতে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলছে। বিজেপির সাম্প্রদায়িক বৈষম্যমূলক আভ্যন্তরীন রাজনীতি ভারতকে একটি সংঘাতপূর্ণ অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ রাজনৈতিক মর্যাদা বাতিল করার পর থেকে পাকিস্তান ও চীনের পক্ষ থেকে ঈয চরম প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, ভারত তা অগ্রাহ্য করেছিল। গত বছরের শুরুর দিকে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাত শুরু হলে ভারতের শাসকদল এবং সেনাবাহিনীর তরফ থেকে প্রথমে বেশ উচ্চবাচ্য শোনা গেলেও গালওয়ান ভ্যালির কৌশলগত বিশাল এলাকা চীনাদের কাছে হারানোর পর তারা একেবারেই চুপসে যায়। ভারতীয় রাজনীতিবিদরা চীনা পণ্য বর্জণের যে ঘোষণা দিয়েছিল, তা ছিল মূলত বিজেপি সরকারেরই সিদ্ধান্ত। তবে মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় চীনা পণ্য ও অ্যাপ বর্জনের মধ্য দিয়ে ভারত কতটা লাভবান হবে তা নিয়ে শুরুতেই সংশয় দেখা দিয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারিতে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে তাতে ভারত ও চীনের মত দেশগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা থাকলেও চীনের অর্থনীতিতে তার তেমন কোনো নেতিবাচক প্রভাব দেখা না গেলেও ভারতের অর্থনীতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। চীনের পণ্য ও অ্যাপ বর্জনের ঘোষণা ভারতের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে কিনা তা নিয়ে জরিপ-জল্পনা এখনো চলছে। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ও আধিপত্যবাদী প্রতিবেশী নীতি এখন ‘নিজের নাক কেটে পরের যাত্রাভঙ্গ’ করার মত নীতি হিসেবে পর্যবসিত হতে শুরু করেছে। চীন-পাকিস্তান তো বটেই এমনকি বিশ্বের একমাত্র হিন্দুরাষ্ট্র বলে কথিত নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা বা আফগানিস্তানের সাথেও ভারত নিজের কৌশলগত স্বার্থ ও স্বাভাবিক প্রতিবেশিসুলভ ভূমিকা রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক টিকে থাকার পেছনে মূলত বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের একতরফা মনোভাবের ভূমিকাই বেশি কাজ করেছে। এত কিছুর পরও ভারতীয় শাসকরা এখন বাংলাদেশকে টার্গেট করে রাজনৈতিক উত্তেজনা বিস্তার করতে শুরু করেছে।
আসামে বিজেপি সরকারের নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং মুসলমান ও বাঙ্গালি বিদ্বেষী নীতির বর্বরতা ভোটের রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণ নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র আশাভঙ্গের পর ত্রিপুরা ও আসামে নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করে সেখানে বিজেপির ক্ষমতার রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখার কৌশলের কথা শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। সাম্প্রতিক নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে আদাজল খেয়ে নামা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বপ্নভঙ্গের পর ত্রিপুরায় বিজেপির রাজনীতিতেও ধস নামার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় সেখানে হয়তো একটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। গত মাসে দুর্গাপূজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ত্রিপুরা বিজেপি থেকে নির্বাচিত বিধায়ক আশিস দাস নিজের মাথা ন্যাড়া করে বিজেপি ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ত্রিপুরায় বিজেপি’র অপকর্ম ও দু:শাসনের প্রায়াশ্চিত্ত হিসেবে তিনি নিজের মাথা মুন্ডন করে দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। এরপর ত্রিপুরার অতি নিকটবর্তী বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে দুর্গাপূজার একটি মন্ডপে দেবমূর্তির পায়ের উপর পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার ছবি ও ভিডিও ক্লিপিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এরপরের ঘটনাবলী নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এর জেরে বেশকিছু পূজামন্ডপে হামলা, হিন্দবাড়ি ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা আবারো বাংলাদেশবিরোধী হুমকি-ধামকিতে গলা চড়িয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশেও একটি চিহ্নিত মহল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে মুলত মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়িয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে সহজেই বোঝা যায়, বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ ভারত ও বাংলাদেশে অনেকের সহ্য হচ্ছিল না। তারা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনাকে পুঁজি করে একটি অসহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টি করে ত্রিপুরার মুসলমাদের উপর হিন্দুত্ববাদের খড়গ তুলে দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টির কৌশল কাজে লাগাতে চাইছে বলেই প্রতিয়মান হয়। মধ্যরাতে পূজামন্ডপের ভেতরে দেবিমূর্ডুর পায়ে কোরআন রাখার ঘটনা এবং সেই ঘটনার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার মাঝখানের রহস্যময়তা এবং সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরীর পেছনে একটি আন্ত:দেশীয় রাজনৈতিক কনস্পিরেসির যোগসূত্র উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই।
দূর্গাপূজার পর থেকে ত্রিপুরায় বিজেপি নেতা-কর্মীরা মুসলিম বিদ্বেষী অপপ্রচারা ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে। গত এক সপ্তাহে সেখানে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেখানকার হামলাকারিদের সঠিক পরিচয় পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশে কথিত সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা, হিন্দুদের বাড়ি ও মন্দিরে হামলার ঘটনাকে পুঁজি করেই এই তৎপরতা জোরদার হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ত্রিপুরার রাজপথে উত্তেজিত কর্মীদের সামনে গেরুয়া বস্ত্রধারী বিজেপি সমর্থক একজন বক্তা বাংলাদেশিদের শায়েস্তা করার পাশাপাশি বাংলাদেশি পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। আরেকজন হিন্দুত্ববাদি নেতা বলেছেন, ভারতীয়রা পেচ্ছাব করে দিলেই নাকি বাংলাদেশ ভেসে যাবে! অমিত শাহ, সুব্রামনিয়াম স্বামী বা জি কিষাণ রেড্ডির মত বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এসব বক্তব্য নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেখা গেলেও দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীনরা সব সময়ই ভারতের সাথে বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন। কাশ্মিরিদের সাথে ঐতিহাসিক অঙ্গীকার ভঙ্গ করে কাশ্মিরের স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করে জম্মু ও কাশ্মিরে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ, হাজার হাজার মানুষকে করারুদ্ধ করা এবং অসংখ্য মুসলমান হত্যার ঘটনায় জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তরফ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হলেও সীমান্তের এপারে শতকরা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশ নীরব ভূমিকা পালন করেছে। দেশের সরকার ভারত সরকারের প্রতি সমর্থন দিলেও এ দেশের মানুষের সমর্থন সব সময়ই কাশ্মিরের মজলুম মুসলমানদের পক্ষে ছিল। তবে কাশ্মিরে ভারতীয় বাহিনীর কথিত গণহত্যা, গণগ্রেফতার বা আসামে মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল বা উচ্ছেদ অভিযানের সাম্প্রদায়িকতার আঁচ কখনো বাংলাদেশে লাগেনি। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পেছনে নানাবিধ রাজনৈতিক ব্লেইম গেম এবং পর্দার অন্তরালের রাজনীতি নেপথ্য ভূমিকা রাখলেও এসব ঘটনায় হতাহতদের বেশিরভাগই মুসলমান। ভারতে দিল্লীর দাঙ্গায় সেখানকার পুলিশ বাহিনীকে সহিংস হিন্দুত্ববাদীদের সহায়ক ভূমিকায় দেখা গেলেও বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রেখেছে। এরপরও ভারতের হিন্দুত্ববাদিরা বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য ও হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার মত রাজ্যে ২৫-৩০ ভাগ মুসলমান ভোট যেখানে ক্ষমতার রাজনীতির বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ হিন্দুকে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সেন্টিমেন্টের দ্বারা চালিত করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তারা তাই করতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। কুমিল্লায় পূজামন্ডপের ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রধান নেতা শুভেন্দু অধিকারির বক্তব্য ও ত্রিপুরায় সংঘ পরিবারের রাজনৈতিক তৎপরতা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশে কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনাকে পুঁজি করে আগামী নির্বাচনে নিজ আসনে তিনগুণ বেশি ভোটে জেতার স্বপ্ন দেখছেন শুভেন্দু অধিকারি।
বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতায় আসে। সেই থেকে মোদি সরকার একদিকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে সুসম্পর্কের ফর্মান জারি করছে, অন্যদিকে মাঝে মধ্যেই বিজেপি নেতারা বাংলাদেশ নিয়ে ঔদ্ধত্বপূর্ণ ও হিংসাত্মক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ বিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য বিজেপি নেতা সুব্রামনিয়াম স্বামী বাংলাদেশে একটা বিশেষ কুখ্যাতি লাভ করেছেন। তিনি মাঝে মধ্যেই উদ্ভট সব তত্ত্ব হাজির করেন, যেখানে বলা হয় বাংলাদেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল হিন্দু মুসলমান একসাথে থাকার জন্য, তাঁর মতে, সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে বাংলাদেশ আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে থাকার দরকার নেই, বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে ভারতে চলে যাচ্ছে, বাংলাদেশ সরকার যদি এটা বন্ধ করতে না পারে তাহলে ভারতের উচিৎ বাংলাদেশ অথবা এক-তৃতীয়াংশ ভূমি দখল করে নেয়া! এভাবে বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতার বক্তব্যে বাংলাদেশ নিয়ে হিন্দুত্ববাদীদের ষড়যন্ত্রমূলক থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। বিজেপি নেতা অমিত শাহ ও জি কিষাণ রেড্ডিদের বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যগুলো যে মিথ্যা ও অন্তসারশূন্য তা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। বিজেপি সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি গত বছর হায়দারাবাদে নাগরিকত্ব সংশোধনী অ্যাক্ট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি দেয়া হলে অর্ধেক বাংলাদেশ খালি হয়ে যাবে।’ সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি, সামাজিক উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন সূচকের তুলনামূলক পরিসংখ্যানে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের সুবিধাজনক অবস্থানের চিত্র বেরিয়ে আসছে। ভারতীয় গণমাধ্যমেও এসব চিত্র প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের গার্মেন্টস সেক্টরসহ বিভিন্ন সেক্টরে লাখ লাখ ভারতীয় অবৈধভাবে কাজ করে যে টাকা ভারতে পাঠাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে ভারতের রেমিটেন্স আয়ের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। আর রফতানির বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত নিজের অনুকূলে বাংলাদেশে বছরে ৭বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করছে। অবৈধভাবে বা চোরাচালানের মাধ্যমে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে পণ্য রফতানির পরিমান যে কত তার সঠিক হিসাব কারো হাতেই নেই। স্বল্প বেতনের চাকরির জন্য বাংলাদেশি তরুণরা যখন লাখ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া- মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমাচ্ছে, তখন অন্তত ৫ লাখ ভারতীয় অবৈধভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ সহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছে। প্রথমত: কোনো প্রকার নিবন্ধন বা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই লাখ লাখ বিদেশি কর্মী কাজ করার বাস্তবতা দেশের জন্য হুমকি ও ঝুঁকিপূর্ণ, দ্বিতীয়ত: দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেলেও এ থেকে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চমৎকার উদাহরণ বাংলাদেশ। এ দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হলে কৃত্রিম সংকট বা খবর সৃষ্টি করে হলেও হিন্দুদের উপর নির্যাতনের ঘটনাগুলোকে ব্যবহার করে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষী রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারি রাখঢাক না রেখে সেই সুযোগের কথাই গণমাধ্যমে বলে দিয়েছেন। যেখানে লাখ লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে দেশে বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠাচ্ছে, সেখানে বিজেপি নেতা রেড্ডি বললেন, তারা নাগরিকত্ব দিলে নাকি বাংলাদেশ অর্ধেক খালি হয়ে যাবে। তবে নতুন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনসহ ইতিমধ্যে ভারত বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশের হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সে কারণেও অনেক হিন্দু বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে স্থায়ী বাসিন্দা হতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এমনকি দেশের অনেক বনেদী হিন্দু বাংলাদেশ থেকে শত শত কোটি টাকা ভারতে পাচার করার অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে। পক্ষান্তরে ভারত থেকে এককভাবে কোনো মুসলমান বা হিন্দুর বাংলাদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের উদাহরণ খুঁজে পাওয়া দুর্লভ। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ’র ইকোনমিক আউটলুকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, গড় মাথাপিছু আয় এবং বিভিন্ন সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে বেশ এগিয়ে আছে। এসব তথ্য-উপাত্ত না দেখেই তারা বাংলাদেশ থেকে লাখ লাখ মানুষের ভারতে চলে যাওয়ার ভিত্তিহীন তথ্য হাজির করে চলেছেন। প্রকৃত তথ্য উপস্থাপন করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। দেশের শান্তিপ্রিয় সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায় এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমান যেন দুই দেশের ক্ষমতার রাজনীতির ঢাল হয়ে রক্তাক্ত না হন, তার আইনগত সুরক্ষা ও রাজনৈতিক অবস্থানের অস্বচ্ছতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে দেশে তথাকথিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধিতার নামে এক শ্রেণীর মানুষ সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা ছড়াচ্ছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে উত্তেজিত করতে রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করাসহ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেই সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের নেপথ্য শক্তিকে খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন