বাদশাহ আবরাহা যে বছর মক্কায় আক্রমণ করে সে বছরই সমগ্র পৃথিবীর রহমত হিসেব মুহাম্মাদ সা. জন্ম গ্রহণ করেন। অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে বাদশা আবরাহা মক্কায় আক্রমণ করে মর্হারাম মাসে এর পঞ্চাশদিন পর রবিউল আওয়াল মাসের বার তারিখে রাসূল সা. জন্ম গ্রহণ করেন। রাসূল সা. এর জন্মের পূর্বে এমন অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে যা নবী আসার ভূীমকা বা পূর্বাভাস বলা হয় আরবীতে তাকে ‘আরহাসাত’ বলে। রাসূল সা. আসার পূর্বে যেসকল অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে প্রসিদ্ধ ঘটনা হলো এ বাদশাহ আবরাহার কর্তৃক মক্কায় আক্রমণ। যুনুয়াস একজন ইহুদী ছিল সে ইয়ামানের নজরানে হামলা করলো এবং তাদেরকে ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করতে বলল, নজরানবাসী খ্রিষ্টান ছিল তারা ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করেনি তাই যুনুয়াস বিশ হাজার নজরানবাসীকে হত্যা করে। তাদের হত্যা থেকে রেহাই পায় দাওস যু-সালাবান। সে রোমের সম্রাটের সাহায্য চায় আর রোমের সম্রাট নাজাশীকে সাহায্য করতে বলে।
আবিসিনীয় নাজাশী ইয়ামানের নাজরান দখল করার জন্য আরিয়াত ও আবরাহাকে প্রেরণ করে। তারা এসে নাজরান দখল করে এবং ইয়ামানের শাসন শুরু করে। তখন ইয়ামানের শাসক ছিল আরিয়াতা পরে হাবশা নিয়ে হাবশী আবরাহা ও আরিয়াতের মধ্যে কোন্দল হয়। এরপর তারা আরিয়াত ও আবরাহা সম্মুখ যুদ্ধে আবতরণ হয় এবং আরিয়াত পরাজিত ও আবরাহ কর্তৃক নিহত হয়। এরপর ইয়ামানের শাসক হয় আবরাহা। নাজাশী সব শুনে রাগান্বিত হয় এবং বলে আমার নিয়োগকৃত সেনাপতিকে হত্যার প্রতিশোধ নিবো এবং শপথ নিলেন যে, আমি তার শাসিত ইয়ামনকে পদদলিত করবো এবং তাকে মাথা মুন্ডিয়ে অপমানিত করবো। একথা আবরাহা শুনে নিজেই মাথা মুন্ডান এবং ইয়ামানের একব্যাগ ভর্তি মাটি নাজাশীর কাছে প্রেরণ করেন। আর চিঠি লিখেন যে, আমিও অপনার গোলাম আপনার কথা শুনেই আমি মাথা মুন্ডালাম আর আপনার শপথ পুরণ করার জন্য মাটি পাঠালাম তা পায়েদলিত করে শপথ পুরুন করুন। তখন নাজাশী তার প্রতি প্রিত হয়ে তাকে ইয়ামান শাসন করার জন্য বলেন। তখন থেকে আবরাহা ইয়ামন শাসন করছে। সেই আবরাহা একটি গীর্জা নির্মাণ করলো। ইয়ামানের সানা নগরীতে নাম দিল ‘কুলায়স’। পবিত্র কাবা শরীফের বিকল্প হিসেবে এ গীর্জাকে এমনভাবে তৈরী করেছে যার সমতুল্য কোন ঘর ছিল না। এ গীর্জা এত উচুঁ ছিল যে এর ওপরে উঠে সে এডেন বন্দরকে দেখার অভিলাষী ছিল। গীর্জার অদূরে অবস্থিত রাণী বিলকিসের প্রাচীন প্রসাদ থেকে রকমারি কারুকার্য খচিত ও স্বর্ণের নকশা আংকিত শ্বেত মর্মর পাথর আনিয়ে এতে স্থাপন করা হয়। হাতির দাঁত ও মূল্যবান আবলূস কাঠের তৈরী অনেক মঞ্চ ও বেদী এবং স্বর্ণের তৈরী ক্রুশ সাজানো হয়। ইয়ামানবসীকে তাতে স্বেচ্ছা শ্রমে কাজ করতে বাধ্য করে। (রওযুল উনুফ, প্রথম খন্ড ৬৩) এ গীর্জা নির্মাণ করে নাজাশীকে চিঠি লিখলো যে, আমি আপনার জন্য এমন গীর্জা নির্মাণ করেছি যা ইতিপূর্বে কেউ নির্মাণ করতে পারেনি। আর আমি মক্কার হজ্জ কে এখানে না আনা পর্যন্ত ক্ষান্ত হবো না। এ চিঠি আরবদের মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তখন তারা ক্রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বনূ কিনানার অন্তর্ভূক্ত বনু ফুকায়ম এর এক ব্যক্তি অতি বেশি ক্রদ্ধ হয়। সে সন্তর্পনে বেরিয়ে পড়ে এবং আবরাহার নির্মিত ‘কুলায়স’ গীর্জায় গিয়ে পায়খানা করে। এটি বুঝালো যে, এ ঘর মক্কার বিপরীতে গ্রহন যোগ্য নয়। এরপর আবরাহা জানতে পারে যে, এ কাজ আরবের এক ব্যক্তি করেছে। তখন সে সংকল্প করে যে মক্কা হামলা করবে এবং ধ্বংস করবে। সে মক্কার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হলো। সাথে আবেসিনিয়ার সৈন্য একদল হাতী। তবে প্রতিমধ্যে যূ-নফর, ও খাসআম গোত্র তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলো যাতে সে মক্কা হামলা করতে না পারে তবে তারা পরাজিত হয়েছে। এরপর আবরাহার সাথে তায়েফের অধিবাসী বনূ সাকীফ গোত্র একত্রিত হয়েছে যাতে তাদের ‘আল্লাত’ নামিয় উপাসনা না ভাঙ্গে। তারা আবরাহাকে পথ দেখিয়ে মক্কার দিকে পথ চলল। যে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে হলো ‘আবূ রিগাল’ তবে সে পথি মধ্যে মৃত্যু বরণ করে আর তার কবরে পরবর্তীতে আরবরা পাথর নিক্ষেপ করতো এখনো ‘মুগাম্মাসে’ যে কবরটিতে লোকজন পাথর নিক্ষেপ করে থাকে সেটি আবূ রিগালেরই কবর। আবরাহা মুগাম্মাসে এসে থামলো এবং আসওয়াদ ইবনে মাকসুদ’ কে পাঠালো সে ফিরে আসার সময় তিহামা উপত্যকার চরণভূমিতে কুরায়েশ ও অন্যান্য গোত্রের যে সব গবাদিপশু তা ধরে নিয়ে আসলে তাতে আবদুল মুত্তালিব রাসূল সা. এর দাদার দু’শ উটও ছিল। তখন আব্দুল মুত্তালিব কুরায়েশদের র্সদার ছিল। এতে কুরায়েশ সহ অন্যান্য গোত্র কিনানা ও হুযায়ল আবরাহার সাথে যুদ্ধ করতে চেয়েছে তবে তাদের অক্ষমতায় পারেনি। পর আবরাহা মক্কায় হুনাতা হিময়ারীকে পাঠায় এ বলে যে, তুমি মক্কার নেতার কাছে যাবে তাকে বলবে রাজা মক্কায় যুদ্ধ করতে আসেনি তবে শুধু কাবা ঘর ধ্বংস করে চলে যাবে। (চলবে)
লেখক : পরিচালক ইসলাহ বাংলাদেশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন