উত্তর ঃ কোন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয়,আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কেন পড়েন? কেন এত কষ্ট স্বীকার করেন? তখন হয়তো উত্তর দিবেন, আল্লাহর আদেশ পালনার্থে অথবা কেউ বলবেন, বেহেশত পাওয়ার আশায়। কিন্তু একমাত্র বুদ্ধিমান ব্যক্তিই বলবে, আমার যাবতীয় ইবাদত - বন্দেগী এবং কষ্ট স্বীকারের পিছনে একটি মাত্র উদ্দেশ্য, আর তা হল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। কেননা, হাদীস শরীফে এসেছে- “যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে, তার জন্য সবই”। আর বেহেশত নিজেই ঐ সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে পাওয়ার আশায় মহান প্রভূর নিকট প্রার্থনা করতে থাকে। সেই বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের অন্যতম ঐ রোযাদার, যে রোযা রেখে স্বীয় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ হতে বিরত রাখে। যেহেতু শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের সাথে রোযার সর্ম্পক রয়েছে।
মুখের রোয়া : রোযা অবস্থায় কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী সর্র্র্র্র্র্র্বপ্রকার কথাবার্তা থেকে রসনাকে সংযত রেখে আল্লাহর যিকির-আযকার, দুরুদ-সালাম, কুরআন তেলাওয়াতে লিপ্ত থাকা। কারণ, মিথ্যা কথা, পরনিন্দা, মিথ্যা শপথ প্রভৃতি রোযাকে নষ্ট করে। হাদীস শরীফে এসেছে- একদা দু’জন রোযাদার রমণী ভীষণ পিপাসায় কাতর হয়ে মৃত্যুর শংকায় দরবারে রিসালতে রোযার ভঙ্গের অনুমতি প্রার্থনা করেছিল। নবীজি তাদের কাছে পানপাত্র প্রেরণ পূর্বক তথায় বমি করার নির্দেশ দিলেন। উভয়ের গলা থেকে জমাট রক্তপিন্ড বের হয়ে এল। এতে দর্শকগণ ভীত হয়ে কারণ জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, মহান আল্লাহ যা হালাল করেছেন, তা দ্বারা তারা রোযা রেখেছিল কিন্তু যা হারাম করেছেন, তা দ্বারা রোযা ভঙ্গ করেছে। অর্থাৎ পরনিন্দায় লিপ্ত ছিল। তোমরা যে রক্তপিন্ড দেখছ তা মানুষের মাংস। অপরের নিন্দা করার ফলে ঐ নিন্দা তাদের জন্য মানুষের গোশত ভক্ষণ সদৃশ্য হয়েছে।
চোখের রোযা: রোযাদারের দৃষ্টি অসামাজিক ও অশ্লীল দৃশ্য দেখা থেকে বিরত থেকে সবর্দা ভাল ও বৈধ কাজ বা বস্তুর প্রতি দৃষ্টি রাখা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- শয়তানের তীরগুলোর মধ্যে চোখের দৃষ্টি একটি মারাত্মক বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি দৃষ্টি দেয়া থেকে চোখের দৃষ্টি সংযত রাখে, তাকে ঈমানের এমন মাধুর্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করানো হবে, যার মাধুর্য সে নিজ হৃদয়ে অনুভব করবে।
কানের রোযা : রোযাদার অবৈধ ও অশ্লীল কথাবার্তা শ্রবণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা । কারণ, তা বলা যেমন অপরাধ, শ্রবণ করাও অপরাধ।
হাতের রোযা : রোযাদার স্বীয় হাত সর্বদা শরীয়ত সম্মত কর্মকান্ডে ব্যবহার করা এবং অবৈধ কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখা।
পায়ের রোযা : শরীয়ত বিরোধী কাজ তথা অশ্লীল ও পাপাচারে গমন থেকে বিরত থেকে পূণ্যময় কাজের প্রতি এগিয়ে আসা।
একজন প্রকৃত রোযাদার রোযা রাখার দরুণ তার থেকে পশুসুলভ স্বভাব লোপ পায় এবং ফেরেস্তা সুলভ স্বভাব প্রধান্য বিস্তার করে। এজন্য মহান রাব্বুল ইজ্জত হাদীসে কুদ্সীতে ইরশাদ করেন : “ রোযা আমার জন্য , আমি নিজেই তার প্রতিদান।” রোযা একটি ঢাল স্বরূপ। (সৈনিকের ডান হাতে থাকে তরবারী বা অস্ত্র আর বাম হাতে থাকে লোহার তৈরী ঢাল। ডান হাতের অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে আর বাম হাতের ঢাল দিয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণ ঠেকায়। সৈনিক যেভাবে বাম হাতের ঢাল দিয়ে শত্রু পক্ষের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করে, ঠিক তেমনি রোযা দুনিয়াতে জ্বিন ও ইনসান শয়তানের প্ররোচনায় শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া থেকে রোযাদারকে রক্ষা করে এবং পরকালে জাহান্নামের ভয়ানক আযাব থেকে রক্ষা করবে।) আরো ইরশাদ হচ্ছে- যখন তোমাদের কারও জন্য রোযার দিন আসে, সে যেন কোন মন্দ বাক্য উচ্চারণ না করে এবং চিৎকার না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সাথে ঝগড়া করে, তখন সে যেন বলে, “আমি রোযাদার”। আর নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধি অপেক্ষা উত্তম। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে, যা সে উপভোগ করে যখন সে ইফতার করে এবং যখন প্রভুর দীদার লাভ করবে। (সহিহ বুখারী; সহিহ মুসলিম, হাদীসে কুদসী, সংকলক:আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী, ইফা, পৃ:১৩৫ )
আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থেকে রোযা পালন করে, তার রোযা শুধু নি¯প্রাণ দেহসদৃশ্য মৃত । হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- বহু রোযাদার আছে, শুধু ক্ষুধা-তৃষ্ণার ক্লেশ ভোগ বৈ কিছুই নয়। তাদের রোযা দ্বারা কোন উপকার আসে না। (সুনানে দারমী; মিমকাত,পৃ;১৭৭; ইমাম গাজ্জালী, কিমিয়ায়ে সাআদাত, খন্ড-১)
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম। আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন