পূর্ব প্রকাশিতের পর
উত্তর : প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ইবাদতই আল্লাহর জন্য। কিন্তু মহান আল্লাহর একমাত্র রোযারই প্রতিদান স্বীয় কুদরতি হস্ত মুবারকে দান করবেন। এর কারণ কী? এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বিজ্ঞ মুফাস্সিরগণ বলেন-
১. প্রত্যেক ইবাতের মধ্যে লৌকিকতা রয়েছে, কিন্তু রোযার মধ্যে তা নেই। ২. অন্যান্য সকল ইবাদত সর্ম্পকে মানুষ জানতে পারে, কিন্তু মানুষ যাকে রোযাদার বলে, সে প্রকৃতপক্ষে রোযা রেখেছে কিনা তা একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত কেউ জানে না। ৩. আল্লাহ যেমন পানাহার থেকে মুক্ত, ঠিক তেমনি রোযাদারও দিনের বেলায় পানাহার থেকে মুক্ত থাকে বিধায় , বান্দা কিছুক্ষণের জন্য আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়। এজন্য মহান আল্লাহ বলেন, রোযার প্রতিদান অন্য কিছু দিলে যথাযথ হবে না , এর একমাত্র প্রতিদান হচ্ছে আমি প্রভুর দীদার তথা দীদারে ইলাহী।
আর যখন রমজান মাসের প্রথম দিন আসে তখন আরশের নিচে জান্নাতের বৃক্ষের পাতায় পাতায় বেহেস্তের হুরদের উপর দিয়ে এক অপূর্ব রহমতের বাতাশ প্রবাহিত হয়। এ বাতাশ অনুভব করে তারা প্রার্থনা করে বলে হে প্রভু! আপনি আপনার রোযাদার বান্দদেরকে আমাদের স্বামী বানিয়ে দিন, যেন তাদের দ্বারা আমাদের চক্ষু শীতল হয় এবং তাদের চক্ষু আমাদের দ্বারা শীতল হয়। মহান আল্লাহর আহবায়ক জান্নাতের অধ্যক্ষ রিদুয়ানকে ডেকে বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের অন্তর্ভূক্ত রোযাদার ও ইবাদতকারীদের জন্য জান্নাতকে সজ্জিত করো। আর তাদের মাস অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত উহার দরজা বন্ধ করো না। অত:পর দ্বিতীয় দিন জাহান্নামের অধ্যক্ষ মালেককে ওহীর মাধ্যমে বলেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের অন্তর্ভূক্ত রোযাদার ও ইবাদতকারীদের জন্য দোযখগুলির দরজা বন্ধ করে দাও এবং তাদের এই মাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত উহা খুলিও না। তৃতীয় দিন জিবরাঈলকে বলা হয়, বিদ্্েরাহী শয়তান ও উদ্ধত জিনগুলিকে শিকলে বেঁধে রাখতে, যেন তারা আল্লাহর রোযাদার বান্দাদের রোযা নষ্ট করতে না পারে। আর যখন লাইলাতুল কদর আসে। পরদিন মহান আল্লাহ জিবরাঈল ও ফেরেস্তাদের বলেন, আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি, আমি নিশ্চয় রমজান মাসের রোযাদারদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, শুধু সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে মদ্যপানে আসক্ত, অন্যায়ভাবে কর আদায়কারী, জাদুকর, দাবা খেলোয়াড়, বংশীবাদক, পিতা-মাতার অবাধ্য।
মাহে রমযান ধৈয্য, সহনশীলতা ও রিয্ক বৃদ্ধির মাস। এ মাসের প্রতি সম্মান প্র্রর্দশন প্রত্যেক মুসলমানের উপর কর্তব্য। নবীজি ইরশাদ করেন- “যেই পর্যন্ত আমার উম¥ত মাাহে রমযানের ইজ্জত অক্ষুন্ন রাখবে, সেই পর্র্যন্ত তারা অপদস্থ হবে না।” যারা পার্থিব জগতে যথাযথ সম্মান করবে, কিয়ামত দিবসে এই রমযান তাদের হাত ধরে মহান আল্লাহর সামনে নিয়ে সম্মানের অপূর্ব মুকুট পরিধান করাবেন। এ মাসকে সম্মান প্রদর্শনের কারণে এক অগ্নিপুজারীর জান্নাত নসীব হয়েছে। বুখারা শহরে এক অগ্নিপুজারী বাস করত। একদিন অগ্নিপুজারী তার ছেলেকে নিয়ে রমযান মাসে মুসলমানদের বাজার দিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় তার ছেলে কোন খাবার বস্তু থাচ্ছিল। অগ্নিপুজারী এটি দেখে তার ছেলের গালে এক চড় দিয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, মাহে রমযানে মুসলমাসদের বাজারে খেতে লজ্জাবোধ করা উচিত। ছেলে উত্তর দিল, আব্বাজান! আপনিও তো রমযান মাসে খাবার গ্রহন করেন। পিতা জবাবে বলল, আমি খাই ঠিক কিন্তু ঘরে, মানুষের সামনে খাইনা এবং এ মাসের সম্মান ও পবিত্রতা নষ্ট করি না। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তিটি যখন মারা গেল, জনৈক বযুর্গ ব্যক্তি স্বপ্নে ঐ লোকটিকে জান্নাতে দেখতে পেলেন। তিনি আশ্চর্য্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তো অগ্নিপূজারী ছিলে জান্নাতে কিভাবে এসেছো? প্রতিত্তোরে সে বলল, বাস্তবিকই আমি অগ্নিপূজারী ছিলাম। কিন্তু যখন আমার মৃত্যু সন্নিকট হল তখন মাহে রমযানকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ আমাকে ঈমানী দৌলত দান করেছেন এবং রমযান শরীফের সম্মানের ফলশ্রুতিতে এই জান্নাত আমার আবাসস্থল হয়েছে । সত্যিই রমযানকে যে ইজ্জত করবে, সে অবশ্যই সৌভাগ্যবান, অসংখ্য নিয়ামতের অধিকারী হবে। অতএব আসুন ! আমরা সকলে মাহে রমযানের সম্মানার্থে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকি এবং দীদারে ইলাহীর উদ্দেশ্যে রোযা পালন করি। আল্লাহ সবাইকে তওফিক দান করুন, আমীন!
উত্তর দিচ্ছেন : মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম। আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন