জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী স্থানচ্যুত হয়ে নগরে আসছে। তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বস্তিতে বসবাস করছেন। এ বিবেচনায় বস্তিবাসীরা জলবায়ু রিফিউজি। তাদের মাথাপিছু আয়ও অনেক কম। এমনকি দেশে শিল্পায়ন হলেও বস্তিবাসী বা নিম্নআয়ের মানুষদের সেখানে উপেক্ষা করা হয়।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘জলবায়ু সংকট: নগর দরিদ্র-জীবনমান উন্নয়নে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় পরিবেশবাদীরা এসব কথা বলেন। বারসিক (বিএআরসিআইকে), পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওর (কাপ) যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, এতো বড় বড় সম্মেলন হয়, আমরা কী পাচ্ছি। যারা এসব আয়োজন করে তারাই সেখানে থাকেন। তারা তাদের বিষয়ে সেখানে কথা বলেন। বেশিরভাগই তাদের প্রতিনিধিরা থাকেন, সেখানে আমাদের কথা বলার সুযোগ কম।
অধ্যাপক সামসুল ওয়ারেশ বলেন, সংবিধানে বলা আছে সব মানুষের অধিকার সমান। সংবিধান দিয়ে দেশ চলে কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয় না কেন? দেশের একভাগ লোকের কাছে ৮৫ ভাগ টাকা, বাকিদের কাছে মাত্র ১৫ ভাগ। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিভিন্ন দেশেও একই অবস্থা। আমাদের মাথাপিছু আয়ের যে ব্যবধান রয়েছে তার একটা ভারসাম্যে আসা দরকার। আমাদের দেশে যেভাবে শিল্পায়ন হচ্ছে সেখানে বস্তিবাসী বা নিম্নআয়ের মানুষদের উপেক্ষা করা হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন সরকার বলেন, শোষিত জনগণের দল ক্ষমতায় কিন্তু দরিদ্ররা কেন শোষিত হচ্ছে। নগর পরিকল্পনায় দরিদ্র মানুষের জন্য সঠিক পরিকল্পনা নেই। এ ধরনের পরিকল্পনা নগরের কাজে আসবে কতটুকু তাও ভেবে দেখা দরকার। আমরা যারা নগরে আছি- গ্রামে নগরের সুবিধা পেলে হয়তো এখানে থাকতাম না। সরকার ‘আমার গ্রাম আমার শহরের’ যে পরিকল্পনা করেছে সেটাকে সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেন, কার্বন নির্গমন কম করাটা হল মূল বিষয়। এসব নিয়ে বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি বিশ্ব সম্প্রদায়।
কোয়ালিশন ফর দ্যা আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সানইয়াত বলেন, বস্তিবাসীরা জলবায়ু রিফিউজি। তাই যারা জলবায়ুর উপর প্রভাব ফেলছে তাদেরকে বস্তিবাসীদের দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের জন্য দ্রুত কিছু করা উচিত সরকারকে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে পবার সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, আমাদের সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমাদের দেশে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলো ভারসাম্যের সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে চান না। তারা এসব নিয়ে আলোচনাও করেন না। তাদের কখনো বস্তিবাসী বা নিম্নআয়ের মানুষকে নিয়ে বসতে দেখা যায় না। তাদের জন্য ঠিকই প্লট দিচ্ছে সরকার, অথচ বস্তিবাসী বা নিম্নআয়ের জন্য তা বরাদ্দ থাকে না।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী বাস্তুহারালীগের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ হাওলাদার, বাংলাদেশ গ্রিনরুফ মুভমেন্টের সভাপতি প্রকৌশলী গোলাম হায়দার, কাপ সহসভাপতি মো. মাহবুবুল হক, বারসিকের পাভেল পার্থ প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন