চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থেকে লালদীঘি পর্যন্ত ছয় নম্বর রুটের বাসের ভাড়া ছিলো নয় টাকা। এখন বিআরটিএর তালিকায় ওই ভাড়া ২০ টাকা। কাটগড় মোড় থেকে ইপিজেড মোড় পর্যন্ত ভাড়া ছিল পাঁচ টাকা। তালিকায় এখন তা ১৪ টাকা। গুরুত্বপূর্ণ এ রুটের মতো গণপরিবহনে নগরীর প্রায় প্রতিটি রুটে এমন অতিরিক্ত ভাড়ার তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বিআরটিএর এমন আজগুবি ‘ভাড়ার চার্ট’ নিয়ে নগরজুড়ে চলছে তুলকালাম কাণ্ড।
বাস্তবতা বিবর্জিত এ তালিকা ধরে ভাড়া আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে গণপরিবহন শ্রমিকদের প্রতিনিয়তই ঘটছে হাতাহাতি মারামারি। অতিরিক্ত ভাড়া না দেয়ায় বয়োবৃদ্ধ যাত্রীকে বাস থেকে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। তাদের আয়ের বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে যাতায়াত খাতে। যাত্রীরা বলছেন, টেবিলে বসে এমন ভাড়ার তালিকা তৈরি করেছে বিআরটিএ। তাতে নগরজুড়ে চরম নৈরাজ্য চলছে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন ইনকিলাবকে বলেন, বাস্তবতা বিবর্জিত এমন ভাড়ার তালিকার মাধ্যমে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ গণপরিবহন মালিকদের স্বার্থ সুরক্ষা করেছে। আর সাধারণ জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিত হয়েছে। এ ধরনের গোজামিলের তালিকা অবিলম্বে সংশোধন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এমন তালিকা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাত্রীদের কাছ থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায় রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আগের ভাড়ার সাথে সমন্বয় করেই ভাড়ার তালিকা তৈরি করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চরম অন্যায়। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে পরিবহন মালিকদের পকেট ভরানোর খেলা বন্ধ করতে হবে। একচেটিয়া ভাবে মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরের আলাদা আলাদা ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।
জ¦ালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত ৭ নভেম্বর গণপরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির গ্যাজেট প্রকাশ করে সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২৭ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৮ টাকা। তবে সরকারি ঘোষণার আগেই চট্টগ্রাম নগরীর গণপরিবহনগুলোতে উঠানামা ১০ টাকা এবং ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে আদায় করা শুরু হয়। গ্যাজেট প্রকাশের পর বিআরটিএর পক্ষ থেকে গণপরিবহন ভাড়ার তালিকা বাস-মিনিবাসে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আর তখনই বাধে বিপত্তি। কারণ বিআরটিএর ওই তালিকায় সর্বোচ্চ ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বেড়ে যায়।
অতিরিক্ত এ ভাড়া আদায় করতে গিয়ে যাত্রীদের সাথে কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি এমনকি মারামারির ঘটনাও ঘটছে। বিআরটিএর তালিকা প্রকাশের আগে ইপিজেড থেকে লালদীঘির পাড় পর্যন্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু তালিকায় ভাড়া বাড়িয়ে ২০ টাকা করে দেয়া হয়। লালদীঘির পাড় থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত বাস-মিনিবাসের ভাড়া ছিল ৫ টাকা। বিআরটিএর তালিকায় এ ভাড়া এখন ৮ টাকা। তবে আদায় করা হচ্ছে ১০ টাকা।
নগরীতে চলাচলকারী কাউন্টার সার্ভিসের বাস মেট্রো প্রভাতীতে ইপিজেড থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত আগে ভাড়া ছিল ১৬ টাকা। এখন দুই টাকা বাড়িয়ে তা ১৮ টাকা করা হয়েছে। প্রতি দূরত্বে দুই টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অথচ সাধারণ বাস-মিনিবাসে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তার কয়েকগুণ বেশি। এ তালিকার দোহাই দিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে বাস চালক ও সহকারীরা। অনেক যাত্রী তালিকা দেখে এবং পরিবহন শ্রমিকদের চাপাচাপিতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। যাত্রীরা এখন কার্যত পরিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।
নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসে লাগানো ভাড়ার এ নতুন তালিকায় স্বাক্ষর করেছেন বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থী। এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোন মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিআরটিএর সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান বলেন, আগের ভাড়ার সাথে সমন্বয় করে বর্ধিত ভাড়ার এ তালিকা করা হয়েছে। তবে বাস্তবতার সাথে ভাড়ার এত তারতম্য হবে সেটা আমরা বুঝতে পারিনি। তিনি চট্টগ্রামে নতুন এসেছেন জানিয়ে বলেন, আমরা খুব শীঘ্রই যাচাই-বাছাই করে নতুন ভাড়ার চার্ট প্রণয়ন করব।
পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের গণপরিবহন ভাড়া অভিন্ন। ঢাকায় কয়েক দফা বর্ধিত ভাড়া আদায় করা গেলেও চট্টগ্রামে তা আদায় করা যায়নি। ফলে কাগজে-কলমে থাকা আগের ভাড়ার সাথে বর্ধিত ভাড়া যোগ হওয়ায় ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে মনে হচ্ছে। তবে যাত্রীরা এত বেশি ভাড়া দিচ্ছেন না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন