শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দূরপাল্লার এসি বাসে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য

এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ কঠিন : বিআরটিএ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল | প্রকাশের সময় : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জ্বালানি তেলের দাম সাম্প্রতিক সময়ে দুই দফায় বাড়ানোর আগে এসি বাসের ভাড়ায় কিছুটা লাগাম থাকলেও এখন তা সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এর বড় কারণ সরকার এ বাসগুলোর ভাড়া নির্ধারণ করে না। তাই মালিকপক্ষ নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। ফলে বাসের ভাড়া নিয়ে চলছে চরম নৈরাজ্য। বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে টিকিট কাউন্টারের লোকদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, একরকম জিম্মি করেই বেশি ভাড়া আদায় করছে বাস কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের অনেকেইে চরম ক্ষোভ আর হতাশায় বলছেন, এসি পরিবহণের ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করার মতো কেউই নেই! তবে বিআরটিএ বলছে, এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া কঠিন। এখানে নিয়ম-কানুন আরোপ করতে গেলে অনেক পরিবহন সেবা প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবে না।
জানা যায়, দুই দফা বাড়ানোর পর ডিজেলের দাম লিটারে পাঁচ টাকা কমিয়েছে সরকার। সর্বশেষ ৩১ আগস্ট বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ পয়সা কমিয়ে দূরপাল্লায় ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়েছে। আর মহানগরে ২ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ডিজেল চালিত বাসের ক্ষেত্রে এ ভাড়া প্রযোজ্য। কিন্তু এ পাঁচ পয়সা কমায় বাস ভাড়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি, যাত্রীদেরও তেমন লাভ হয়নি। বরং সরকার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আয় বাড়ার একটা সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করা সব এসি বাসই ডিজেল চালিত। ঢাকা মহানগরে এসি বাস হাতেগোনা কিছু চললেও সবচেয়ে বেশি চলে দূরপাল্লার পথে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিলাসবহুল বাস চলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেট, রংপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, খুলনা ও বরিশাল রুটে। এছাড়া, মধ্যমমানের এসিবাসগুলো দেশের প্রায় সব জেলা পর্যায়েই চলাচল করে।

তবে এসব বাসে যে হারে ভাড়া নেয়া হয় তা সরকার নির্ধারিত নয়। মালিকরা তাদের বাসের সেবা ও দামের ওপর বিবেচনা করে নিজেরাই ভাড়া নির্ধারণ করে তা আদায় করে থাকে। বাস কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে আছেন অভিযোগ করে ভাড়া ঠিক করে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন যাত্রীদের অনেকে।

যদিও ভিন্ন দাবি এসি বাস কোম্পানিগুলোর। তাদের মতে, দুই দফায় তেলের দাম বাড়ার পর এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে তাদের। আগের মতো যাত্রী না পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলেও জানায় তারা। আর এখানে ছাড় দেয়ার কথা বললেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ এর পরিচালক (রোড সেফটি) মাহবুব-ই-রব্বানী। তিনি বলেন, এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া কঠিন। এসি বাস সবার জন্য না, সক্ষম মানুষদের জন্য। এটা বিশেষ সেবা। এখানে লাভ খুবই কম হয় মালিকদের। এখানে নিয়ম-কানুন আরোপ করতে গেলে অনেক পরিবহন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টিকতে পারবে না।

এদিকে সারা দেশে এসি বাসের সংখ্যার কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি বিআরটিএ থেকে। তবে বাংলাদেশ-বাস ট্রাক ওনার্স এসোসিয়েশনের হিসেবে দূরপাল্লার রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস আছে পাঁচ শতাধিকের মতো।
সরেজমিনে জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৪২ কিলোমিটার। এ পথে নন এসি বাসের ভাড়া ৬৯০ টাকা। আর গ্রীন লাইন পরিবহন ও সোহাগ পরিবহন ডাবল ডেকার বাসের বর্তমান ভাড়া নিচ্ছে ১৬০০ টাকা। এই বাসগুলো যথাক্রমে জার্মানির ম্যান ও সুইডেনের স্ক্যানিয়া ব্র্যান্ডের এবং বিজনেস ক্লাস। দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল হিসেবে ধরা হয় এই বাসগুলোকে। যদিও গত বছরের অক্টোবর মাসেও একই রুটে এই বাসের ভাড়া ছিল ১২০০ টাকা। দুই দফায় তেলের দাম বাড়ায় প্রতিবার ২০০ করে ৪০০ টাকা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। একইভাবে খুলনা রুটে চলাচলকারী এই বাসে ২০০ টাকা বাড়িয়ে বর্তমান ভাড়া ১৪০০ টাকা করা হয়েছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অন্য কোম্পানির বিজনেস ক্লাস বাসের বর্তমান ভাড়া ১৪০০ টাকা। ওই রুটে হানিফ এন্টারপ্রাইজ সুইডিশ ‘ভলভো বি ৯ আর’ এবং শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস, এনা ট্রান্সপোর্ট, রবি এক্সপ্রেস কোরিয়ান ব্র্যান্ড ‘হুন্দাই’ দিয়ে সেবা দেয়। এই কোম্পানিগুলোও দুই দফায় ৪০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়েছে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব প্রায় ৪০০ কিলোমিটার। এই রুটে নন এসি বাসের ভাড়া এখন ১১০০ টাকা। আর গ্রীনলাইন পরিবহনের স্ক্যানিয়া ব্র্যান্ডের সøীপার কোচের জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হয় ২৭০০ টাকা। গ্রীন লাইন ছাড়াও আরও বেশকিছু কোম্পানি এই পথে সøীপার বাস পরিচালনা করে। যার অধিকাংশই ভারতীয় অশোক লেলেন্ড এর বাস। ফলে মানের দিক থেকে কিছুটা নিচের দিকে থাকা এই বাসগুলো ভাড়া নিচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব ৩৯০ কিলোমিটার। এই পথে এস আর ট্রাভেলস কোরিয়ান ‘হুন্দাই’, হানিফ এন্টারপ্রাইজ সুইডেনের ‘ভলভো বি ৯ আর’ এবং নাবিল পরিবহন ‘স্ক্যানিয়া’ দিয়ে সার্ভিস পরিচালনা করে। তাদের বিজনেস ক্লাস বাসে ভাড়া নিচ্ছে ১৫০০ টাকা। যদিও গত বছরের অক্টোবর মাসে এই বাসগুলোই ভাড়া ছিল ১০০০ টাকা। তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দুই দফায় ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ফেলেছে কোম্পানিগুলো।

আবার ঢাকা থেকে রংপুরের দূরত্ব ৩০৮ কিলোমিটার। দিনাজপুরের তুলনায় প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ কমলেও ভাড়া কমেনি। এই পথে চলাচলকারী ওই কোম্পানিগুলোরই বিজনেস ক্লাস (২৮ সিট) এসি বাসগুলোতে ভাড়া নেয়া হচ্ছে সেই ১৫০০ টাকা করেই। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে বগুড়াতে। ঢাকা থেকে এই জেলার দূরত্ব মাত্র ১৯৭ কিলোমিটার। অথচ এই দূরত্বে বাসগুলো (বিজনেস ক্লাস- ২৮ সিট) ভাড়া নিচ্ছে ১৩০০ টাকা।
ভাড়া নিজেদের মতো করে বাড়ানোর পরও এসি বাসগুলোতে দিনের পর দিন ক্ষতি হচ্ছে বলে জানালেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের জেনারের ম্যানেজার মোশাররফ হোসেন। তার দাবি, তেলের দাম বাড়ার পর যাত্রী সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। কখনো কখনো অর্ধেক যাত্রীও পাওয়া যায় না। এখন লাভ তো দূরে থাক, খরচও উঠানো যায় না ।

গত বুধবার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে রাত সাড়ে ১১টায় সৌদিয়া পরিবহনের জার্মান ব্র্যান্ড মার্সিডিজ বেঞ্জ (বিজনেস ক্লাস) বাসটির সিট বিক্রির একটি হিসেব দেখিয়ে কোম্পাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২৮ সিটের বাসটি ওইদিন মাত্র ১৩ জন যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম যায়। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি বলেন, রাতেই এই অবস্থা, তাহলে দিনের অবস্থা বুঝেন কতটা খারাপ।

এসি বাসের ভাড়া নিয়ে নীতিমালা থাকা দরকার বলে মনে করেন শ্যামলী পরিবহনের এমডি রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি বলেন, দেশে অনেক ধরনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস চলে। এজন্য কাজটা একটু কঠিনও। এখনও এগুলোর গ্রেডিং করতে পারিনি। আমরা গ্রেড-১, গ্রেড-২, গ্রেড-৩ এ ধরনের শ্রেণিতে ভাগ করার চিন্তা করছি। তখন ভাড়ার বিষয়টি ঠিক হতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন