শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ৭৫ ডলারে নেমেছে

যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ রাখল চীন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমেছে। এক দিনের ব্যবধানে অপরিশোধিত তেলের দর সাড়ে ৩ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলারে নেমে এসেছে। এ দর গত দুই মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। রয়টার্স ও সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় বিশ্ববাজারে পণ্যটির দামে পতন লাখ করা যাচ্ছে। গতকাল শনিবার অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম আগের দিনের চেয়ে ২ ডলার ৭৩ সেন্ট বা ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ কমে ব্যারেলপ্রতি ৭৫ ডলার ৬৮ সেন্টে বিক্রি হয়েছে। আর ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম একই হারে কমে ৭৮ ডলার ৪৬ সেন্টে বিক্রি হয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়। ২৭ অক্টোবর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে ৮৫ দশমিক শূন্য ৭ ডলারে ওঠে। এরপর থেকেই তা কমতে থাকে। ৮ নভেম্বর এর দর ছিল ৮২ দশমিক ৫ ডলার। এক মাস আগে ১৬ অক্টোবর দাম ছিল ৮০ ডলার। আর এক বছর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। আকস্মিক তেলের দামের এই পতন সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কমার কারণ নিয়েও চলছে নানা বিশ্লেষণ।

রয়টার্স জানিয়েছে, এটি সম্ভব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ চীন রেখেছে বলেই। বাইডেন প্রশাসন তার মিত্রদের কাছে অনুরোধ করেছিল যাতে দেশগুলো তাদের সংরক্ষিত (রিজার্ভ) তেল বাজারে ছেড়ে দেয়। আর সবাইকে অবাক করে দিয়ে চীন এ কাজটিই করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন অনেক দিন ধরেই বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত। কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ ও ট্রাম্পের পরাজয় সেই বাণিজ্যযুদ্ধ কিছুটা কমিয়ে রাখলেও একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। চীন যে যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুরোধ রাখবে তা অনেকেই আশা করেননি, তবে চীনের এই সিদ্ধান্ত বাজারকে প্রভাবিত করেছে; কমছে তেলের দর। জ্বালানি তেলের দাম কমার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে ধন্যবাদ দিয়েছেন বিশ্ব জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিস্ট্যাড এনার্জির সিনিয়রষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক বিজোরনার টনহাউজেন বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। দেশ দুটি সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়ায় দাম কমতে শুরু করেছে। টনহাউজেন বলেন, বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন ডিসেম্বরে ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আসতে পারে। এটা হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন থেকে কিংবা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার বৃহত্তর সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে, তবে সংরক্ষিত তেল ছাড়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য সামগ্রিক চিত্র পরিবর্তন না-ও হতে পারে।

ইউরোপে করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউ শুরু হওয়ায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দেয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার আরেকটি কারণ বলে জানিয়েছে রয়টার্স। কয়েক দিন আগে জো বাইডেন ও শি চিনপিংয়ের ভার্চুয়াল বৈঠকে বৈশ্বিক জ্বালানি তেল সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বাইডেন সংরক্ষিত তেল বাজারে ছাড়তে চীনের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানান। এর পরই দেশ দুটির সমন্বিত পদক্ষেপের পর লাখো ব্যারেল তেল বাজারে আসে।

তবে যুক্তরাষ্ট্র যে কেবল চীনকেই সংরক্ষিত রাখা তেলের ব্যবহার বাড়াতে বলেছে তা নয়, একই অনুরোধ করা হয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের মতো বৃহৎ তেল ব্যবহারকারী দেশগুলোকেও। এর মধ্যে শুরুতেই চীন অনুরোধ রক্ষা করেছে। শুরুতেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধ রক্ষা করায় তা ওপেককে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কেননা বিশ্বের শীর্ষ তেল ব্যবহারকারী দেশ চীন। যদিও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ওপেক এ নিয়ে কিছু বলেনি, তবে তারা যে বিস্মিত, তা জানিয়েছে রয়টার্স। ওপেকের সদস্য এখন ১৫টি দেশ। তাদের মিত্র রাশিয়া। এই দুই মিলে তাদের বলা হয় ওপেক প্লাস। এই ওপেক প্লাসের একটি সূত্রের কথা উল্লেখ করে রয়টার্স জানায়, তেল রফতানিকারক দেশগুলো মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের দরকার ছিল না। কেননা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কোভিড সংক্রমণ বাড়ছে। ফলে এমনিতেই তেলের চাহিদা আবার কমে যাবে এবং দামও কমবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, তেলের দর আরও বাড়বে বলে যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা থেকে বিশ্ব কিছুটা দূরে সরে যাচ্ছে।

তেলের দর গত অক্টোবর থেকে বেশি বাড়া শুরু করেছিল মূলত তেল রফতানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের এক সিদ্ধান্তে। তারা আগের লোকসান তুলে আনতে জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমিয়ে দেয়। বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে থাকায় বাড়ছিল তেলের চাহিদা। আবার কোভিড সংক্রমণের সময় সরবরাহব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এমনিতেই বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছিল।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চিন্তিত মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ে। এ রকম সময়ে চাহিদা বৃদ্ধি ও জোগান কমে যাওয়ায় জ্বালানি তেলের দর ব্যারেলপ্রতি ৮৫ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের পর ওটাই ছিল সর্বোচ্চ দর। প্রতিটি দেশই আপৎকালীন সময়ের জন্য জ্বালানি তেল একটি সংরক্ষিত অবস্থায় রাখে। মূলত এটি শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালে, যখন আরব দেশগুলো তেল বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। এরপর এ ধরনের অবস্থা হয়েছিল ২০১১ সালে, যখন ওপেক সদস্য লিবিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে যায়।

বাংলাদেশে কি দাম কমবে
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া নিয়ে বাংলাদেশ সরকার চিন্তিত হয় মূলত অক্টোবর থেকেই। এর আগের সাত বছর বিশ্ববাজারে তেলের দাম ছিল অনেক কম। কিন্তু তখন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কম দামে তেল কিনে দেশের ভোক্তাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেছে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই সাত বছরে সরকার মাত্র একবার দাম কমায়। তা-ও অতি সামান্য, মাত্র ৩ টাকা প্রতি লিটারে, কিন্তু দাম বাড়তে শুরু করার এক মাসের মধ্যেই বিপিসির দেয়া প্রস্তাব মেনে গত ৪ নভেম্বর থেকে ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়িয়ে দেয় লিটারে ১৫ টাকা। অর্থাৎ এক লাফে বাড়ে ২৩ শতাংশ। এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবহন খাতের ভাড়া সরকার বাড়িয়ে দিয়েছে ২৭ শতাংশ।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি মানেই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। সারা বিশ্ব এখন চিন্তিত এ নিয়ে। বিশেষ করে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সময়ে তেলের দাম বাড়ানোর সমর্থন নেই কারোরই, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার বিপিসি ও পরিবহন খাতের প্রভাবশালীদের অগ্রাধিকার দিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো নিয়ে সারা বিশ্বই চিন্তিত, তাই সবাই একটি পথ খুঁজছিল। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ, কিন্তু তর সয়নি বাংলাদেশ সরকারের। এক লাফে ১৫ টাকা দর বৃদ্ধি করা হয়েছে, কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও সরকারও সিদ্ধান্ত নেবে নাকি লাভই করতে থাকবে, সে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

দাম কমানোর দাবি বিজিএমইএর
বিশ্ববাজারে দাম কমায় দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ।

গতকাল বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ানোর ফলে তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদন খরচ ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেশ খানিকটা কমেছে, সরকারেরও উচিত দেশের বাজারে দাম কমানো। তিনি বলেন, গত দুই বছরে করোনার কারণে আমাদের তেমন কোনো কর্মসংস্থান তৈরি হয়নি। তাই বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে প্রয়োজন ব্যবসা সহজ করা এবং নীতি স্থিতিশীল রাখা। এমন পরিস্থিতিতে দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে তেলের দাম কমানোর বিষয়ে সরকারকে সদয় দৃষ্টি দিতে অনুরোধ করছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Md Didarul Alam ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
আমাদের দেশেও কমানো হোক,, সকল বাড়া আগের নিয়মে চলবে,
Total Reply(0)
Joinal Abedin ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
Now all costs should be lowered down . But who will do that ???
Total Reply(0)
Abdul Kuddus Mondal ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
বাংলাদেশ বিশ্বের বাহিরে, তাই দাম বেড়েছে
Total Reply(0)
Shamsul Babu ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৭ এএম says : 0
বাংলাদেশের ভিতরে সবকিছু আগের মতো করা হোক।
Total Reply(0)
Jamal Khan ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
আর বাংলাদেশের চোরেরা কয় দাম খালি বাড়ে।
Total Reply(0)
Md Majedul Islam ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
কানাডার কি খবর কানাডায় কি দাম কমছে
Total Reply(0)
Zakaria Mohammad ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
গাছে পাকলে বেল কাকের কি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলে বাংগালীর কি? সরকারি লুট কি কম্বে?
Total Reply(0)
Moshiur Rahman ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৮ এএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।ভাই এসব নিউজ প্রকাশ করেনা প্লিজ, খুব কষ্ট লাগে।
Total Reply(0)
G Makin BG ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:১৯ এএম says : 0
এখন সরকারের উচিৎ হবে তেলের দাম কমানো।
Total Reply(0)
Khoka Mohammad Chowdhury ২১ নভেম্বর, ২০২১, ৭:২০ এএম says : 0
তাতে কি একটা টাকাও কমবে না, জনবান্ধব সরকার, জনগণকে কষ্ট সহিষ্ণু জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে মরিয়া, আবার একটা বাড়লেই বাড়াতে দেরী করবে না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন