হেমন্তের শেষে হঠাৎ করে জয়পুরহাটসহ উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে শীত। হেমন্ত মানেই শীতের আগমনী বার্তা। শিশির ভেজা ঘাস আর কুয়াশার চাদর সেই জানানই দিচ্ছে। হেমন্ত ঋতু না পেরুতেই আচমকাই জেঁকে বসেছে শীতের তীব্রতা। দুপুরের পর দেখা মিলছে সূর্যের।
উত্তরাঞ্চলের জেলা জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ভোরবেলা ঘনকুয়াশা ভেদ করে সহজে সূর্যের দেখা মিলছে না। বাতাস কনকনে না হলেও কুয়াশাভেজা ঘাস কিংবা ফসলের সবুজ ডগায় বিন্দু বিন্দু শিশির কণা, মাঠে-প্রান্তরে শিশির মাখা ধানের ডগা জানান দিচ্ছে শীতের তীব্রতা। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে প্রকৃতিও তার পরিবর্তিত রূপ নিয়ে শীতের আগাম বার্তা নিয়ে এসেছে। প্রতিবছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে এ জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার আগেই শুরু হয়েছে শীতের তীব্রতা। ঋতু চক্র প্রকৃতিতে এক ভিন্নরকম চাঞ্চল্য আনছে। দিনের আধাবেলা রোদ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে শুরু করে সারা রাত চলে ঠান্ডার প্রকোপ। বৈকাল থেকেই শীতের পোশাক ব্যবহার করতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত থাকে ঘনকুয়াশা। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শীতের হিমেল বাতাসে ঠান্ডা ও কুয়াশা অনুভূত হয়। বিশেষ করে ভোরে কুয়াশায় ঢেকে যায় রাস্তা-ঘাট।
ঘনকুয়াশার কারণে সড়কে-মহাসড়কে বাস-ট্রাকগুলো চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে বের হচ্ছেন গরম কাপড় গায়ে মুড়িয়ে। নবান্ন আর পিঠেপুলির আনন্দে মাতোয়ারা গ্রামীণ জনপদের কৃষাণ-কৃষাণীরা। এছাড়াও জেলার গ্রাম ও শহরের হাট-বাজারগুলোতে পুরোদমে উঠতে শুরু করেছে শীতের সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো আর ধনেপাতা।
জেলায় গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। পর্যায়ক্রমে আরও এ তাপমাত্রা কমে আসবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। এদিকে শীতের ঠান্ডা শুরু হওয়ায় এ জেলার মানুষজন ঠান্ডার কাপড়সহ লেপ-তোষক বানানোর ধুম পড়েছে। লেপ-তোষক তৈরির কারিগররাও পার করছে ব্যস্ত সময়। দোকানগুলোতে চাহিদা বেড়ে গেছে লেপ ও তোষকের। জেলা শহরের ঈদগা মাঠ ও কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটে দোকানিরা লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত। স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে শোভা পাচ্ছে নানা রকমের শীতের পোশাক। ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটে শীতের পোশাক দোকানিরা তুলেছেন। হকার্স মার্কেটে শুরু হয়েছে পুরাতন কাপড় বিক্রির হিড়িক। কিছুদিন আগে অবিরাম বৃষ্টির কারণে এ বছর আগাম শীত অনুভ‚ত হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। রাত গভীর হতে হতে শীতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। দিনের অর্ধবেলা থাকছে কুয়াশা। তবে দুপুরে থেকে কুয়াশা আস্তে আস্তে কমে যায়।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, জেলায় দ্রুত শীতের তীব্রতা বাড়ছে। শীত মৌসুম উপলক্ষে কৃষকদের ধান বীজতলা তৈরি আলুর পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণসহ সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, শীতের তীব্রতা মোকাবিলায় আমাদের সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও দুস্থ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত কম্বলসহ গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন