শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনভোগান্তি চরমে

রাজপথের যানজট অলি-গলিতে টঙ্গীর যানজটের প্রভাব রাজধানীতে সংস্কার কাজের কারণে তিন লেনের রাস্তায় দুই লেনই বন্ধ যানজটে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

রাস্তায় মোড়ে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে বাসে উঠতে না পারা, যানজট আর গণপরিবহনের সংকটসহ এমন বিভিন্ন ভোগান্তির চিত্র রাজধানীবাসীর কাছে নতুন নয়। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে; সড়কে উন্নয়ন কাজ ও সড়ক সংস্কারের গর্তে জমে থাকা বৃষ্টির পানি। এই দুই কারণেও রাজধানীতে যানজটের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ সময়ের যানজটে পড়ে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রাজধানীবাসীকে। অন্যদিনের হিসাবে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে কারও দুই থেকে তিন ঘণ্টাও সময় লাগে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যস্ত দিনের নানা কর্মকান্ডে। নিরুপায় অনেকেই বাধ্য হয়ে হেঁটে রওনা দেন গন্তব্যে। শুধু তাই নয়, যানজটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলে এক গবেষনায় উঠে এসেছে।
জানা যায়, গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজটের মধ্য দিয়ে দিনের শুরু হয়। সকাল থেকেই সড়কে যাত্রীর চাপ এবং পথে পথে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। রাত পর্যন্ত একই পরিস্থিত ছিল। শুধু তাই নয়, রাজধানীর মূল সড়কগুলোর যানজটের প্রভাব অলি-গলিতেও পড়ে। বিশেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে উত্তরা-টঙ্গী সড়ক, খিলক্ষেত, বনানী, মাহাখালী, জাহাঙ্গীর গেট, কুড়িল, প্রগতি সরণি, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ সড়কগুলোতে সকাল থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও ঢাকার বাহিরেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয় এতে দুর্ভোগে পড়েন চলাচলকারী যাত্রীসহ চালকরা। ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে গত রোববার সকাল থেকে গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে গুঁড়ি বৃষ্টি ও রাতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এ সময় তলিয়ে যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর বিভিন্ন অংশ। গাজীপুর মহানগরীর বড়বাড়ি, কলেজ গেট, স্টেশন রোড, গাজীপুরা, ভোগড়া, গাজীপুর বাইপাস, টঙ্গী বাজার, বোর্ড বাজার, পূবাইল-মীরেরবাজার বাইপাসহ আশাপাশের সড়কে যানজট তৈরি হয়।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বিআরটি প্রকল্পে কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। এখনো পানি জমে থাকায় ধীরে ধীরে খানাখন্দগুলো বড় হয়ে মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাক আটকে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগের মাত্রা চরম আকার ধারণ করছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সদস্যরা চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও মহাসড়কে খানাখন্দ থাকায় তাদের সে চেষ্টা কোনো কাজেই আসে না।

প্রভাতী-বনশ্রী পরিবহনের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক বলেন, গাজীপুরের জৈনাবাজার এলাকা ভোর ৫টা ২০মিনিটে প্রতিদিনই বাস ঢাকা উদ্দেশে ছেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে গুলিস্তানে গিয়ে পৌঁছে বাসটি। বুধবার ভোরের বাসটি সকালে গুলিস্তান পৌঁছার কথা থাকলেও সেটি বেলা সাড়ে ১১টায় গিয়ে পৌঁছায়। চারদিন ধরে স্বাভাবিক সময়ের চাইতে কয়েকগুন সময় বেশি লাগছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও ভারী বৃষ্টির কারণে যানচলাচলে ধীরগতি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে রয়েছে। আমরা সড়কের পাশের ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেছি।

বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক মহিউল আলম বলেন, অসময়ে হঠাৎ বৃষ্টিতে নির্মানাধীণ সড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। যার কারণেই মূলত যানজট। খানাখন্দ সংস্কারের জন্য আমাদের একাধিক টিম মহাসড়কে কাজ করছে। আবার কিছু স্থানে নির্মাণাধীণ লেনে কাজ চলমান থাকায় এক লেনেই গাড়ি চলতে গিয়েও যানজটের তৈরি হয়।
অন্যদিকে উত্তরাজুড়ে বিআরটির সড়ক খননের কারণে সরু সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে নাভিশ্বাস উঠেছে ট্রাফিক বিভাগের। টঙ্গী ও উত্তরায় যান চলাচল বিঘিœত হওয়ায় সৃষ্ট যানজটের প্রভাব পড়েছে পুরো এয়ারপোর্ট রোড় থেকে শুরু করে বনানী-মহাখালী হয়ে ফার্মগেট পর্যন্ত। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা থেকে আব্দুল্লাহপুর হয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। যান চলাচলের গতি খুবই ধীর। কোথাও কোথাও দীর্ঘ সময় এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের পূর্ব জোনের এসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সংস্কার কাজের কারণে গাজীপুরের চেরাগ আলী এলাকায় তিন লেনের রাস্তায় দুই লেনই বন্ধ। গাড়ি চলাচল করছে এক লেনে। এতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। যে কারণে টঙ্গী ছাপিয়ে উত্তরা আব্দুল্লাপুর ও বাড্ডা, গুলশান-বনানীর সড়কও প্রভাবিত যানজটে। তিনি আরো বলেন, সড়কে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। যানজট নিরসন ও ট্রাফিক শৃঙ্খলা রক্ষায় নজর বেশি দেওয়া হয়। গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরা হয়ে বের হওয়ার সড়কে যান চলাচল বিঘিœত। যার প্রভাব পড়েছে প্রবেশ মুখগুলোতেও।

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে রাজধানীগামী সড়ক ও রাজধানী থেকে বিমানবন্দর হয়ে টঙ্গী গাজীপুরের সড়কে সড়কে তীব্র যানজট। মূল সড়কের যানজটের প্রভাবে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে অলি-গলিতেও। এয়ারপোর্ট বা উত্তরাগামী যানবাহনগুলো অনেকক্ষণ ধরে সড়কে আটকে থাকায় ইউটার্ন ও ইউলুপগুলোও বন্ধ হবার উপক্রম।

এদিকে, রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কাকরাইল, বিজয় সরণি, পল্টন, মতিঝিল, পুরান ঢাকা, গুলিস্তান, নীলক্ষেত, আজিমপুর, মিরপুর, ধানমন্ডি, বাংলামটর, এলিফ্যান্ট রোড, মালিবাগ এলাকার সড়কগুলোতেও তীব্র যানজট ছিল। রামপুরা, বনশ্রী, মধ্য বাড্ডা, আবুল হোটেল, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মহাখালিসহ বিভিন্ন সড়কে যানজটের দৃশ্য দেখা গেছে। তবে রামপুরা, কারওয়ান বাজার এবং তেজগাঁওয়া অঞ্চলের রাস্তাগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা গেছে।

এদিকে, রাজধানীর যানজটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে সম্প্রতি এ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়াও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে ঋণাত্মক ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার গ্রোথের কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। দেশের মানুষ যারা শহরে বাস করেন তাদের অধিকাংশ বাস করেন ঢাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। প্রধান শহরগুলোতে বাস করে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। এরমধ্যে আবার ঢাকায় বাস করে ১১ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ। এছাড়া ১০ লাখের বেশি মানুষ বাস করে সাড়ে ৩ শতাংশ শহরে। ১০ লাখের মতো মানুষ বাস করে এমন শহর মাত্র ৫টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন