শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহিলা

নারী অধিকার মানবাধিকার

প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী

সৃষ্টিকর্তার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃজন হচ্ছে মানুষ। মানুষ দুটি ভাগে বিভক্ত যেমন-নারী ও পুরুষ। মানুষ সামাজিক জীব। আর এই সমাজের উন্নয়নের দায়িত্ব মানুষের হাতে। কিন্তু লক্ষণীয়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় অনেক আগে থেকে আজ পর্যন্ত নারীকে মানুষ হিসেবে কোন দায়িত্ব ও ক্ষমতা পালন করতে দেওয়া হয়নি। তবে এটি অত্যন্ত সমীচীন যে সমাজের সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে শুধু পুরুষের নয়, নারীদের অগ্রণী ভূমিকা থাকা দরকার। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ আমাদের দেশ স্বাধীন হয় অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ পরাধীনতার শিকল ছিন্ন করে সেদিন বেরিয়ে আসে। কিন্তু লক্ষণীয়, পুরুষ বলতে গেলে পূর্ণ অর্থে ইংরেজদের তৈরি পরাধীনতার শিকল ছিন্ন করে স্বাধীনতা লাভ করেছেন। আধুনিকতার জগতে যেখানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিদ্যার ফলস্বরূপ মানুষের নিত্যনতুন চিন্তাধারা ও তত্ত্বের উন্মেষ ঘটছে, যেখানে মানুষ অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে কিন্তু সে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে নারী আজ পরাধীন। তাদের আশা-আকাক্সক্ষার মর্যাদা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় আজও গৌণ। অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বেগম রোকেয়া, নওয়াব ফজিলাতুন্নেছার মতো নারীরা আমাদের কাছে আদর্শ সেখানকার মাটিতে আজ নারীরা নির্যাতিত-অত্যচারিত হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ার পরপরই তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় এমন অভিযোগ মাঝেমধ্যে আমরা পেয়ে থাকি। অনেক কন্যা সন্তান জন্মের পর মুহূর্ত থেকে পিতা-মাতার চিন্তার কারণ হয়ে উঠে। কারণ আমাদের দেশে যৌতুকরূপী রাক্ষস বিদ্যমান। যৌতুকের জন্য কয়েক লক্ষ নারীকে নিজের প্রাণ ত্যাগ করতে হচ্ছে। যে নারী প্রথমে কন্যা, বোন, স্ত্রী, মা-র ভূমিকা নিয়ে প্রতিটি সম্পর্কের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেস সে নারীর প্রতি কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন সঠিক অর্থে হচ্ছে না। আজ দেশ সভ্যতা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে উন্নয়নের পথে বিচরণ করা সত্ত্বেও নারীকে আজও নিরক্ষরতা ও অপমান-লাঞ্ছনার জ্বালায় ভুগতে হচ্ছে। নারীদের উপর নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার হয়ে চলেছে। এ অত্যাচারের মূলে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টিপাত করলে লক্ষ করা যায়, এর মূলে রয়েছে কোন স্বার্থান্বেষী নারী। নারী হয়ে উঠেছে নারীর প্রধান শত্রু যে নারী প্রেম-¯েœহের-ত্যাগের প্রতীক। আজ তাদের মধ্যে কিছু স্বার্থান্বেষী নারী নিজ স্বার্থ, উচ্চাকাক্সক্ষা পূরণের জন্য অন্যের অপকার করতে দ্বিধাবোধ করে না। আর তার সঙ্গে একই পথের পথিক হয়ে উঠেছে কিছু স্বার্থন্বেষী পুরুষ।প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের পড়াশোনার অধিকার ছিল না। যেখানে কিছু কিছু স্বার্থান্বেষী পুরুষ নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য সমাজের নিয়ম এমনভাবে তৈরি করেছিল যে মেয়েরা পড়াশোনা করলে নাকি স্বামী মারা যায় বা স্বামীর চোখ অন্ধ হয়। সে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সমাজের কিছু কিছু নারী নিজের ইচ্ছা ত্যাগ করে স্বামী কুশলের জন্য চিরদিন নিরক্ষরতার পথে বিচরণ করে। আর কিছু কিছু নারী বুঝতে পেরেছিল এটি কোন সমাজোর নিয়ম নয়, কিছু স্বার্থান্বেষী পুরুষের তৈরি। সে স্বার্থান্বেষী পুরুষের চতুরতা বুঝতে পেরে, সমাজের তৈরি মিথ্যে নিয়ম-নীতিকে ভেঙে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, বিভেদ ও পীড়ন থেকে মানব বিশ্বের সমগ্রতায় উত্তীর্ণ হবার জন্য তাই তাদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে আসে মুক্তির ধ্বনি- স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায়/দাসত্ব শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে কে পারিবে পায়।’
এ মুক্তির পথে বিচরণের ফলস্বরূপ আমরা পেয়েছি ব্যতিক্রমী নারী-যারা সমাজের মিথ্যে তৈরি কিছু বিধিনিষেধের জন্য অজ¯্র দুঃখ-কষ্টের মধ্যে নিজের পরিচয় নিজে গড়েছেন ও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে রয়েছেন। কিন্তু লক্ষণীয় যেখানে এমন ব্যক্তিত্বময়ী প্রতিভাশালী নারীর আবির্ভাব ঘটেছিল সে বাংলাদেশের মাটিতে আজো নারীরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হচ্ছে নিজের অধিকার ও প্রাপ্য থেকে এসব কিছুর পিছনে মূল কি কারণ যদি আমরা অবগত হতে চাই তবে দেখব মানুষ আজ স্বার্থান্বেষী, মানবিকতার হ্রাস পেয়ে যান্ত্রিক হয়ে উঠেছে। প্রত্যেক মানুষ ‘আমার শুধু’ ‘আমার ভাল হবে’ বাক্য সম্পর্কে বিশেষভাবে সচেতন হয়ে উঠেছে। ফলে মানুষ অন্যের ভাল, অন্যের খুশি নিয়ে আজ ভাবে না। নিজ স্বার্থপূরণের জন্য অন্যায়, অন্যকে দুঃখ দিতে পিছপা হয় না। তাছাড়া, নারীরা যাতে লাঞ্ছিত-অপমানিত না হয় ও নিজ অধিকার ও প্রাপ্য যথাযথভাবে পেতে পারে তার জন্য নানা আইন করা হয়েছে। কিন্তু যতই হোক না কেন, নারীরা অপমান-লাঞ্ছনা থেকে মুক্তি পাবে না যত সময় পর্যন্ত সমাজে কিছু কিছু ব্যক্তি যাদের মন কুরীতি ও বিভেদের তমসায় লিপ্ত। তাই যত আইন করা হোক না কেন, সবই কাগজের পাতায় লিপিবদ্ধ থেকে যাবে, বাস্তবে কার্যকরী হবে না। মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হলে আইনের দরকার পড়বে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন লিখেছিলেন-‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেহ নাহি দিবে অধিকার।’ বাংলাদেশের বুকে নারীরা বর্তমান যুগে সে অধিকার পায়নি বললে ভুল হবে, কিন্তু দেশের কিছু কিছু স্থানে আজ নারীরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত হচ্ছে নিজ অধিকার ও প্রাপ্য থেকে। নারী তাদের বঞ্চনার ইতিহাস থেকে সেদিন মুক্তি পাবে যেদিন নারীর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে প্রত্যেক বাঙ্গালী কণ্ঠে ধ্বনিত হবে একটি কথা-না জাগিলে বাংলার ললনা এ বাংলা আর জাগে না, জাগে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন