শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বেক্সিমকো’র গ্রিন সুকুকের লেনদেন জানুয়ারিতে

দেশের প্রথম শরিয়াহভিত্তিক বন্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রচলিত আর্থিক বাজারে মুসলিম বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার আগ্রহ থাকলেও, নানা সীমাবদ্ধতায় তারা তা করতে পারছেন না। বিশেষ করে প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয়কে নিরাপদ একটি মাধ্যমে বিনিয়োগ করার সুযোগ খোঁজেন। আর এর সমাধান হিসেবে সুকুক (ইসলামিক বন্ড) আবির্ভূত হয়েছে। ইসলামি আর্থিক নীতিমালার সম্মতিতে মুনাফার জন্য ট্রেজারি বন্ডের অনুরূপ হচ্ছে ইসলামি বন্ড সুকুক। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের তিন হাজার কোটি টাকার সুকুকের চাঁদাগ্রহণ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। মূলত সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো দেশের প্রথম শরীয়াহভিত্তিক বন্ড গ্রিন সুকুকের বড় অংশ কিনে নিয়েছে। গত বুধবার বন্ডটির চাঁদাগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, যার মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে বেক্সিমকো। সুকুকের বেশিরভাগ অর্থ ব্যয় হবে বেক্সিমকো পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে। বন্ডটির ইস্যু ম্যানেজার সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বেক্সিমকোর কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী জানুয়ারির শুরুতে বেসরকারি খাতের প্রথম এই সুকুকটির লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জে শুরু হতে পারে।
আর্থিক খাতের বিশ্লেষকদের মতে, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুকুক বেশ প্রতিশ্রুতিশীল ও নিরাপদ। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড এটি। মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে সুদের বন্ডের চেয়ে ইসলামিক বন্ডের (সুকুক) চাহিদা অনেক বেশি। কারণ, শরিয়াহ্ আইন অনুযায়ী সুদ, জুয়া, ও ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বর্তমান বাজারে উচ্চ-মুনাফার সঞ্চয়ের মাধ্যম এমনিতেই সীমিত। সেই হিসেবে এই সুকুক নতুন বিনিয়োগের পথ খুলে দিয়েছে। একই সঙ্গে সুদবিহীন ঝুঁকিহীন নিরাপদ বিনিয়োগের এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর আবু আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ আগে থেকেই সুদকে এড়িয়ে চলতে চায়। এ জন্য ইসলামি ব্যাংকিং খুবই জনপ্রিয়। আর তাই দেশে আরো আগেই ‘সুকুক’ বন্ড দরকার ছিল। প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও সুকুক চালু করা হয়েছে, যা খুবই জনপ্রিয় হবে। যদিও এটি এমনিতেই আমাদের দেশে জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল বলেছেন, শরীয়াহ্ভিত্তিক সুকুক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

বেক্সিমকো সুকুকের ইস্যু ম্যানেজার হচ্ছে সিটি ব্যাংক ক্যাপিটাল রিসোর্সেস। ইস্যু ম্যানেজার সূত্রে জানা গেছে, বেক্সিমকো সুকুকের ৭০ শতাংশ কিনে নিয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। এর বাইরে বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও মিউচুয়াল ফান্ড সুকুকটির উল্লেখযোগ্য অংশ কিনেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকার সুকুক কিনেছে। এ ছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা সুকুকের মাত্র ২ শতাংশেরও কম নিয়েছে। বেক্সিমকোর শেয়ারহোল্ডাররা নিয়েছেন এক শতাংশ।
গত ২৩ জুন দেশে প্রথম কিছু শর্তসাপেক্ষে তিন হাজার কোটি টাকার সুরক্ষিত রূপান্তরযোগ্য অথবা অবসায়নযোগ্য সম্পদভিত্তিক গ্রিন সুকুক বন্ডটির অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। বন্ডটির নাম দেয়া হয়- বেক্সিমকো সুকুক আল ইস্তিসনা, অর্থাৎ এর মাধ্যমে অর্থায়নকারীর অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে এবং বাস্তবায়ন শেষে তার মালিকানা হবে অর্থায়নকারীর। এ বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর। বন্ডটির অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা ও ৫০টি বন্ডে একটি লট। মুনাফার ভিত্তি হবে ন্যূনতম ৯ শতাংশ বা সর্বশেষ বছরে প্রদত্ত লভ্যাংশের সঙ্গে মুনাফার পার্থক্যের ১০ শতাংশ বেশি।

৩ হাজার কোটি টাকার বেক্সিমকোর গ্রিন সুকুকটির মধ্যে ৭৫০ কোটি টাকা বিদ্যমান শেয়ারধারীদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শেয়ারহোল্ডার বাদে অন্যান্য বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। অবশিষ্ট ৭৫০ কোটি টাকা আইপিও ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। ৭৫০ কোটি টাকার সুকুক আইপিওর মধ্যে ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ বা ৪২৩ কোটি টাকা চাঁদাগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। আর সুকুকের আন্ডাররাইটার ৭৫০ কোটি টাকার সুকুক আইপিওর ২০ শতাংশ বা ১৫০ কোটি টাকা কিনে নেয়। এতে করে মোট আইপিওর ৫৭৩ টাকা সাবস্ক্রিপশন হয়। আইপিওর সাবস্ক্রিপশন ১৭৭ কোটি টাকা কম হওয়ায় প্লেসমেন্ট অংশ ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৪২৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।

চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিলের পুরোটা কিংবা আংশিক শরিয়াহভিত্তিক সুকুকে বিনিয়োগের সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক, যার মধ্যে বেক্সিমকোর ৩ হাজার কোটি টাকার সুকুক অন্তর্ভুক্ত ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সুবিধার পর ব্যাংকগুলো সুকুকে বিনিয়োগ করে এবং সফলভাবে বেক্সিমকোর সুকুক সাবস্ক্রিপশন করতে অবদান রাখে।

উল্লেখ্য, ব্যবসার ক্ষেত্রে চুক্তি এবং দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে সুকুক ও প্রচলিত বন্ডের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। ইসলামিক শরিয়াহভিত্তিক বন্ড সাধারণত ‘সুকুক’ নামে পরিচিত। সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেয়ার আইনি দলিল। প্রচলিত বন্ডে ইস্যুকারীর ঋণের দায়বদ্ধতার উপস্থাপন করে; অপরপক্ষে সুকুক সম্পত্তির মালিকানা নির্দেশ করে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান। সুকুক ইস্যুকারী চুক্তি অনুসারে মেয়াদ শেষে ফেস ভ্যালুতে বন্ড কিনতে বাধ্য থাকে। ফলে দেশী ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের কাছে সুকুক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ইসলামী শরিয়াহ’র আলোকে গঠিত সমমূল্যের বিনিয়োগ সার্টিফিকেট ‘সুকুক’ বিশ্বের মুসলিম ও অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো প্রকল্প অর্থায়নে ব্যাপক হারে সুকুক ব্যবহার করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Simul Akter ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩২ এএম says : 0
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলামী অর্থনীতি সেই ইসলামী জীবনব্যবস্থার এক অপরিহার্য অংশ। ইসলামী অর্থব্যবস্থা মানব কল্যাণময়, বৈজ্ঞানিক এবং ভারসাম্যপূর্ণ অর্থব্যবস্থা। ইসলামী অর্থনীতি পুঁজিবাদী বা সমাজবাদী যে কোন অর্থব্যবস্থার তুলনায় প্রগতিশীল এবং মানবতার জন্য কল্যাণকর।
Total Reply(0)
Nazmul Hasan ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
অন্যান্য দেশে শুকুক কি ভাবে চালু আছে,, শুকুক গ্রহিতাগন কেমন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তা উল্লেখ করা দরকার ছিলো।
Total Reply(0)
পারভেজ মোশারফ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
যুগান্তকারী পদক্ষেপ।ইসলামি বন্ড (সুকুক) এর পাশাপাশি কমার্শিয়াল বন্ড বাজারে আনা দরকার।তাহলে স্টক মার্কেট এবং মানি মার্কেট এ প্রতিদ্বন্ধীতা বৃদ্ধি পাবে।
Total Reply(0)
Ibrahim Khalil ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন!!! ইহুদিদের প্রবর্তিত সুদ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার পরিবর্তে সর্বস্তরে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং চালু করা উচিত!!
Total Reply(0)
গাজী ফজলুল করিম ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
শরীয়াহ্ভিক্তিক সুককে বিনিয়োগে করে নিজেদের পুঁজি নিরাপদ রাখুন, লাভবান হোন। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে নিজেকে শরীক করুন।
Total Reply(0)
Shariful Islam ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
মালয়েশিয়ার দৃষ্টান্ত ফলো করা উচিত। অধিক পরিমাণে সুকুক বন্ড বাজারে ছাড়া হউক। ইসলামিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতেই থাকবে।
Total Reply(0)
Najmol Hasan Rajib ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
আমি কিনবো ইনশা আল্লাহ
Total Reply(0)
Borhan Uddin ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
বর্হিবিশ্বে প্রচলিত এসব ভালো সিস্টেমগুলো আমাদের দেশেও চালু করা দরকার
Total Reply(0)
Nozmul Islam ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
হালাল পথে আয় কম হোক কিংবা বেশি হোক আমরা সেই পথটাই বেছে নেবে, কারণ আমরা মুসলমান
Total Reply(0)
Mahabub Alam ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
আমি এই বন্ডে বিনিয়োগ করতে চাই। তবে আগে ভালো করে হালাল হারাম ক্লিয়ার হতে হবে
Total Reply(0)
Najmol Hasan Rajib ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
সুকুক বন্ড চালু হলে বড় বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন সহজ হবে এবং জনগণও লাভবান হবে।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:৩৫ এএম says : 0
ভালো খবর। কারণ বর্তমান বাজারে উচ্চ-মুনাফার সঞ্চয়ের মাধ্যম এমনিতেই সীমিত। সেই হিসেবে সুকুক নতুন বিনিয়োগের পথ উম্মুক্ত করবে।
Total Reply(0)
Asgar Ali Ali ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:১৩ পিএম says : 0
Good news
Total Reply(0)
ফরহাদ রেজা ২০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:৫২ এএম says : 0
শুধু ইসলামী বা শরিয়া ভিত্তিক বললেই হবেনা নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানও এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা না হলে আম ছালা সবই যাবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন