রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সুশৃঙ্খল ঢাকা নগর পরিবহন

ই-টিকিটিং ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ায় সন্তুষ্ট যাত্রীরা

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির প্রধান উদ্দেশ্য রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এরই অংশ হিসেবে ঢাকা নগর পরিবহন চালু হলো কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত। সবুজ রঙের ৫০টি বাস পরীক্ষামূলকভাবে ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর-মতিঝিল হয়ে কাঁচপুর পর্যন্ত নিয়মিত চলাচল করছে। উদ্বোধনের পর থেকে ঢাকা নগর পরিবহনটিকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেছেন রাজধানীবাসী। এ পরিবহনটি নিয়মিত চালু থাকলে ঢাকা শহরের যাত্রীদের বাস চলাচলের দুর্ভোগ অনেকটা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা নগর পরিবহনের এ বাস রুট পাইলটিং-এর উদ্বোধন করেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। ঢাকার দুই মেয়র বাসে চড়ে যাত্রার মাধ্যমে ঢাকা নগর পরিবহন চলাচলের উদ্বোধন করেন।
গতকাল রাজধানীর এই রুটের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ৩০টি ডাবল ডেকারসহ ৫০টি বাস দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ রুটে চলাচল করছে। সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা হচ্ছে ঢাকা নগর পরিবহন। যাত্রী কম থাকলেও কোনো চাপ নেই বাসের চালক এবং হেলপারদের। ঢাকা নগর পরিবহনে প্রথম দিন থেকেই ই-টিকিটিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ই-টিকিটিং সিস্টেমেই যাত্রীরা বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে টিকিট কিনছেন। ৫ থেকে ১০ মিনিট পর পর বাস আসছে। কোন রকমের ঝামেলা বা ঠাসাঠাসি নেই। নেই কোন রকমের যাত্রীদের হয়রানি করার সুযোগ। কিলোমিটারপ্রতি দুই টাকা ২০ পয়সা ভাড়া দিয়েই বাসে উঠছেন যাত্রীরা। প্রতিটির গায়ে ঢাকা নগর পরিবহন লেখা রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করবে। ৫ মিনিট পর পর যাত্রীছাউনিতে বাস এসে দাঁড়াবে। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন না।
বাস যাত্রী বেলায়েত হোসেন বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ার কারণে এই রুটে এখন তেমন একটা বিশৃঙ্খলা দেখছি না। কমিটিকে এমন একটি উদ্যোগ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই। বাসে উঠার কোন দীর্ঘ লাইন নেই। পাঁচ মিনিট পরপর বাস আসায় কোন ভীর নেই। ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডা নেই।
সাদিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন এই সার্ভিসটিতে উঠে ভালো লাগছে। স্টুডেন্ট পরিচয় দেখাতেই হাফ ভাড়ার টিকিট দিলো। এভাবে যদি তাদের সার্ভিস সবসময় এমন থাকে তাহলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। সব শিক্ষার্থীরাই নিরাপদে যাতায়াত করতে পারবে।
ঢাকা নগর পরিবহনের একটি বাসের চালক এরশাদ মিয়া বলেন, এই পরিবহনের বাস চালিয়ে ভালো লাগছে। যাত্রীদের সাথে চালক ও হেলপারের কোন ধরনের ঝগড়া নেই। ভাড়া নিয়েও কোন কথা নেই। আবার সিট নিয়েও কোন কথা নেই। চালক ও হেরপারদের নির্দিষ্ট পোশাক দেয়া হয়েছে। এটাও আমাদের জন্য সম্মানের। তবে এই পরিবহনটি যদি মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করতো তাহলে আরও যাত্রী বেশি উঠতো এবং সময়ও কম লাগতো। নিচে দিয়ে কিছুটা যানজট পার হতে হয়।
বাসের চালকের সহকারী রাসেল মিয়া বলেন, এই পরিবহন সার্ভিসে কাজ করতে ভালো লাগছে। নতুন পরিবহন, নতুন চাকরি। তবে আমাদের বেতন পুরোপুরি নির্ধারণ হয়নি। হয়তো ভালো বেতন নির্ধারণ হয়ে গেলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।
মতিঝিল কাউন্টারের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. সেলিম মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, গত রোববার থেকে চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। প্রথম দিকে যাত্রী কম থাকলেও এখন মোটামুটি ভালো। একটু পর পর বাস আসার কারণে যাত্রীদের বসে থাকতে হয়না। যাত্রীরা নিজেরাই আমাদের কাছ থেকে এসে টিকেট নিয়ে যাচ্ছেন। কোন রকমের কথা কাটাকাটি নেই।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসাযোগ্য। আমরাও আশাকরি ঢাকা নগর পরিবহন যাত্রীদের ভালো সেবা দিবে। ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত রজনীগন্ধা ও সিটি লিংক পরিবহনের ১৬১টি যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে। এই পথে গত রোববার ঢাকা নগর পরিবহনের ৫০টি বাস চালু হয়েছে। তাই রজনীগন্ধা ও সিটি লিংকের বাসগুলোকে চলাচলের জন্য ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করেছে। কিন্তু হঠাৎ এগুলো বন্ধ করে দেয়া হলে সমস্যা হয়ে যাবে। এতে লোকসানে পড়ার আশঙ্কা করছেন পরিবহন মালিকরা। এছাড়া পরিবহন চালক এবং অন্যান্য শ্রমিকদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যাবে। তবে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি যদি আমাদের ডাকে তাহলে এক সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন এই নেতা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন