শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাণিজ্যমেলায় স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত ধুলোবালিতে যাতায়াত ভোগান্তি

খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হতেই চোখ রাঙ্গাচ্ছে ওমিক্রন। এরই মাঝে পূর্বাচলে নবনির্মিত বাণিজ্য মেলার স্থায়ী কমপ্লেক্সে বসেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থায়ী প্যাভিলিয়নে প্রথমবারের মতো ২৬তম আসর। মেলার দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করলেও প্রবেশপথে ও স্টল নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় স্থানে স্থানে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা গেছে। এছাড়াও টয়লেটের মেঝেতে পানি জমে স্যাঁতসেতে হয়ে গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত এসব টয়লেট ব্যবহার করতে হচ্ছে অনেকটা বাধ্য হয়েই নাকমুখ চেপে। শুধু তাই নয়, দর্শনার্থীদের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন চিত্র দেখা যায়নি। এমনকি বিক্রেতারাও মানছে না কোন প্রকার স্বাস্থ্যবিধি।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে মেলার স্থায়ী কমপ্লেক্স বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ স্টলে দেখা যায় দর্শনার্থীরা মাস্ক ব্যবহার ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার ভেতরে টয়লেটে গিয়ে দেখা যায়, বেসিনে সাবান, টিস্যু নেই। মেঝেতে পানি পড়ে স্যাতস্যাতে হয়ে গেছে। পাশেই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা অলস সময় পার করছেন। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরের টয়লেটগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শতাধিক পরিচ্ছন্নকর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকলেও কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

মেলায় আসা নরসিংদী সদর এলাকার বাসিন্দা আ. হাই বলেন, মেলার টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী। ভেতরে ঢুকতে হয় প্যান্টের কাপড় উঁচু করে ধরে। তিনি আরো বলেন, বাণিজ্য মেলায় আসতে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বেহাল অবস্থা। সেই সঙ্গে প্রচন্ড ধুলা। তিনি ধূলা কমাতে বাণিজ্য মেলার এ সময়ে রাস্তায় পানি ছিটানোর দাবি জানান।

রূপগঞ্জের মধুখালীর বাসিন্দা তাহছিনা আখতার নিশাত বলেন, মেলায় যাতায়াতের সময় ধূলায় কাপড়চোপড় একদম নষ্ট হয়ে যায়। পানি ছিটালে রাস্তাগুলো থেকে ধূলা কিছুটা কমবে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে, মেলার গতকাল ৫ম দিন হলেও মেলা জমেনি। এ নিয়ে যমুনা ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের স্টলের বিক্রেতা মহসিন মিয়া বলেন, ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলা ভালো জমে। আশা করছি, আগামী শুক্রবার থেকে মেলা জমবে। এছাড়া মেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখনো সেভাবে পণ্যে ডিসকাউন্ট দেয়া শুরু করেনি। বিভিন্ন পণ্যে ছাড় পেলে ক্রেতারা আকৃষ্ট হবে বলে তিনি মনে করেন। করোনা মহামারি আবার ইউরোপসহ অন্যান্য কিছু দেশে নতুন রূপে ছড়িয়ে পরায় এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশের পাশাপাশি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও কিছুটা কম।

এছাড়া দেশে গত কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণের হার কিছুটা বাড়লেও মেলায় মাস্ক ব্যবহারে তেমন সচেতনতা দেখা যায়নি। মাস্ক না পড়ার এ বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পণা কর্মকর্তা ডাক্তার নুর জাহান আরা খাতুন বলেন, মেলা অভ্যন্তরে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। ওই মেলায় আগত দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সেবাদানে ১ জন ডাক্তার, ১ জন নার্সসহ একাধিক লোক নিয়োজিত রয়েছে। প্রবেশ ফটক থেকে মাস্ক ব্যবহার করে, স্যানিটাইজার দিয়ে ভেতরে প্রবেশের নির্দেশনা দেয়া আছে।

সূত্র জানায়, মাসব্যাপী মেলায় এবার দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কসমেটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ-সামগ্রী, চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে। বাণিজ্যমেলা প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে খোলা থাকছে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৪০ টাকা ও শিশুদের ২০ টাকা। এছাড়া কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার থেকে মেলা প্রাঙ্গণে যাতায়াতের জন্য ৩০টি বিআরটিসির বাস চলবে। ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা। ইপিবি জানিয়েছে, দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
মেলায় স্টল নির্মাণ এখনো অব্যাহত প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, জেলখানায় থাকা কয়েদিদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনীর জন্য আমরা একটি স্টল বরাদ্দ পেয়েছি। তবে প্রথম বছর হিসেবে পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে স্টল নির্মাণে দেরি হয়ে গেছে। ফলে সময়মতো স্টল প্রস্তুত করতে পারিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)‘র সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী বলেন, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রবেশ ফটকে থাকা লোকজনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জরুরি সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীরা মেলা শুরুর আগে স্টল নির্মাণ না করায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে এ সপ্তাহে অর্থাৎ ৭ তারিখের মধ্যেই সব স্টল প্রস্তুত হয়ে যাবে। এ সময় তিনি পুরো প্যাভিলিয়নকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আশ্বাস দিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন