রাজধানীর পূর্বাচলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরে চলছে জমাজমাট বেচাকেনা। তবে করোনা পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়। প্রবেশপথ ছাড়াও তাদের পণ্য প্রদর্শনীর জন্য স্টলে স্টলে রাখা হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজর। নিরাপদ দূরত্ব রেখে, মাস্ক ব্যবহার করে মেলায় প্রবেশের জন্য মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ টিম।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত নতুন বিধি-নিষেধের পর জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তবে দর্শনার্থীর সংখ্যা কমার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা।
গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে ওমিক্রনসহ করোনা শনাক্তের হার বাড়তে থাকায় মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হলে জরিমানার বিধানসহ ১১ দফা বিধি-নিষেধ জারি করা হয়। আজ থেকে সারা দেশে এ বিধি-নিষেধ কার্যকর করা হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হয়। স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে সারা দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার নির্দেশ হিসেবে মেলায়ও থাকবে একাধিক টিম।
তবে রেস্তোরাঁয় বসে খেতে করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন নির্দেশনা ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মেলায় ঘুরতে আসা কেন্দুয়ার বাসিন্দা আজহারুল ইসলাম আজাহান বলেন, সবার টিকা সনদ ডাউনলোড করা হয়নি। এমনকি সবার টিকা নেয়া হয়নি। ফলে সাধারণ দর্শনার্থীরা হয়রানির শিকার হবেন। সবার টিকা প্রদান শেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার ছিলো।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ বন্ধ রাখতে হবে। তা ছাড়া রেস্তোরাঁয় বসে খেতে ও আবাসিক হোটেলে থাকতে অবশ্যই করোনার টিকা সনদ প্রদর্শন করতে হবে।
এ বিষয়ে ইপিবির সচিব ও মেলার পরিচালক মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করা হচ্ছে। যেহেতু স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা চলবে তাই দর্শনার্থী-ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবো তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মান্য করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, বিধি-নিষেধে গণজমায়েত বন্ধের শব্দটা কিছু কনফিউশন তৈরি করেছে। আমরা আশা করছি, পজিটিভ কিছু হবে।
মেলার ১২তম দিনে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মেলায় থাকা বিভিন্ন পণ্যের স্টলের পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে। স্টল পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। তা পালন জরুরি হলেও আমরা ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবো। কারণ তুলনামূলক দর্শনার্থী কমে আসবে। ফলে লেকসান গুনতে হবে। কালনী এলাকার বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আক্তারুজ্জামান বলেন, মেলার শুরু থেকে প্রবেশ পথে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মাইকিং করা হয়েছে। এখনো করা হচ্ছে। তবে দর্শনার্থীদের মাস্ক ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে।
যমুনা ইলেকট্রনিক্সের ব্র্যান্ড ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম বলেন, স্টল পেতে বরাদ্দ বাজেট, সাজসজ্জা ও কর্মচারী বেতনসহ বড় অংকের খরচ হয়ে গেছে। এখন করোনা ও ওমিক্রন মোকাবেলায় সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন। এতে নিঃসন্দেহে ক্রেতা কমে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা ব্যবসায়ীরা।
সব ধরনের লোক সমাগম বন্ধ করে নিয়ন্ত্রিত পর্যায় আনা জরুরি। শিমুলিয়ার বাসিন্দা সাবরিনা রুমি মীম বলেন, বিধি নিষেধ বাস্তবায়ন হলে দর্শনার্থী অর্ধেকে নেমে আসবে। এতে চরমভাবে লোকসান হবে ব্যবসায়ীদের।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার নুর জাহান আরা খাতুন বলেন, আগে জীবন রক্ষা পরে ব্যবসার চিন্তা। তাই সব শ্রেণি পেশার লোকদের স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি। বাণিজ্য মেলায় অভ্যন্তরে আমাদের দু’জন ডাক্তার নিয়োজিত আছে। তাদের সহযোগিতায় নার্সও রয়েছেন। ফলে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জরুরি সেবা অব্যাহত রয়েছে।
মেলায় বেসরকারি বিআরবি হাসপাতালে দায়িত্বরত কর্মকর্তা প্যাথলজিস্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিনামূল্য রক্ত পরীক্ষা, গ্রুপিং ও চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আরো চিকিৎসক দল এখানে সেবা দিবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন