ইসলামি ইরান সবসময়ই সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষা, সিরিয়ানদের মধ্যে সংলাপ, এবং ওই দেশটিতে টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে এবং আগামীতেও এ সমর্থন অব্যাহত থাকবে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা আলী আসগর খজি সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি গিয়ের পিটারসনের সঙ্গে সাক্ষাতে এ কথা জানিয়েছেন। পিটারসনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বর্তমানে তেহরান সফর করছেন। তিনি সিরিয়া ইস্যুতে জাতিসংঘের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন, রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সংকটের অবসান, সিরিয়ানদের মধ্যে সংলাপ প্রভৃতি ক্ষেত্রে ইরানের সমর্থনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১১ সালের জানুয়ারির দিকে সিরিয়া কঠিন ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়। শত্রুদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সিরিয়ার বৈধ সরকারকে উৎখাত করা এবং ওই দেশটিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করা। কিন্তু সিরিয়ার সরকার ও জনগণের তীব্র প্রতিরোধের কারণে শত্রুদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। বিগত বছরগুলোতে সিরিয়াকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সেদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা, বিদেশী দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো এবং আন্তর্জাতিক সমাজের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন।
মার্কিন সরকার দাবি করেছে, সিরিয়ায় তাদের সেনা উপস্থিতির উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবাধিকার রক্ষা ও মানবিক সাহায্য প্রদানে সহযোগিতা করা। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন হস্তক্ষেপের কারণে সিরিয়ায় আরো বেশি নিরাপত্তাহীনতা ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটেছে। এ অবস্থায় সিরিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে জাতিসংঘের নিরপেক্ষ মধ্যস্থতায় যে প্রচেষ্টা চলছে তা ইতিবাচক হবে বলে পর্যবেক্ষকরা আশা করছেন। তেহরান সফররত সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের প্রতিনিধি ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি বিশেষ করে দেশটির সাংবিধানিক কমিটির সংলাপ, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, সিরিয়ার জনগণের জন্য মানবিক সাহায্য প্রেরণ প্রভৃতি বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।
সম্প্রতি কাজাখস্তানের নুর সুলতান শহরে সিরিয়ার সরকার ও বিরোধী পক্ষের প্রতিনিধিরা, ইরান, রাশিয়া ও তুরস্কের প্রতিনিধিরা এবং পর্যবেক্ষক দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে চলতি বছরেই তেহরানে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে শীর্ষ সম্মেলনের প্রাক্কালে আগামী এপ্রিল অথবা জুলাইয়ে এসব দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সিরিয়া পুনর্গঠনের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে এসব বৈঠকে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা আলী আসগর খজি এ ব্যাপারে বলেছেন, 'জাতিসংঘসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার উচিত যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া'। তিনি বলেন, 'দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া, জনগণের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়া, শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনা, দেশ পুনর্গঠন প্রভৃতি ক্ষেত্রে চেষ্টা চালানো জরুরি হয়ে পড়েছে'।
যাইহোক, তেহরানে ইরানের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে জাতিসংঘ প্রতিনিধির বক্তব্য থেকে বোঝা যায় সিরিয়া সংকট সমাধানে ইরানের ইতিবাচক ভূমিকা বিষয়ে তারা অবহিত আছে এবং তেহরানের প্রতি তারা সন্তুষ্ট।
সূত্র: পার্সটুডে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন