বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

শরতের ছোঁয়া, তোমাকে ভালোবাসি

প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

না রা য় ণ চ ন্দ্র রা য়
১.
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ছয়টি ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। রূপে, গুণে, অপরূপ সমাহারে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশ। ষড়ঋতুগুলো হলোÑ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ষড়ঋতুর একটি হলো শরৎ। এখন শরৎকাল। বাংলায় শরৎ ঋতু প্রবাহমান। ষড়ঋতু সবার অত্যন্ত পছন্দের। পছন্দের হবে না কেন? এ ঋতুতেই কেবল চোখে পড়ে সাদা সাদা কাশফুল। সাদা সাদা কাশফুলের হাসি। ঘাস ফুলের হাসি। সাদা কাশফুলের নরম হাসি। সাদা কাশফুলের নরম স্পর্শ, নরম ছোঁয়া। ভোরের শিশির ফোটার ঝিকিমিকি হাসি। সকালের মিষ্টি রোদের মিষ্টি ছোঁয়া যেন অনাবিল আনন্দের হাতছানি দিয়ে ডাকে। নদী, বিল ও ঝিলের জলে মাছ রাঙার শিকার করে মাছ ধরা।
দল বেঁধে হাঁসগুলোর এলোমেলো ডুব সাঁতার।
আকাশে দল বেঁধে চিলের উড়াউড়ি। কা..কা.. সুরে কাকের গান গেয়ে চলা। ধানের খেতে বকের মাছ শিকার। সাদা সাদা কাশফুলের হাসির সঙ্গে শাপলা ও পদ্মফুলের হাসি যেন একাকার হয়ে যায়। কবি বলেছেনÑ
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে
পাবে নাকো তুমি,
সকল দেশের রানী
সে যে আমার জন্মভূমি।
হাজারো রূপের হাজারো গুণের, হাজারো পাখির, হাজারো গানের ও সুরের দেশ বাংলাদেশ। হাজারো কবির কবিতার দেশ বাংলাদেশ। হাজারো ছড়াকারের ছড়ার দেশ বাংলাদেশ। রংধনুর সাত রঙের দেশ বাংলাদেশ।
স্বপ্নের দেশ বাংলাদেশ।
সন্তানের কাছে মায়ের ¯েœহ, মায়ের আদর, মায়ের ভালোবাসা, মায়ের ছোঁয়া বা স্পর্শ পরম প্রাপ্তি। শরতের কাশফুলের নরম ছোঁয়া বা স্পর্শ ও ঠিক মায়ের আদর ¯েœহ ভালোবাসা এবং মায়া-মমতায় পরিপূর্ণ।
২.
হেমন্ত বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঋতু। ছয়টি ঋতুর সমন্বয়ে বাংলাদেশ গঠিত। একেক ঋতুর রয়েছে একেক বৈশিষ্ট্য। হেমন্ত সবার কাছে একটি প্রিয় ঋতু। কবি-ছড়াকার এবং লেখকদের কাছে তো বটেই, হেমন্তের সকাল সবার কাছে মিষ্টি লাগে। যখন হেমন্তের শিশির ফোঁটা ঘাসের ওপর টপটপ করে পড়ে তখন মিষ্টি রোদে শিশির ফোঁটা সোনার মতো চিকচিক করে হাসে। বাংলাদেশ আমার প্রাণের দেশ। গানের দেশ। সুরের দেশ। ছায়া সুনিবিড় সবুজের দেশ বাংলাদেশ। এ বাংলা নদীর জল আমার তৃষ্ণা মিটায়। নদী, পুকুর, খাল ও ঝিলের জলে ডুব সাঁতারে পাল্লা দিয়ে ছুটে বেড়ায় হাঁস। আকাশে উড়ে বেড়ায় গাঙচিল। মাছরাঙা শিকার করে বেড়ায় ঝিলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। হেমন্তের গানে কখনও কখনও সুর মিলায় ব্যাঙগুলো। ধানের ক্ষেতে, নদী পুকুর ও ঝিলের ধারে লুকিয়ে থাকা ব্যাঙগুলো একসঙ্গে কৃষকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে গেয়ে ওঠে গান। গাছের শীতল ছায়া পরম মমতায় আদর বুলিয়ে দেয় আমাদের। গাছের মগডালে বসে দোয়েল কয়েল ময়না শ্যামা গান গেয়ে যায় আপন সুরে।
.....
‘বাংলা আমার জীবনানন্দ
বাংলা প্রাণের সুর
আমি একবার দেখি
বার বার দেখি
দেখি বাংলার মুখ’
হেমন্ত ঋতুতে বাংলার কৃষকদের মুখে হাসি ফুটে উঠে। আনন্দের ঢেউ খেলে যায় মনে-প্রাণে। সর্বত্র বিরাজ করে আনন্দের জোয়ার। হেমন্তের আগমনের প্রতীক্ষায় বাংলার কৃষকরা অধীর আগ্রহ নিয়ে প্রহর গুনতে থাকে। হেমন্ত মানে নবান্ন। নবান্ন মানে নতুন উৎসব। নতুন মানে নতুন কিছু করা। হেমন্তে গ্রামের মানুষের মধ্যে উৎসবের সাজ সাজ রব পড়ে যায়। গ্রামে গ্রামে শুরু হয় নাবান্নের উৎসব। একদিকে ধান কাটার ধুম। অন্যদিকে নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা-পায়েস। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষেতে ফসল বপন করা এবং সেগুলো কেটে ঘরে তোলা অনেক কষ্টের। তারপরও কৃষকদের মনের ভিতরে বিন্দুমাত্র কষ্টের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় না। কষ্টের মধ্যেও যেন আনন্দের ঢেউ খেলা করে মনে-প্রাণে।
বাংলাদেশের রূপের শেষ নেই। গুণের শেষ নেই। হাজারো নদী জালের মতো ছড়িয়ে আছে বাংলাদেশকে ঘিরে। সাত সমুদ্র তের নদীর দেশ বাংলাদেশ। বাউল কবি একতারার সুরে সুরে গেয়ে যায় হাজারো গান। পাখিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় আকাশে। ফুলের বাগানে উড়ে বেড়ায় মৌমাছির দল। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ ভেসে বেড়ায় বাংলার আকাশে-বাতাসে। পাড়ার ছেলেরা মেতে ওঠে ঘুড়ি খেলায়। কেউ কেউ মগ্ন থাকে গোল্লাছুট, কানামাছি খেলায়। কবি বলেছেনÑ ‘পাড়ার সকল ছেলে মোরা ভাই ভাই/এক সাথে খেলি আর পাঠশালে যাই।’
নবান্নের উৎস বাংলার চিরাচরিত রূপ। এটি গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। নবান্নের উৎসবে মেতে উঠে পাড়া।
মেতে উঠে রাখাল বালক। নবান্নের আনন্দ কৃষকের মনে সদা জাগ্রত। কৃষকরা যেন মনে মনে বলে উঠে হেমন্ত তোমায় ভালোবাসি। আহা! কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন