করোনা সংক্রমণ প্রতিদিনই লাগামহীন বৃদ্ধির মুখেও দক্ষিণাঞ্চলে গণপরিবহনে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বালাই নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করলেও পরিস্থিতির কোন পরির্বতন হচ্ছে না। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এখন পর্যন্ত সবুজ অঞ্চলের আওতাভুক্ত বরিশাল বিভাগে প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার ও সংখ্যা বাড়ছে। ইতোমধ্যে চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনেই এ অঞ্চলে করোনা রোগী আগের দু’মাসের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলে নতুন ৩৮ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। একদিনে আক্রান্তের এ সংখ্যা আগের দু’মাসের যেকোন দিনের চেয়ে বেশি।
অথচ মানুষের মধ্যে মাস্ক পরিধান থেকে শুরু করে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের কোন আগ্রহ নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগও প্রশাসনকে চিঠিপত্র দেয়ার মধ্যেই তাদের তৎপড়তা সীমাবদ্ধ রাখছে। আর জেলা ও স্থানীয় সরকার প্রশাসনও এখন পর্যন্ত যথেষ্ঠ নিরুদ্বিগ্ন। এমনকি নগর ভবনের তরফ থেকেও বরিশাল মহানগরীতে নূন্যতম কোন মাইকিং পর্যন্ত করা হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনও এখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ কোন ধরনের প্রচার প্রচরণা শুরু করেনি।
কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সীমাহীন উদাসীনতার মধ্যেই গণপরিবহনও চলছে তাদের মত করেই। সিটপ্রতি যাত্রী নিয়ে চলাচলের সরকারি বিধিনিষেধ নিজেদের মত করে তুলে নিয়ে বাস, লঞ্চসহ সবধরনের যানবাহনেই যে যেভাবে পারছে যাত্রী পরিবহন করছে। আর যাত্রীদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে কোন সচেতনতা লক্ষণীয় নয়।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা থেকে প্রতিদিন শতাধিক বহুতল নৌযান রাজধানীতে যাত্রী পরিবহন করছে। এছাড়াও বরিশাল, পটুযাখালী ও ভোলা নদী বন্দর থেকেও প্রায় ৫০টি নৌযান যাত্রী পরিবহন করছে। শুধুমাত্র নৌপথেই দক্ষিণাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন রুটে ন্যূনতম অর্ধ লক্ষাধিক যাত্রী ভ্রমণ করে থাকে।
সড়ক পথেও এ অঞ্চলের প্রায় ২০টি রুট ছাড়াও রাজধানী ঢাকা এবং খুলানা ও রাজশাহী বিভাগের সাথে দুই শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বাসেও প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু সব যানবাহনেই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধিও অনুপস্থিত। যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার দূরের কথা, নৌযানগুলোতে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রেখেও ভ্রমণ করছেন না কোন যাত্রী। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দরের সাথে রাজধানীর প্রতিদিন প্রায় ২৫টি নৌযান চলাচল করলেও সেখানেও ন্যূনতম কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই। প্রতিটি নৌযানের লোয়ার ডেক থেকে আপার ডেকে যাত্রীদের অসম্ভব গাদাগাদি করেই চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল বন্দর কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, আমরা প্রায়ই বন্দরে মাইকিং করে যাত্রীদের করোনা সম্পর্কে সতর্ক করছি। তবে এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন আরো কঠোর ভূমিকা পালন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
বরিশাল জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ জনে উন্নীত হয়েছে। যা আগের দিন ছিল ২০। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম ১৭ দিনেই এ অঞ্চলে ১৫৯ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হল। যার সিংহভাগই বরিশাল মহানগরীতে। গত ২৪ ঘণ্টায়ও মহানগরীতে ৯ জনসহ বরিশাল জেলাতেই ১৫ জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এসময়ে পিরোজপুরে ৯, ঝালকাঠিতে ৭, ভোলায় ৫ এবং পটুয়াখালীতে আরো দু’জনের দেহে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হল। এ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় মোট করোনা পজিটিভ শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৫ হাজার ৫১২ জনে। মৃত্যু হয়েছে ৬৭৯ জনের। আর আক্রান্ত ও মৃতের এ সংখ্যার মধ্যেও এখনো শীর্ষে বরিশাল মহানগরী। গোটা বিভাগের মাত্র ৬% জনসংখ্যার এ নগরীতে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১১ হাজারের ওপরে। মারা গেছেন ১০২ জন। আর মহানগরীসহ বরিশাল জেলায় আক্রান্ত ১৮ হাজার ৪১৫ জনের মধ্যে ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন