শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ‘এসএমই ই-ডাটাবেজে’ নিবন্ধিত হলে খুব সহজেই সকাল প্রকার সেবা পাবেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত শিল্পসমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গঠনের লক্ষ্যে ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে চূড়ান্ত উত্তরণ, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের নিরলসভাবে কাজ করতে হবে।’
শিল্পমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পর্যটন ভবন মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশের চারটি উপজেলায় এসএমই ‘ই-ডাটাবেজ’ প্রণয়নের পাইলট কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান।
এসএমই পলিসিতে দেশের সকল ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তার (এসএমই) তথ্য ভান্ডার সন্নিবেশনের নির্দেশনা আছে উল্লেখ করে নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আশা প্রকাশ করেন, এসএমই ডাটাবেজ প্রণয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং এটুআই’র যৌথ প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হবে।
অন্যান্যের মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান ও এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ শিল্প ও ব্যবসা কুটির শিল্প এবং এমএসএমই খাতের আওতাভূক্ত। এসব খাত দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ৭০ শতাংশই নিয়ন্ত্রণ করে। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সৃষ্টি হচ্ছে এসএমই খাতে। এসএমই খাত মোট অভ্যন্তরীণ শিল্পপণ্য চাহিদার শতকরা ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ যোগান দিয়ে থাকে। তাই এসএমই ই-ডাটাবেজ কার্যক্রম অত্যন্ত সময়োপযোগী উদ্যোগ।
দেশের সকল এসএমই উদ্যোক্তার তথ্য একই প্ল্যাটফর্মে পাওয়া গেলে এই খাতের উন্নয়নে সরকারের নীতি নির্ধারণ সহজ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মসূচি অর্থনীতির প্রাণ এমএসএমই খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় এসএমই খাতকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘নিয়মিত হালনাগাদকৃত ডাটাবেজ না থাকার ফলে আমাদের প্রায়ই সিএমএসএমই খাত নিয়ে নানাবিধ নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেগ পেতে হত। তাই এসএমই ফাউন্ডেশন ও এটুআই’র এ উদ্যোগ সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত।’
প্রতিমন্ত্রী, এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে এই কাজ অব্যহত রাখতে এবং দেশের সকল সিএমএসএমই’কে কিভাবে এ ডাটাবেজের আওতায় আনা যায় তার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে এটুআই’র প্রতি আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি সকল সিএমএসএমই যেন তাদের সংশ্লিষ্ট সকল সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে পায় তা নিশ্চিত করতেও তিনি এটুআই ও এসএমই ফাউন্ডেশনকে অনুরোধ জানান।
অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এটুআই এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এসএমই ‘ই-ডাটাবেজ’ তৈরির কাজ শিগগিরই শেষ হবে। তিনি বলেন, এটি সম্পন্ন হলে উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, পণ্য বাজারজাতকরণ এবং পণ্যের মানোন্নয়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ২০১৯ সালে প্রণীত এসএমই নীতিমালায় ২০২৪ সালের মধ্যে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান বর্তমান ২৫ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। তিনি জানান, এ খাতের উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এটুআই’র সহযোগিতায় এসএমই ‘ই-ডাটাবেজ’ সরকারের নীতি নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এদিকে, এসএমই ফউিন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ বলা হয়, এসএমই ফাউন্ডেশন এটুআই’র সহযোগিতায় দেশব্যাপী এসএমই ‘ই-ডাটাবেজ’ তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ডাটাবেজ তৈরি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে ঢাকার শ্যামপুর, বগুড়ার আদমদীঘি, পিরোজপুরের নেছারাবাদ এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরব এ চারটি উপজেলা বা থানায় পাইলট কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, www.smef.nise.gov.bd এই ওয়েব লিংকে লগইন করে একজন উদ্যোক্তা নিজে/ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সহায়তায়/এসএমই ক্লাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এসএমই ‘ই-ডাটাবেজের’ জন্য নিজেদের তথ্য আপলোড করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যূরো পরিচালিত সবর্শেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী দেশের মোট ৭৮ লাখেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯ ভাগের বেশি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন