শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিতে বিএসটিআইতে আরও অত্যাধুনিক ৮৯টি ল্যাবরেটরি চালু হচ্ছে- শিল্পমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০২২, ৫:৪৪ পিএম

পণ্যের মান এবং ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিত করার জন্য বিএসটিআইকে বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হচ্ছে জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, বিএসটিআই সক্ষমতার দিক থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বিএসটিআই পণ্যের মান প্রণয়ন, পরীক্ষণ, মান সনদ প্রদান, সঠিক ওজন ও পরিমাপের নিশ্চয়তা বিধান, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস সনদ প্রদানের পাশাপাশি দেশিয় পণ্যের রফতানি বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে হালাল সার্টিফিকেট প্রদান শুরু করেছে। এ কার্যক্রম রফতানি বাণিজ্যে বিশাল ভূমিকা রাখবে। পণ্য পরীক্ষণ এবং ওজন ও পরিমাপের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে বিএসটিআইতে আরও অত্যাধুনিক ৮৯টি ল্যাবরেটরি স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।

রোববার (২২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওস্থ বিএসটিআই প্রধান কার্যালয়ের বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস-২০২২ উপলক্ষে বিএসটিআই আয়োজিত ‘গবঃৎড়ষড়মু রহ ঃযব উরমরঃধষ ঊৎধ’ অর্থাৎ ‘ডিজিটিাল যুগে পরিমাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিএসটিআই’র মহাপরিচালক ড. মো. নজরুল আনোয়ারের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন পরিচালক (মেট্রোলজি) প্রকৌ. মো. সাজ্জাদুল বারী। এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিএসটিআই’র কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ, মান প্রণয়নে বিশেষজ্ঞগণ, শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, স্টেকহোল্ডার ও সাংবাদিকবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

 

বিএসটিআই’র সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কের কথা স্মরণ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে বিএসটিআই আন্তর্জাতিক মান সংস্থা- আইএসও এর সদস্যভুক্ত হয় এবং ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ ঈড়ফবী অষরসবহঃ অৎরঁং ঈড়সসরংংরড়হ (ঈঅঈ) এর ন্যাশনাল কোডেক্স কনট্যাক্ট পয়েন্ট (এনসিসিপি) এর সদস্যপদ লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকেই একটি শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। বিএসটিআই’র টেস্ট রিপোর্ট যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য হয় সে লক্ষ্যে সরকার ও বিএসটিআই কাজ করে যাচ্ছে। পণ্য উৎপাদনে পরিমাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হয় সেজন্য লেনদেনের ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত মান ও সঠিক পরিমাপের পণ্য নিশ্চিত করতে হবে।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, পণ্যের মান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন-সরবরাহ এবং ওজনে কারচুপি রোধকল্পে বিএসটিআই নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে লাইসেন্সবিহীন, নকল পণ্য উৎপাদনকারি ও পরিমাপে কারচূপিকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীগণ সর্তক হচ্ছে এবং জনগণ সঠিক ওজন ও পরিমাপে পণ্য পাচ্ছেন। এছাড়া বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরিতে রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্প, ঔষধ শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত ওজন ও পরিমাপক যন্ত্র ক্যালিব্রেশন সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

শিল্প সচিব বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে বিএসটিআই’র কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় আনার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিএসটিআই’র মানচিহ্ন ও লাইসেন্সের অনৈতিক ব্যবহার রোধকল্পে ওয়েববেইজড কিউআর কোড সম্বলিত সফটওয়্যার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে। ফলে ভোক্তাসাধারণ মোবাইল ফোনে এ্যাপসের মাধ্যমে পণ্যের অনুকূলে প্রদত্ত বিএসটিআই লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ও আমদানি ছাড়পত্রের সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন। এছাড়া এ সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকগণ ওজন ও পরিমাপ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম যথা: মোড়কজাত পণ্যের নিবন্ধন, ক্যালিব্রেশন সনদ ও ভেরিফিকেশন সনদের তথ্য সহজে যাচাই করতে পারবেন।

প্রতিটি স্থল বন্দরে বিএসটিআই’র অফিস স্থাপনের প্রস্তাব করে এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের যেসকল স্থল বন্দর রয়েছে তার প্রতিটি স্থল বন্দরে বিএসটিআই’র ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হলে আমদানি-রপ্তানি অনেক গতিশীল হবে। তাছাড়া বাংলাদেশের পণ্য ভারতে রফতানির জন্য বিএসটিআই’র সার্টিফিকেট ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যেন গ্রহণ করে সেজন্য উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব করেন। ফলে বাংলাদেশের খাদ্য পণ্য রফতানি অনেক বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া তিনি দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় স্থানীয় চেম্বার প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিকে সম্পৃক্ত করারও প্রস্তাব করেন। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর কর্মকান্ডের দায়ভার ব্যবসায়ী সংগঠন নিবে না। তিনি বিএসটিআইকে এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

মানসম্পন্ন পণ্য এবং সঠিক ওজন ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণে মাঠ পর্যায়ে বিএসটিআই’র সেবা সম্প্রসারণের জন্য ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়সহ স্থাপনসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, নতুন নতুন ল্যাবরেটরি স্থাপন ও বিদ্যামান ল্যবরেটরিসমূহের সম্প্রসারণ, মানচিহ্ন নকল প্রতিরোধে অনলাইন কিউআর কোড সম্বলিত লাইসেন্স/সার্টিফিকেট প্রদান, স্বর্ণের বিশুদ্ধতা যাচাইপূর্বক সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক তথ্য তুলে ধরেন বিএসটিআই’র মহাপরিচালক। তিনি বলেন, শিল্প কারখানা বৃদ্ধি ও বর্তমান চাহিদা বিবেচনায় পদার্থ, রসায়ন ও মেট্রোলজি ল্যাব আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিএসটিআই’র সেবাকে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। রফতানি সম্প্রসারণের জন্য পণ্যের হালাল সনদ দেয়া শুরু হয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন