শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সম্মানবোধ থাকলে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ঢাবিতে শিক্ষকদের প্রতীকী অনশন শাবি ভিসিকে প্রফেসর আনু মুহাম্মদ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ দ্রুত নিশ্চিতের দাবি ইউট্যাবের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রতীকী অনশন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। গতকাল সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা এই প্রতীকী অনশন শুরু করেন। ‘শিক্ষার্থীদের তাজা প্রাণের বিনিময়ে উপাচার্যের গদি রক্ষা নয়’ শীর্ষক এই কর্মসূচি বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। সেখানে অন্তত ২০ জন শিক্ষক সংহতি জানিয়ে ‘প্রতীকী অনশন’ কর্মসূচিতে অংশ নেন।

কর্মসূচিতে ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আনু মুহাম্মদ বলেন, সম্মানবোধ থাকলে আপনি পদত্যাগ করেন। আপনার জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের। আপনি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনের আন্দোলনকে পুঁজি করে ভিসি হয়েছেন। অনেক অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে। এসমস্ত বিষয় নিয়ে নিজেকে আর না পচিয়ে আপনি অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। প্রাণ বাঁচুক, বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচুক। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অব্যাহত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক।

শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনগুলোর ‘নীরব’ ভূমিকার সমালোচনা করেন আনু মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনশন করছে। তারা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আন্দোলন করলেও এটা সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মেরামত করার জন্য, বড় ধরনের পরিবর্তনের লড়াইকে শক্তিশালী করছে। সেজন্য আমরা তাদের প্রতি ভালোবাসা ও সংহতি জানাই। কিন্তু শিক্ষক সমিতি বা ফেডারেশনগুলোর ভূমিকা লজ্জাজনক। তারা শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করার চাইতে যেভাবে সরকারের বা প্রশাসনের স্বার্থ রক্ষার্থে নিয়োজিত আছে, তাতে শিক্ষকদের মর্যাদা সংকটে ফেলেছে। আমরা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকের প্রতি আহ্বান জানাই, শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত।

বর্তমানে ‘মেরুণ্ডহীন ব্যক্তিদের’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং তারা বিশেষ সুবিধা পান বলে দাব করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এ প্রফেসর।

তিনি বলেন, আজকে পরিস্থিতিটা এমন, ভিসি নিয়োগের জন্য তাদের মেধা, শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার জন্য তাদের ভূমিকা বিচার্য বিষয় নয়। বিচার্য বিষয় হচ্ছে তারা কতটা আনুগত্য দেখাতে পারবেন সরকারের প্রতি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, যে পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেটাই আসলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটের মূল কারণ। এখানে আসলে তার একাডেমিক যোগ্যতার চেয়ে, গবেষণার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় তার মেরুদণ্ড কত নরম। নরম মেরুদণ্ডের শিক্ষককে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া অন্য শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রফেসর রেহনুমা আহমেদ, একই বিভাগের প্রফেসর সাঈদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মো. কামরুল হাসান, হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোশাহিদা সুলতানা, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের কাজী মারুফুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, নৃবিজ্ঞান বিভগের সহযোগী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ফাহিরনা দূর্রাত, ব্যবস্থাপনা বিভাগের তাহনিমা খানম, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।

এদিকে শাবিপ্রবির সাধারণ শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরম অবহেলা ও পুলিশ-ছাত্রলীগ কর্তৃক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা এবং আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। গতকাল এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, অনশন করতে গিয়ে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। তবুও সঙ্কট নিরসনে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যত কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে শাবিপ্রবির শিক্ষার পরিবেশ আরো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আসলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সর্বত্র দলীয়করণের নজির সৃষ্টি করেছে। তারই একটি নমুনা শাবিপ্রবির ঘটনা। বিদ্যমান অবৈধ অগণতান্ত্রিক সরকারের পদলেহী ভিসি ও সরকারের পেটোয়া পুলিশ বাহিনী কর্তৃক শাবিপ্রবিতে ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে আন্দোলনরত নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি ও বর্বর হামলার ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানাই এবং তাদের ওপর হামলার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দোষীদেরকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাই। সেইসাথে অবিলম্বে শাবিপ্রবির ভিসির অপসারণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে দেয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৩ জানুয়ারি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে পুলিশের বলপ্রয়োগের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে উক্ত হলের প্রভোস্ট পদত্যাগ করেন। আন্দোলন পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মূল দাবি পূরণ হওয়া সত্ত্বেও ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। বিষয়টি অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং উদ্বেগের। যা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। এতে আরো বলা হয়, চলমান পরিস্থিতিতে গতকাল আন্দোলনকারীরা হঠাৎ করেই ভিসির বাসার পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, যা অমানবিক।

শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে কোন সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার্থীদের বাইরে তৃতীয় একটি পক্ষ চলমান আন্দোলনকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন