আজ সোমবার (১৪ ই ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের অন্যতম ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস’ সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সকল সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে ভালোবাসে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনার পরেও সে ভালোবাসা টিকে আছে ‘বিষন্ন সুন্দর’ হয়ে। গুটি গুটি পায়ে ৩১ বসন্ত পেরিয়ে আজ ৩২ এ পা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ উপলক্ষে গতকাল মরিচ বাতি দিয়ে ক্যাম্পাস সাজিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সৈয়দ শামসুল হকের ‘নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়’ কবিতার সাথে মিলিয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ভালোবাসার সংসার’ হিসেবে বিবেচনা করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সৃষ্ট অচলাবস্থার সাথে তুলনা করে ‘বড় নষ্ট যখন সংসার’ বলা যেতে পারে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ‘নিলক্ষার নীলের বড় চাঁদ’ এর মতো করে ভালোবাসা ও শান্তির প্রত্যাশা জানিয়ে গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসকে অতীতের মতো করে পালনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের সাথে সাথে দিনটিকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সময় ধরে আমাদের ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও ভালোবাসা দিবসে সেই দূরত্ব ও সংকোচ দূর করতে চাই। আমি আশাকরি আমরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে একত্র হয়ে আমাদের ভালোবাসা দিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করবো।
এ কাজে পূর্বের মতো করে আমেজ ফিরিয়ে আনতে বরারবের মতো নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এর পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরবর্তীতে শোভাযাত্রা ও কেক কাটার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন কর্মসূচি শেষ হয়।
এ সময় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, বিভিন্ন এজেন্সি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবদান ও সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, যেকোনো কারণেই হউক আপনারা সবাই জানেন যে আমাদের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে, তাদের শিক্ষাজীবনে একটা দাগ লেগেছে। আমরা সবাই মিলে যাতে তাদের ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারি সেজন্য আমরা একযোগে কাজ করবো। এসময় শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ তোমরা সবাই মনোযোগ দিয়ে আগে যেভাবে পড়াশোনা করেছো এভাবে করো ( পড়াশোনা)। আমরা তোমাদের পাশে আছি, যেকোনো সমস্যায় তোমাদের সাথে থাকবো।
ভিসি বলেন, আমি আসার পর থেকে ১৪ টি বাস কিনেছি। এ বছর আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা আরো ৪টি বড় বাস কিনার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। দুই বছরের করোনাকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টংগুলো ধ্বসে পড়েছে। আমরা এর ব্যবস্থা নিয়ে আধুনিক টং আমরা বানাচ্ছি। আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে এত টং হবে যে শিক্ষার্থীদের খাবারের কোনো রকম সমস্যা থাকবে না।
সিলেটবাসীদের দীর্ঘ ৭০ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম ও সিলেটের কৃতী সন্তান হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনবদ্য অবদানে ১৯৮৫ সালে রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ঘোষণার পর ১৯৮৬ সালের ২৫ আগস্ট সিলেট শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে কুমারগাঁওয়ে ৩২০ একর জমির ওপর শাবির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ৩টি বিভাগ, ১৩ জন শিক্ষক ও ২০৫ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিগত বছরগুলোতে ১৩ ফেব্রুয়ারিতেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত গত কয়েকবছর ধরে পহেলা ফাল্গুনের সাথে মিলিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৩০ বছর অবকাঠামোগত দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সীমানা প্রাচীরের অভাব কাটিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে নানান স্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। উদ্ভাবন, গবেষণা ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবট, ড্রোন, সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা, মোবাইল ফোনে ভর্তিপ্রক্রিয়া, ই-পেমেন্টসহ তথ্যপ্রযুক্তির শাখায় নানা উদ্ভাবনে নিজেদের খ্যাতি অর্জন করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। এছাড়াও প্রথমবারের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১৯৯৯ সালে শাবিতে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক স্থাপন, ভর্তির আবেদন ভোগান্তি রোধে ২০০৯ সালে মুঠোফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া চালু, ২০১৩ সালে বিশ্বের প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’ উদ্ভাবন করে শাবি। এছাড়াও রোবট ‘রিবো’ ও ‘লি’ নির্মাণ, ‘নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ-২০১৮’-এ ‘বেস্ট ইউজ অব ডেটা’ ক্যাটাগরিতে ‘টিম অলিক’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হকের নেতৃত্বে ৫ থেকে ১০ মিনিটে, ৫০০ টাকার কম খরচে ক্যান্সার শনাক্তকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন একুশে বাংলা কিবোর্ড তৈরি, ট্র্যাকিং ডিভাইসে যানবাহনের লোকেশান ট্র্যাকিং, ড্রোন বানিয়ে পাখির চোখে ক্যাম্পাস দেখা, দেশের সবগুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো দেশসেরা ‘ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন ও দেশের বাইরে গুগল,মাইক্রোসফট, ফেসবুক, অ্যামাজনের মতো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে চাকরীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিযুক্ত রয়েছেন শাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন