গুরু ড. জাফর ইকবাল শাবি ভিসিকে দানব বলে মন্তব্য করেছিলেন। আর যাই কোথায়, তার প্রিয় শিষ্যরা সেই ভিসিকে তারা নামিয়ে দিয়েছে ফুটবলে। তারপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বিরোধী প্রীতি ফুটবল ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে, যেখানে ফুটবলে গায়ে উপাচার্যের নাম লিখে তারা ম্যাচ খেলেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল গ্রাউন্ডে এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা। ওই টুর্নামেন্টের ছবি ও সংবাদ প্রকাশ হয়ে পড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এরপর শুরু হয় নেট দুনিয়ায় বিবেকী প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকে এহেন কর্মকান্ডকে হীন মানসকিতার পরিচয় বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে এটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেকের সহানুভূতি হারাবে বলে মন্তব্য করেন। সেই সাথে কেউ বলেন,এটা চরম অসভ্যতা, বর্বরতা এবং মানবসভ্যতার মধ্যে পড়ে না। এজন্য স্যারের পা ধওে ক্ষমা চ্ওায়া উচিত। নতুবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা হবে ভয়ানক নজির।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিবেশ সংগঠক আব্দুল করিম কিম শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনকে হটকারি হিসেবে মন্তব্য করে ফেসবুকে লেখেন, ‘ফুটবলে ফরিদ লিখে লাথি দেয়াটা মানা গেলো না। সীমা অতিক্রম করার একটা সীমাও আছে। এ বস্তির কোন ঝগড়া নয়। একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দ্বন্দ্ব। সারাদেশের মানুষ যে অহিংস আন্দোলনে সহমর্মিতা দেখিয়েছে, এই একটি হটকারি কাজ সবাইকে এই সিদ্ধান্তে নিয়ে যেতে পারে যে, ছেলেমেয়েগুলোতো আসলেই বেয়াদব।’ আমেরিকা প্রবাসী সাংবাদিক আব্দুল আহাদ লিখেছেন,
ফেসবুকে এমন ছবি কখনও আশা করিনি!! সিলেটের সর্বোচ্ছ বিদ্যাপিঠের পবিত্র অঙ্গনে শিক্ষার্থীদের দ্বারা এমন নোংরামী অসুস্থ মানসিকতার চরম বহিঃ প্রকাশ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীগন তাদের নিজ প্রতিষ্টানের উপাচার্যের নাম ফুটবলের গায়ে লিখে সেই ফুটবলকে লাথি দিয়ে খেলার মানসিকতা প্রমান দেয় বাংলাদেশের বস্তিগুলো থেকে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরত্ব খুব বেশী দূনে নয়। একরাশ দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়া ধিক্কার জানানোর ভাষা নেই............। সিলেট তথা দেশের আর কোন শিক্ষাঙ্গনের ইতিহাসে এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নেই!!
ফ্রান্স প্রবাসী সাংবাদিক শাহ সুহেল লিখেছেন, এমন নজির আছে কিনা আমার জানা নেই!!
আন্দোলন তো নয়ই, এটা বেয়াদবিও নয়। এটা চরম অসভ্যতা, বর্বরতা। কোনোভাবেই, কোনো কারণেই একজন শিক্ষকের নাম একটা কিছুতে লিখে সেটা পা দিয়ে লাত্থালাত্থি করবে, এটা মানবসভ্যতার মধ্যে পড়ে না।
শাবির ভিসি বিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেটা করেছে, এজন্য তারা স্যারের পা ধরে ক্ষমা চাওয়া উচিত। এবং আবারও প্রেস ব্রিফিং করে জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ করা জরুরি । নতুবা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা হবে এক ভয়ানক নজির!
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ব্যাংকার এম আনোয়ার হোসেন রনি লেখেন, ‘প্রতিবাদের ভাষা এবং পথ যখন সীমা লঙ্ঘন করে তখন একটা ন্যায্য আন্দোলনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এ অপ্রত্যাশিত, দুঃখজনক।’ খোন্দকার শাহিদুল হক ফেসবুকে মন্তব্য লিখেন, ‘এটাও চরম অপরাধ। তবে রক্ষিত তপন নামের একজন ফেসবুকে এর জবাবে লেখেন, আসল অপরাধীদের লজ্জাবোধ এর চেয়েও কম।’ ফুজেল আহমদ নামের এক প্রবাসী ফেসবুকে লেখেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছে এমন প্রতিবাদ খুবই পুওর মেন্টালিটির পরিচয় বহন করে। এরাই আবার এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হবে।’ এটা কি কোনো প্রতিবাদ হতে পারে, প্রশ্ন রাখেন শাহআলম সজীব।
সংস্কৃতিকর্মী দেবজ্যোতি দেবু ফেসবুকে লেখেন, ‘এটা অনেকটাই বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। হাজার হোক তিনি শিক্ষক এবং সাস্টের শিক্ষার্থীদের এখন পর্যন্ত পুরো আন্দোলনটাই মার্জিত ছিল। এভাবে বিতর্কের জন্ম দেওয়া উচিত হয়নি।’
রাজনীতিক সংগঠক ্ও উদীয়মান ব্যবসায়ী মাহফুজ হাসান তান্না লিখেছেন, প্রান প্রিয় শিক্ষক ও আমার মা (আমি শিক্ষিকা এর সন্তান) মহোদয়গণ আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যায় ভর্তি হতে পারি নাই। অনেক দুঃখ ছিল কিন্তু আজকে এই ফুটবল দেখে সব দুঃখ কষ্ট চলে গেছে। আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে ভর্তি হলে হয়তোবা তাদের মতো বেয়াদ্দব শিক্ষার্থী হিসেবে স্বীকৃতি পাইতাম।
তাদের চোখে হয়তো এটি একটি মুক্তমনা টুর্ণামেন্ট! জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে মুক্তমনা ফুটবল খেলো। মনে রাখতে হবে সকল প্রকার কল্যানকর শক্তির উৎস হচ্ছে জ্ঞ্যান। আর জ্ঞ্যান অর্জনের প্রথম ও প্রধান যোগ্যতা শিষ্টতা বা আদব।। শাবিপ্রবিতে বেয়াদ্দব শিক্ষার্থীরা ভিসি স্যার নাম লিখে শেষ পর্যন্ত ফুটবল এ লাথি মারলো । ছিঃ ছিঃ তাঁরা নাকি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাই। এটাই প্রমাণিত ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো শিক্ষার্থী তৈরি হয় না, কিছু বেয়াদ্দব ও মুক্তমনা গাঁজাখুর ও তৈরি হয়।
এদিকে, এমন আয়োজন সম্পর্কে জানতে আয়োজকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অপরদিকে, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকার দলীয় স্থানীয় এক শীর্ষ নেতা বলেন, ঘটনাটি নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্র। ্ওই ছাত্রদের প্রিয় গুরু ভিসিকে ‘দানব’ বলে মন্তব্য করেছেন। তার কথায় অনশন ভেঙ্গেছে তারা। সিলেটের কারো কথা রাখেনি। এমনকি তাদের বিদ্যাপিঠের শিক্ষকদেরর অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন তারা। তারপর গুরু হাতে অনশন ভাঙ্গল। সেই গুরু দানব দিয়ে শুরু করলেন তার শিষ্যরা ফুটবলে নামিয়ে দিলো ভিসিকে। এহেন কর্মকান্ড সকলের জন্য লজ্জার।
গত বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে শিক্ষার্থীদের দেখতে আসেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এদিন সকালে অনশনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে তাদের অনশন ভাঙান। শিক্ষার্থীদের মৃত্যুপথযাত্রা সত্ত্বেও উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের চুপ হয়ে থাকায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ ড. জাফর ইকবাল উপাচাযর্কে ‘দানব’ বলেও মন্তব্য করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন