গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে মারামারি করে ৪টি এবং ইনফেকশনাল ডিজিজে অপর ৫টি জেব্রা মারা গেছে। এ বিষয়ে গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও পার্কের সাবেক চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ আজ মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ জানান, হঠাৎ করে গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রাগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া ৯টির মধ্যে ৭টি স্ত্রী জেব্রা ও ২টি পুরুষ।
তিনি আরও জানান, পার্কে বর্তমানে মোট ২২টি জেব্রা আছে। সেগুলোর মধ্যে ৮টি স্ত্রী ও ১৪টি পুরুষ জেব্রা।
৮টি স্ত্রী জেব্রার সবগুলোই এ মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা উল্লেখ করে তিনি জানান, জেব্রাগুলোকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
৯টি জেব্রা মৃত্যুর ঘটনার অনুসন্ধানে ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গত ১৯ জানুয়ারি ৬ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল। বোর্ডের অন্যান্য সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম, গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. উকিল উদ্দিন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক ডা. মো. আবু হাদী নূর আলী খান, ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কাজী রফিকুল ইসলাম ও সাফারি পার্কের চিকিৎসক জুলকার নাইন।
আজ মেডিকেল বোর্ডের সভায় জেব্রার নিরাপদ আবাসনের জন্য মোট ১০ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হলো-জেব্রাগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। যেখান থেকে জেব্রাগুলোকে ঘাস দেওয়া হতো, সেখান থেকে ঘাস সরবরাহ আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। যেসব ব্যাকটেরিয়ার ভ্যাকসিন নেই সেসব ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচাতে খাবারের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক পাউডার ব্যবহার করতে হবে। খাবারগুলো টুকরো করে কেটে ট্রের মধ্যে পানিতে করে দিতে হবে।
জেব্রাগুলো আগে কেন মারামারি করেনি, এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. এ বি এম শহীদুল্লাহ বলেন, 'পুরুষ জেব্রাগুলোর মধ্যে কে আগে প্রজনন করবে সেজন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি লেগে যায়। চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কেও এ রকম ঘটনা ঘটে থাকে, এটি নতুন নয়।'
পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, 'সাফারি পার্কে চিকিৎসক জনবল কম। প্রাণি চিকিৎসায় ৫ জনের একটি সেটআপের প্রস্তাব করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তা থেকেই মেডিক্যাল বোর্ড উল্লেখিত কারণগুলো চিহ্নিত করেছেন।'
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান জানান, এ সাফারি পার্কের মতো এমন জাত ও সংখ্যাধিক্য জেব্রা দেশের কোথাও নেই। আগে জেব্রার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে জেব্রার গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে এবং এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে জেব্রা মারা যাচ্ছে।
গত ২ জানুয়ারি থেকে জেব্রাগুলো মারা যেতে থাকে। তবে কয়েকটি অসুস্থ জেব্রাকে চিকিৎসা দেওয়ার পর সুস্থও হয়েছে বলে জানান তিনি।
সাফারি পার্ক সূত্র জানায়, পার্কের যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই জেব্রার পালে নতুন অতিথি যুক্ত হচ্ছিল। গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে করোনা সময়ে জেব্রার ভালো প্রজনন হয়। যেভাবে জেব্রার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছিল, তাতে কর্তৃপক্ষ বেশ আশাবাদী ছিল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও জেব্রা রপ্তানির একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন