শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পোশাক খাতে সবুজ কারখানা গড়ে তোলার তাগিদ

সিপিডির সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা কয়লাভিত্তিক ১০ প্রকল্প বাতিল করেছে সরকার : সাবের হোসেন চৌধুরী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশের প্রধান রফতানিখাত তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এ খাতে নিয়োজিত কর্মীদের জীবন মানে পরিবর্তন, সবুজ-পরিচ্ছন্ন জ্বালানি তৈরি, কারখানা পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে এর সুফল পাবে পুরো অর্থনীতি।

গতকাল রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডাযলগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ সুরক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম প্রমুখ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন ঘাটতি, নীতি সহায়তা, সচেতনার অভাবসহ নানা চ্যালেঞ্জও আছে দেশের পোশাকখাতে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করে সিপিডি।

সিপিডির মতে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত যেখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ। যা মোট রফতানির ৮৪ শতাংশের বেশি। রফতানির এই আয় বাড়াতে হলে বেশকিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এ খাতে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে শ্রম ও শ্রমিকের নায্যতা নিশ্চিত, কর্মপরিবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ দূষণ কমানো। এসময় পোশাকখাতে পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনাকারী উদ্যোক্তারা জানান, পরিবেশবান্ধব কারখানা পরিচালনা খরচ অনেক বেশি। তারপরও বেশিরভাগ উদ্যাক্তা আগ্রহী হলেও ক্রেতা-বায়াররা কর্মপরিবেশের মান উন্নয়নের কথা বললেও বাড়তি দাম দিতে চান না। একই সাথে সরকারের নীতি সহায়তাও সবুজ শিল্পায়ন বান্ধব নয় বলে জানান হয়েছে।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে- এ বিবেচনায় ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করেছে সরকার। এসব প্রকল্পে ১২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল। জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত অভিঘাত থেকে পরিবেশ সুরক্ষায় সরকারের আন্তরিকতা বোঝাতে এই তথ্য জানান তিনি।

সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বস্ত্র ও পোশাক খাতসহ সব ধরনের শিল্প খাতেরই সবুজায়ন চায় সরকার। সবচেয়ে বড় খাত হিসেবে বস্ত্র ও পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা কী ধরনের নীতিসহায়তা চান পথ-নকশাসহ সে বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। এর মাধ্যমে আগামী বাজেটে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই চাহিদা জানানো হবে।

একই সঙ্গে পোশাকখাতে রফতানি বাড়ার সঙ্গে এ খাতের কর্মপরিবেশ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। এগুলোর অবসান হওয়া উচিত। পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নে সবুজ কারখানা স্থাপনে গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের সবার আগে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

এদিকে, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের ১৫৭টি কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরির সার্টিফিকেটধারী। এর মধ্যে ৪৭টি প্লাটিনাম ও ৯৪টি গোল্ড সার্টিফিকেট পেয়েছে। প্রতি মাসে গ্রিন হিসেবে সার্টিফিকেট পাচ্ছে। তিনি বলেন, বিজিএমইএ অনেক আগে থেকেই সবুজ শিল্পায়ন নিয়ে কাজ করছে। আরও কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সিপিডির পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, এ খাতের জন্য দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে হবে। কোনো দুর্ঘটনা হলেই গার্মেন্টসের নাম আগে উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা প্রমাণ করে দেখিয়েছে দেশে বিশ্বমানের সবুজ কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব। শুধু সমালোচনা না করে ভালো কাজগুলো ফোকাস করাও জরুরি। তাহলেই আমরা এগিয়ে যাব। কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর প্রভাব গার্মেন্টস মালিকদের ওপর বেশি পড়েছে। বায়ারদের কাছে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নিয়েও রিকভারি হচ্ছে না। কাঁচামাল ও শিপিং কষ্ট বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু শিপিং কষ্ট নিয়ে কথা বলা হয় না। সেখানে অনেকটা মনোপলি ব্যবসা চলছে। আশা করি সেটাও দেখা উচিত। মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গ্রিন কারখানা বাংলাদেশে হয়েছে, তা কিন্তু উদ্যোক্তারা নিজ উদ্যোগে করেছে।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন