বাংলাদেশে গুম হওয়াদের তালিকার অনেকেই ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ নয়, জাতিসংঘের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছে গুমের তালিকা দিয়েছিল। গুমের তালিকার অনেকেই ভূমধ্যসাগরে মারা গেছেন।
গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি ওই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা চাই না কেউ গুম খুন হোক। তবে আমাদের এখানে গুমের ঘটনা খুবই কম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি’ আয়োজিত ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘বাংলাদেশ চীনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে’। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোমেন বলেন, ‘বলা হয়, বাংলাদেশ চীনের লেজুর হয়ে যাচ্ছে। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। চীনের লোন ট্র্যাপের কথা বলা হয়, লোন ট্র্যাপে পড়তে হলে অন্তত ৪০ ভাগ লোন থাকতে হয়। সাকুল্য আমাদের লোন আছে ১৫ ভাগ। সবচেয়ে বেশি লোন আমরা নিয়েছি বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং আইএমএফের কাছ থেকে। দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি লোন জাপানের কাছ থেকে নেওয়া। এখানে লোন ট্র্যাপের কোনো সুযোগ নেই।
দেশে মাঝে মধ্যে কিছু নিখোঁজের ঘটনা ঘটে সেগুলোর প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাঝে মাঝে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ এসব করে। পৃথিবীর সব দেশেই এমন হয়, কম-বেশি। আমাদের এখানে অন্য দেশের তুলনায় কম। যেহেতু আমরা পলিটিক্যালি-স্ট্রাটিজিক্যালি খুব ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের আশপাশের বড় বড় দেশ এবং আমাদের সমুদ্র অ্যাকসেসের জন্য অনেক বেশি উদ্বিগ্ন। সেজন্য এখন আমরা সবার চক্ষুশূল। আসল উদ্দেশ্য কিন্তু হিউম্যান রাইটস না, গুম-খুনও না। আসল উদ্দেশ্য এসব চাপ দিয়ে কিছু ফায়দা সংগ্রহ করা যায় কি না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি গুম হওয়া ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছিল উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তালিকাভুক্তদের মধ্যে অনেকেরই ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়েছে। বাংলাদেশের কোনও একটি প্রতিষ্ঠানের কারণেই তারা (জাতিসংঘের কমিটি) রিপোর্ট করেছে। তারা নিজেরা গবেষণা করেনি। তালিকা দিয়েছে তাদের কাউকেই আমরা চিনি না। দুই-একজনকে চেনা গেছে।
তাদের তথ্য নিতে পুলিশ পরিবারের কাছে দুই-একবার গেছে। পুলিশের ধারণা, দিনের বেলা তারা থাকবে না, তাই রাতের বেলা গেছে। তখন তারা অভিযোগ করেছে যে, তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ জানতে চায়, তাদের পরিবারের সদস্য কবে, কোথায়, কেন গেছেন, কিছু জানে কিনা। কারণ অনেকেই আবার ফেরত চলে আসে। দুই একদিন এরকম করার পর তারা অভিযোগ করলেন।
এ বিষয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের একটি মিটিংয়ে রাখার জন্য বলেছি, সেখানে সংবাদকর্মীরাও থাকবেন। ওনারা তখন বলবেন যে তাদের পরিবারের সদস্যরা কবে কোথায় কিভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিংবা ফেরত এসেছে কিনা।
‘কিছু কিছু দুর্ঘটনার’ খবর পাওয়া যায় না উল্লেখ করে উদাহরণ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেমন আমরা অনেক দিন ধরে জানি, হারিছ সাহেব (বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী) গুম হয়ে গিয়েছিলেন। এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স। এখন দেখি না, উনি দেশেই ছিলেন এবং দেশেই নাকি মারা গেছেন। তার মেয়ে বলেছে। আমরা এক সময় দেখলাম, একজন নেতা তিনি দেশে নেই, তারপর ইন্ডিয়ার হোটেল ইন্ডিয়ানরা তাকে ধরলো। ওই সব গুম-খুন বলা হয়। কতটুকু সত্য তা আমরা ঠিক জানি না। একটা লোক গুম হোক, একটা লোক খুন হোক আমরা চাই না।
নিরাপত্তাবাহিনী গুমের সঙ্গে জড়িত নয় :
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, নিরাপত্তাবাহিনী কোনো গুমের সঙ্গে জড়িত নয়। যারা গুম হচ্ছেন, তারা কিছুদিন পরই উদ্ধার হচ্ছেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
র্যাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু ভুল তথ্যের জন্য এমনটি হয়েছে। লবিস্ট নিয়োগের নামে কারা কীভাবে বিদেশে টাকা পাঠিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিগগিরই তাদের সামনে আনা হবে। বাংলাদেশে কেউ গুম হয় না। কেউ আত্মগোপন করে, পরে আবার ফিরে আসে।
পাহাড়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, পাহাড়ে কিছু সমস্যা আছে। সেনাবাহিনী কাজ করছে। সেখানে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র কাজ করে। শান্তি চুক্তি অনুযায়ী সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, গ্রন্থাগার তৈরি করতে পারে জ্ঞানমনস্ক আলোকিত মানুষ যা টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে অপরিহার্য। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক গণগ্রন্থাগার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন