বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা দাবি করেছেন, তাঁদের পাঁচ বছরে সফলতার পাশাপাশি কিছু ব্যর্থতাও আছে। তিনি বলেন, পাঁচ বছরের দায়িত্বে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। তবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো কোনো দলের আস্থা তারা অর্জন করতে পারেননি। তবে পাঁচ বছরের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে মোটেও বিব্রত নই। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ তা ভিত্তিহীন।
নির্বাচন ভবনে বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এসব কথা বলেন। নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের গতকালই ছিল শেষ দিন।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম উপস্থিত থাকলেও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উপস্থিত ছিলেন না। আরেক নির্বাচন কমিশনার শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। এর বাইরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জমানও উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, মাহবুব তালুকদার ইসি সচিবকে বলেছেন, তিনি এই সংবাদ সম্মেলনে থাকবেন না। সিইসির সংবাদ সম্মেলনের পরে নিজের দপ্তরের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মাহবুব তালুকদার।
সিইসি বলেন, আমরা ৬ হাজার ৬৯০টি নির্বাচন করেছি। রুটিনকাজের বাইরেও অনেক কাজ করেছি। আইন সংস্কারের বেশকিছু কাজ করেছি। আরপিও, বাংলায় রূপান্তরসহ অনেকগুলো বিধিমালা করেছি।
তিনি বলেন, ২৪ হাজার ৮৮১ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি, বিশেষ করে ইভিএমে। করোনার কারণে সীমানা পুনর্নিধারণ করতে পারিনি। স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন সম্পন্ন করেছি। ইভিএম বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল। অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে তা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। এনআইডি সহজীকরণ করা হয়েছে। ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল, কঠোর পরিশ্রম করে সে দায়িত্ব পালন করেছি।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক বেসামরিক আমলা কেএম নূরুল হুদাকে সিইসি; মাহবুব তালকুদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও সামরিক আমলা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।
নানা অভিযোগ আর অনুযোগ মাথায় নিয়ে গতকাল বিদায় নিয়েছে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে এদিন সকাল ১১টায় কমিশন ভবনের লেকভিউ চত্বরে গত পাঁচ বছরের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে সম্মেলন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সিইসি নুরুল হুদা, কমিশনার কবিতা খানম ও রফিকুল ইসলাম। কিন্তু এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না সিনিয়র কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন। শাহাদাত হোসেন করোনা আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন সিইসি নুরুল হুদা। যদিও বেলা একটার দিকে ইসি ভবনে নিজ কক্ষের সামনে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। মুক্তভাবে কথা বলতে পারবেন না বলেই সিইসি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক কমিশন সভায় আমাকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি। তাই আজকের এই সংবাদ সম্মেলনে আমাকে মুক্তভাবে কোনো কথা বলতে দেওয়া হতো না বা আমি মুক্তভাবে কথা বলতে পারতাম না।
মাহবুব তালুকদার সংবাদ সম্মেলনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইসি সচিবের কাছে কল করে বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগত কারণে আজ উপস্থিত থাকতে পারবেন না। যেহেতু মাহবুব তালুকদার নেই, সেহেতু তাকে নিয়ে আর কোন মন্তব্য করবো না। এছাড়া করোনা পজিটিভ থাকায় অপর নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন অনুপস্থিত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সাবেক আমলা কে এম নূরুল হুদাকে সিইসি করে নির্বাচন কমিশন অনুমোদন করেন। কমিশনে মাহবুব তালকুদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। পাঁচ বছর দায়িত্বে তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, সব সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন