ইভিএম খুব ভালো মেশিন। তবে কোনো মেশিনকেই শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না বলে উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। অপরদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, মেশিনের ভালো-খারাপ নিয়ে কিছু বলব না, ইভিএম নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আসেনি। কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে গতকাল মতবিনিময় করে কমিশন। মতবিনিময় সভা শেষে তারা সাংবাদিকদের কাছে এমন অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
ইভিএম প্রদর্শন শেষে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে, এর প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। এটা খুবই একটা ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটা ডিসপ্লে করা হবে এবং যে কেউ টেস্ট করতে পারবে। শিক্ষাবিদ ড. জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, ইভিএমে নিখুঁতভাবে ভোট দেয়া সম্ভব, কারচুপির সুযোগ নেই।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে তা রাজনৈতিক দল ও প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, আমরা কিন্তু কারো মতামতকে উপেক্ষা করিনি। বিরোধী দল থেকে যে মতামত এসেছে, আমরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেইনি। আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। এখনও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসেছি। যারা প্রযুক্তিবিদ তাদের সঙ্গে বসেছি। এই মেশিনের (ইভিএম) ব্যাপারে তাদের বক্তব্যের পর কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি, এই মেশিনের বিষয়ে আরো কয়েকটা মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টিকে ডাকা হবে।
তিনি বলেন, একজন টেকনিক্যাল ব্যক্তি পারবে মেশিন নিয়ে মূল্যায়ন করতে। আমরা সেই পারস্পেক্টিভ থেকে টেকনিক্যাল পারসনদের ডেকেছি। পলিটিক্যাল পার্টিদেরও আমরা অনুরোধ করব, তাদের যে টেকনিক্যাল টিম আছে কিংবা যদি থাকে, তাদের যাচাই করার জন্য।
সিইসি বলেন, ইভিএম নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন, মেন্যুপুলেশন করার সুযোগ নেই। আমার কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওই সব মানুষের ওপর, যারা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যারা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন তাদের ওপর। প্রযুক্তিবিদরা আশ্বস্ত হয়েছেন। আমরা আরো কয়েকটি বড় মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টি যেহেতু বাইরে মাঠে বলছেন, এটা মন্দ মেশিন ভালো মেশিন না। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাইব, আপনারা কী কী সমস্যা পাচ্ছেন। আমাদের লিখিতভাবে অবগত করুন। আমরা যেন সিস্টেমেটিক্যালি অ্যাড্রেস করার সুযোগ পাই। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করব, আমাদের হয়তো লিমিটেশন আছে কিন্তু চেষ্টার কোনো ত্রুটি থাকবে না। যদি সবার আস্থা অর্জন করতে পারি, মেশিনের ভালো-খারাপ নিয়ে কিছু বলব না, আপনাদের আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছেনি। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বোচনে ৩০০ আসনে করব, না ১০০ আসনে করব, না মোটেই করব না, নাকি এগুলো যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হবে, তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে, ব্যবহার করা হবে কী হবে না।
বৈঠক নিয়ে ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন মত রয়েছে। এ জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই মেশিনের কারিগরি নানা বিষয় আরো ভালোভাবে বুঝতেই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিশেষজ্ঞদের সাথে বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে ইসির তথ্যপ্রযুক্তি দল, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞসহ প্রায় ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমন্ত্রিতদের মধ্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক জাফর ইকবাল, বুয়েটের অধ্যাপক এম কায়কোবাদও বৈঠকে অংশ নেন।
এ ছাড়া মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান, মো. সালেহ উদ্দিন, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন