প্রতিবছর একুশে বইমেলা উপলক্ষ্যে কয়েক হাজার নতুন বই প্রকাশিত হয়। প্রচ্ছদশিল্পীরা মনের আল্পনা সাজিয়ে নতুন নতুন প্রচ্ছদ আঁকতে ব্যস্ত সময় পার করেন। কালি ও কাগজের ঘ্রাণে ভরে ওঠে ছাপাখানা ও বাঁধাইখানাগুলো। আর এই ফাঁকে কতিপয় মৌসুমি প্রকাশক কাম প্রতারক বাড়তি ইনকামের ধান্ধায় মেতে ওঠেন। অসাধু প্রকাশকদের খপ্পরে পড়ে প্রতিবছর অনেক নতুন লেখক প্রতারিত হন। তারা সহজ শর্তে বই প্রকাশের নামে নবীন লেখকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় নগদ অর্থ। একজন লেখকের বই প্রকাশে আনন্দের কমতি থাকে না। এর উপর যদি নবীন লেখক হয়Ñ বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস কাজ করে। বিশেষ করে প্রথম প্রকাশিত বই হলেÑ কত কপি বিক্রি হবে, বন্ধু-বান্ধব বা কাছের লোকজন কে কে কিনবে, বইমেলায় কেমন সাড়া মিলবে ইত্যাদি বিষয় নিয়ে নানা স্বপ্ন আঁকেন লেখক। কিন্তু সাধনার পাণ্ডুলিপিটি মৌসুমি প্রকাশকের হাতে তুলে দিয়ে একদিকে অর্থ অন্যদিকে পাণ্ডুলিপি হারিয়ে অঙ্কুরেই ঝরে যায় অনেক সম্ভাবনা। অথচ একটা পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে লেখককে কতটা কাঠ-খড়ি পোড়াতে হয়-তা একমাত্র লেখকই ভালো জানেন। কত রাত নির্ঘুম, কত কাজের ক্ষতি, কতদিন না খেয়ে থাকা, জীবনসঙ্গীর কত বকা, কত মানুষের তাচ্ছিল্য সহ্য করে একজন মানুষকে লেখক হতে হয়। মেধার প্রয়োগ ও কঠোর সাধনার পরই সৃষ্টি হয় সাহিত্য। আর সেই পরিশ্রমের পর যদি লেখক প্রতারিত হন- এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু থাকে না। কিন্তু বিধিবাম! চোরে না শুনে ধর্মের কাহিনী।
কোনো অফিস নেই, প্রকাশনা সম্পর্কে তেমন ধারণাও নেই, কিছুদিন কোনো একটা প্রকাশনা সংস্থায় চাকরি করে এবং বিনা বিনিয়োগে সখের বশে কেউ কেউ হয়ে যান প্রকাশক। তাদের টার্গেট নবীন লেখক। লেখকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে বই করা শুরু করেন। প্রকাশনা সংস্থাকে পরিচিত করতে দু-চারজন পরিচিত লেখকের হাতে-পায়ে ধরে দু-চারটি বই প্রকাশ করেন। সে বইগুলোর খরচ পোষাতে নবীন লেখকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। নবীন লেখকদের টাকা নিয়ে প্রবীন লেখকদের খুশি করতে গিয়ে প্রকাশক হয়ে যান প্রতারক। তিনশ’ কপি করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে হাতে ধরিয়ে দেন পঞ্চাশ কপি। বাকি বইগুলো পেতে বছর ধরে প্রকাশকের পেছন পেছন ঘুরেন লেখকরা। যদি প্রকাশনা নতুন হয়, বইমেলায় স্টলও বরাদ্দ মেলে না। সেক্ষেত্রে পুরোনো কোনো প্রকাশকের স্টলে পরিবেশক হিসেবে কয়েক কপি বই ফেলে রাখা হয় নামকাওয়াস্তে। এছাড়া নবীন কোনো লেখকের ভালোমানের লেখা হলে ধনাঢ্য-সৌখিন লেখকদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাণ্ডুলিপি বিক্রির অভিযোগও আছে কথিত অনেক প্রকাশকের বিরুদ্ধে। সব হারিয়ে যখন লেখক প্রতারিত হন প্রকাশকের তখন দেখা মেলে না। বন্ধ থাকে মোবাইল ফোনও। লেখক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর প্রতারিতদের পাশে সবর্শেষ কেউ দাঁড়ায় না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন