একটি মাত্র বইয়ের দোকান উন্মুক্ত করে বাংলা একাডেমী নরম মাটিতে যে স্বপ্নবীজ বপন করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা, সেই বই আজ, সেই দোকান আজ অগণিত প্রকাশকের নামে লেখকের নামে স্টল ও বই প্রকাশ হচ্ছে। বিষয়টা সত্যি শিহরণ জাগার মতো। চিত্তবাবু ছিলেন একজন স্বপ্নরাজ মানুষ। মনে পড়ে আনুমানিক ১৯৮০ দশকের মাঝামাঝি সময়, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল বাংলাবাজারে চিত্তবাবুর কাঠের ঘরের দু’তালার বিখ্যাত ‘পুঁথিঘর’ দেখার। কার সাথে যেন গিয়ে ছিলাম আজ আর মনে নেই। তার সাথে সেদিন মত বিনিময়ও হয়েছিল। পরবর্তীতে শুনে ছিলাম তিনি কোলকাতায় যান নিজের সম্পদ দেখতে। ফিরে আসেন নিজভূমে। শেষে প্রয়াত হন। ১৯৮৬ সাল থেকে একাডেমীর মেলায় আমার ছায়াপাত। তখন মেলার ছিল ছোট পরিসরের। বিক্রি আজকের মতো এত বেশি ছিল না। একাডেমীর পূর্বে ব্যাচেলার কোয়ার্টার ছিল। সেখানে খাবার দোকান ছিল কিছু। এখন তা নেই। আজ ঢোকা নিষেধ। সাইনবোর্ড তাই বলছে। দোয়েল চত্বর দিয়ে তখন ঢুকতাম। দু’পাশে বিভিন্ন খাবার ও অন্যান্য দোকান, ছিল একটা অপূর্ব জমজমাট ভাব। কয়বছর পর হুমায়ূন আহমদ, শামসুল রহমান, আল মাহমুদ এদের মাঝেমধ্যে মেলায় কখনো কখনো দেখা যেতো। তবে নিয়মিত কাঁধে ব্যাগ নিয়ে মেলায় আসতেন কবি নির্মলেন্দু গুণ ও মহাদেব সাহাসহ আরও অনেক প্রবীণ লেখক। গুণদা ও মহাদেবদার বইয়ের ভালো কাতটি ছিল তখন। তবে হৈ চৈ থাকলেও মেলায় কোনো সংঘাত চোখে পড়েনি। একটা আনন্দময় প্রাণ ছিল তখনকার মেলায়। এত নিরাপত্তাও ছিলেন না। যুক্তি সংগাত কারণে এখন বইমেলার নিরাপত্তা অনেক বেশি।
২।
১৯৯০ সাল থেকেই মেলা বাড়ানোর দাবি উঠতে থাকে লেখক-প্রকাশকদের কাছ থেকে। এ দাবি ছিল যোক্তিক। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয়। মেলা পাখা মেলে পূর্বে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত। আজ মেলায় ৫০০’র কাছাকাছি সটল। গুণাগুণের বেলায় আন্তর্জাতিক মানের। সেই সঙ্গে বইয়ের ছাপা-বাঁধাই কাগজের মানও আগের থেকে অনেক বেড়েছে। মহান একুশের বই মেলা বাংঙালির আজ প্রাণের মেলা। বৃহত্তর উৎসবও।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন