সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ফেনীতে রাবার উৎপাদনে বড় অর্থনীতির সম্ভাবনা

মো. ওমর ফারুক, ফেনী থেকে | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০৭ এএম

ফেনীতে রাবার উৎপাদনে বড় অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী উপজেলা পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের জয়ন্তীনগর-বীরচন্দ্র নগর গ্রামে বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি রাবার বাগান। সেখান থেকে এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে রাবার বিক্রি শুরু হয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. মোস্তফা ১২ বছর আগে ওইস্থানে রাবার গাছগুলো লাগিয়েছেন। গত তিন বছর ধরে তিনি রাবার সংগ্রহ করছেন। ইতোমধ্যে স্থানটি পরিচিতি লাভ করেছে ফেনীর অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবেও। রাবার বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে অসংখ্য দর্শনার্থী।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, সমতল ভ‚মি থেকে একটু উচুঁ আর পাহাড়ি এলাকা রাবার বাগানের জন্য উপযোগী স্থান।
বাগানের মালিক মোস্তফা বলেন, ২০০৯ সালে ২০ একর জমিতে ১০ হাজার রাবার চারা রোপণ করেছিলাম। বর্তমানে বাগানের ৪ হাজার গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে রাবার উৎপাদন করা হচ্ছে। সংগ্রহের জন্য গাছ উপযুক্ত হতে সময় লেগেছে দশ বছর। কয়েক বছর পর বাকি গাছগুলো থেকেও রাবার উৎপাদন শুরু হবে।’ বাগানের পরিচর্যাকারী চায়ং মারমা বলেন, আমরা ১২ জন শ্রমিক এই রাবার বাগানে কাজ করি। এখন চার হাজার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো গাছ থেকে রাবার সংগ্রহ শুরু হবে। শীতের চার মাস রাবার উৎপাদন বেশ ভালো হয়। বর্ষায় কম উৎপাদিত হয়। রাবার বাগানটি পর্যটন স্পট হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়।
রাবার উৎপাদন সম্পর্কে তিনি জানান, ভোরে রাবার গাছ থেকে কষ বিভিন্ন পাত্রে সংগ্রহ করা হয়। পরে শুকনো রাবার শিটে পরিণত করে রোলার মেশিনের সাহায্যে পানি বের করা হয়। এরপর ড্রিপিং শেডে শুকিয়ে পোড়ানো হয়।
একটি গাছ থেকে দৈনিক প্রায় ৩০০ থেকে ৪৫০ গ্রাম রাবার পাওয়া যাচ্ছে। বাজার দর অনুযায়ী প্রতি লিটার রাবার ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করা যায়। কিন্তু বর্তমানে তা কমে ১২০-১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি রাবার গাছ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে রাবার উৎপাদন করা যায়।
এ কাজে নিয়োজিত রনু রানী বড়ুয়া বলেন, ‘দুই বা তিন মাস পর পর রাবারগুলো বিক্রি হয়। প্রতি লটে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার রাবার বিক্রি হয়। তবে এখনও লাভ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না।
ভবিষ্যতে বাগানটিতে একটি শিশুপার্ক করার পরিকল্পনাও রয়েছে। দর্শনার্থী দুলাল তালুকদার বলেন, ‘ফেনীতে তুলনামূলক পর্যটন স্পট নেই বললেই চলে। তবে এ বাগানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। তাই আমরা সময় পেলেই ঘুরতে আসি। তবে বাগানে প্রবেশের শর্ত একটাই, কোনো ম্যাচ বা আগুন উৎপন্নকারী দ্রব্য নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবু ইউসুফ মিন্টু বলেন, ‘শুরুতে বাইরের লোকজন রাবার উৎপাদনের কাজ করত, এখন স্থানীয়রা করছে। এতে গ্রামের বেকার জনগোষ্ঠীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। রাবার ছাড়াও বাগানের মধ্যে মাছ চাষ, স্বল্প পরিসরে আম ও লিচু উৎপাদন করা হচ্ছে।’
রাবার বাগান পরিদর্শনে এসে এর সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ফেনীর সোলায়মান হাজারী ডালিম। তিনি বলেন, ‘সারিবদ্ধ গাছ, রাবার প্রক্রিয়াজাত করণের দৃশ্য, পাশের সীমান্তের দৃশ্য ও প্রাকৃতিক সজীবতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তবে যাতায়াতের একমাত্র সড়কটির অবস্থা খারাপ থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
‘সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া রাবার বাগানে যেসব দর্শনার্থী আসে তাদের নিরাপত্তায় পুলিশের বাড়তি নজরদারির প্রয়োজন।’
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, সাধারনত রাবার উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ বিবেচনায় পাহাড় বা উঁচু স্থান যেখান থেকে বৃষ্টির পানি সহজে নেমে যেতে পারে তা বেশি উপযোগী। সে হিসেবে ‘জয়ন্তীনগর গ্রামে গড়ে উঠা বাগান উচুঁ ছোট পাহাড়ি স্থান যা রাবার উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এমন আরও অনেক এলাকা রয়েছে সেখানেও রাবার বাগান গড়ে তোলা যেতে পারে। এটি এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ভ‚মিকা রাখতে পারে।’

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন