ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ, মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজন করেছে শতবর্ষ মিলনমেলার। এ মেলাকে ঘিরে আছে উচ্ছ্বাস, আছে অভিযোগও। গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য এই আয়োজন। প্রায় ১২ হাজার সদস্যের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত শতবর্ষের এই মিলনমেলায় উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য শিক্ষাবিদ গবেষক সহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রারসহ ২৫ টি দেশে অবস্থান করা অ্যালামনাইবৃন্দ।
ঢাবি অ্যালামনাইয়ের এই শতবর্ষের মিলনমেলা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূরণের সঙ্গে সঙ্গে মুজিব শতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুশি তারা। তবে এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উঠেছে নানা সমালোচনা। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও সময়জ্ঞান না থাকার অভিযোগ তোলেন একাধিক অ্যালামনাই। শতবর্ষের মিলনমেলাকে ঘিরে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রæপগুলো বিগত কয়েকদিন ছিল সরব। সম্ভাবনার পাশাপাশি সমালোচনাও দেখা গেছে অনুষ্ঠানপূর্ব আয়োজন নিয়ে। উপহার সামগ্রীর নি¤œ মান, বিভিন্ন সামগ্রীর অপ্রতুলতা ও ঠিক সময়ে টোকেন না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন অনেকেই।
অনুষ্ঠানপূর্ব অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে শফিকুল আলম রাসেল নামের একজন অ্যালামনাই গ্রæপে পোস্ট করেন, শতবর্ষের মিলনমেলা’ উপলক্ষে আজ আমার সিরিয়াল অনুযায়ী উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে একইসঙ্গে হতাশ ও লজ্জিত হয়েছি। দুপুর ৩টার পর বুথের সামনে গিয়ে দেখি, উপহার সামগ্রীর সংকটের কারণে তা ঠিকমতো বিতরণ করা হচ্ছে না। আমার মতো আরও অনেককেই অপেক্ষা করতে বলা হয়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেগুলো পেলেও এর মধ্যে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ছিল না।
আনোয়ার আজিম নামের আরেকজন অ্যালামনাই লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির এই অনুষ্ঠানের উপহার সামগ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। দুই দিনের পরিবর্তে অনুষ্ঠান একদিন করায় বাকি একদিনের উদ্বৃত্ত অর্থ থেকেও ভালো কিছু উপহার দেওয়া যেত। হতে পারত টি-শার্ট, ক্যাপ বা মগ, যা দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যেত। এ বিষয়ে অ্যালামনাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এছাড়াও দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান করা হয়েছে একদিন। অ্যালামনাইদের অভিযোগ, একদিন হিসেবে অনুষ্ঠানের আয়োজন আরও জাঁকঝমকপূর্ণ করা যেত।
অনুষ্ঠান চলাকালীন নানা অব্যবস্থাপনার কথা জানান অ্যালামনাইরা। সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে মেলায় অতিথিবৃন্দ ও অ্যালামনাইদের জন্য অনুষ্ঠানপ্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়। প্রত্যেকেই আসতে শুরু করেন এবং অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী তাদেরকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু এই নাস্তা নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। নাস্তার আইটেম ও মান নিয়ে অভিযোগ তোলেন অনেকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অ্যালামনাই বলেন, এত আয়োজনের কথা শুনে এসে সকালের খাবার দেখে হতাশ হতে হলো। এত নি¤œমানের খাবার আমরা আশা করিনি। এরকম একটা অনুষ্ঠানে পরোটা-ভাজির মতো খাবার মোটেও শোভনীয় নয়। খাবারের প্যাকেট খুলে যা বুঝতে পারলাম এটি বোধহয় ভোররাতে প্যাকেট করা হয়েছে। পরোটা এতই শক্ত ছিল যে টেনে ছেঁড়া যাচ্ছিলো না। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ প্যাকেট করে রাখার কারণে সবজি থেকে অস্বাভাবিক গন্ধ উঠে। হালুয়াটা ঝোল হয়ে গিয়েছে। আমার পাশের টেবিলে বসা এক ভাই বললো তার প্যাকেটের ডিমটি থেকে পানি পড়ছিলো। এত টাকা দিয়ে করা এত বড় একটি অনুষ্ঠানের সকালের নাস্তাই অনুষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করেছে।
মধ্যাহ্নভোজ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই। অনুষ্ঠানে খাবারের জন্য বসানো হয়েছে প্রায় ২০০ টি টেবিল। কিন্তু সে অনুযায়ী খাবার পরিবেশকের সংখ্যা ছিল অতি নগন্য। এ বিষয়ে একজন অ্যালামনাই বলেন, অনেক্ষণ অপরিষ্কার টেবিলে বসে থাকার পরও দেখি খাবারের কোনো খবর নেই। কোনো ওয়েটার বোধহয় নিজ নিজ টেবিলে কাজ করেনি। এরপর একজন এসে কোনোমতে খাবারটা দিয়ে সরে যায়। আবার তাকে ডাকাডাকি করে আনতে হয়। এত বড় একটা অনুষ্ঠানে এরকম অসুন্দর খাবারের স্মৃতি রাখতে নিশ্চয়ই এতজন অ্যালামনাই এখানে আসেননি।
অস্বাস্থ্যকর ও অসুন্দর পরিবেশ ছিল পুরো অনুষ্ঠানস্থলে। বিশেষ করে খাবার পরিবেশনের স্থানে পরিবেশ ছিল নাজুক। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে যেখানে খুশি খাবারের উচ্ছিষ্ট ও ময়লা ফেলে গেছেন। কিন্তু পরিষ্কার করার কেউ নেই। পাশাপাশি হাত পরিষ্কার করার জন্য স্থাপিত বেসিনগুলোতে হ্যান্ডওয়াশের অপ্রতুলতা ও পানি জমে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি ওই স্থানের আশপাশে চলাচলের স্থানে পানি জমে একাকার হয়ে রয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপিত বিভিন্ন ছবি তোলার প্লাটফর্ম ও আসবাব ভাঙা অবস্থায় দেখা যায়। যা দেখতে দৃষ্টিকটু ছিল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্বঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের আগে উদ্বোধনী আলোচনা অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শেষ করতে ১টা পার হয়ে যায়। তার পরবর্তী মূল আলোচনা অনুষ্ঠান বাংলাদেশের পথযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই ১২ টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে ১ টা ২০ মিনিটে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনুষ্ঠান শুরু করতে দেড়টা বেজে যায়। সূচি অনুযায়ী আলোচনাপর্বের পরেই দুপুর ১টা ২০ মিনিটে মধ্যাহ্নভোজ পর্ব শুরু হওয়ায় কথা। কিন্তু আলোচনা অনুষ্ঠান অনেক বিলম্বিত হওয়ায় অনুষ্ঠান চলাকালীন মধ্যাহ্নভোজ চালু হয়ে যায়। খাবারের পর্ব শুরু হলে অধিকাংশ মানুষই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে খাবার গ্রহণ করতে চলে যায়। ফলে পুরো অনুষ্ঠানস্থল একরকম জনশূন্য হয়ে পড়ে।
এছাড়াও অ্যালামনাইগণ জানান, তাদের কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশনের জন্য ১৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। সস্ত্রীক আসতে করতে হয় স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশনও। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে স্পন্সরও নেওয়া হয় অনেক। তাদের অভিযোগ অনুষ্ঠান প্রাঙ্গনজুড়ে স্পন্সরের লোগো ঝুলছে ঠিকই কিন্তু ব্যবস্থাপনার পরিস্থিতি একেবারেই বেহাল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন